আজকাল ওয়েবডেস্ক: হিমাচল প্রদেশকে বলা হয় ভারতের "ঘুমন্ত রাজ্য"। এই নামটি এসেছে এখানকার শান্ত ও নিরিবিলি জীবনধারা থেকে, যা এখানকার মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রতিফলিত হয়। এই রাজ্যটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নির্মল পাহাড়ি বাতাস এবং ধীরগতির গ্রামীণ জীবনের জন্য পরিচিত। ব্যস্ত শহরের জীবনযাত্রার বিপরীতে, এখানে জীবন অনেকটাই শান্ত ও আরামদায়ক।
এই নামকরণের পেছনের কারণ হল হিমাচল প্রদেশের মানুষ সাধারণত একটি সহজ রুটিন মেনে চলে। অধিকাংশ মানুষ সূর্যোদয়ের সঙ্গে জেগে ওঠে এবং সূর্যাস্তের পরই ঘুমাতে যায়। সন্ধ্যার পর রাস্তাগুলো নীরব হয়ে যায়, দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় এবং বাইরের পরিবেশ একেবারেই শান্ত থাকে। এই শান্ত ও দ্রুত ঘুমানোর অভ্যাসের জন্যই হিমাচলকে বলা হয় "ঘুমন্ত রাজ্য"।
আরও পড়ুন: নাসার প্রতি বিরক্ত? বড় সিদ্ধান্ত নিলেন এই মহাকাশচারী
হিমাচলের মানুষ প্রকৃতির কাছাকাছি জীবনযাপন করে। পাহাড়ি আবহাওয়া, রোদ্রজ্যোতি, আর শান্ত পরিবেশ মিলে এমন একটি দৈনন্দিন রুটিন তৈরি করেছে, যেখানে মানুষ সন্ধ্যার পর বিশ্রাম নেয় এবং রাতে বাইরে থাকার প্রবণতা কম। এখানকার জীবন নদী আর পাহাড়ি বাতাসের মতোই ধীরে ও শান্তভাবে চলে।
হিমাচলের গ্রামাঞ্চলে জীবন অত্যন্ত সরল ও প্রাকৃতিক। মানুষ সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে দিন শুরু করে, দিনের আলোতেই কাজ শেষ করে, আর সন্ধ্যার আগেই রাতের খাবার খেয়ে নেয়। সূর্যাস্তের পর পরিবারগুলো ঘরের ভেতর থাকে, এবং অধিকাংশ মানুষ রাত ৮টা বা ৯টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে। এই রকম প্রাত্যহিক রুটিন প্রায় সব শহর ও ছোট গ্রামেই দেখা যায়।
হিমাচলের অনেক গ্রাম এই "ঘুমন্ত সংস্কৃতি"র জীবন্ত উদাহরণ। যেমন চিতকুল, কালপা, তীরথান ও স্পীতি — এসব গ্রাম শান্ত, পরিচ্ছন্ন এবং প্রকৃতির মাঝে অবস্থিত। শহরের কোলাহল থেকে বিরতি নিতে বহু পর্যটক এই গ্রামগুলোতে আসেন ধীর, শান্ত গ্রামীণ পরিবেশ উপভোগ করার জন্য। অনেকেই মনে করেন “ঘুমন্ত রাজ্য” মানে উন্নয়নে পিছিয়ে থাকা, কিন্তু এটা সত্য নয়। এই উপাধি শুধুমাত্র এখানকার শান্ত জীবনযাপনকে বোঝায়, অলসতা বা অগ্রগতির অভাবকে নয়।

হিমাচল তার মানুষের দ্রুত ঘুমানোর অভ্যাসের জন্য পরিচিত। অনেক গ্রামে রাত ৮টা বা ৯টার মধ্যে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়া সাধারণ ব্যাপার, এবং এরপর রাস্তাঘাট একদম ফাঁকা ও নীরব হয়ে যায়। হিমাচলকে ভারতের "আপেল রাজ্য"ও বলা হয়। প্রতি বছর এখানে বিপুল পরিমাণে আপেল উৎপন্ন হয়, এবং শিমলা ও কিন্নর জেলার আপেল বাগানগুলো বিশেষভাবে বিখ্যাত।
এই রাজ্যটি পরিবেশবান্ধব। এটি ছিল ভারতের প্রথম "ধোঁয়ামুক্ত রাজ্য" এবং এখানে প্লাস্টিক ব্যবহার নিয়ে কঠোর নিয়ম রয়েছে পরিবেশ রক্ষার জন্য। ধরমশালা হল দালাই লামার বাসভবন। এই শহরটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশের জন্য পরিচিত এবং এটি ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ তিব্বতি সংস্কৃতি ও বৌদ্ধ ধর্মের কেন্দ্র। পর্যটকরা এখানকার শান্ত সৌন্দর্যকে ভালোবাসেন। মানালি থেকে স্পীতি পর্যন্ত, বহু মানুষ হিমাচলে আসেন পাহাড় ঘুরে দেখতে, আরাম পেতে এবং এখানকার ধীর, শান্ত জীবন উপভোগ করতে।
