আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ অব্যাহত। পুতিনের দেশকে বার বার যুদ্ধ থামানোর পরামর্শ দিয়েছে আমেরিকা। কিন্তু, প্রেসিডেন্টের ট্রাম্পের চেষ্টা বিফলে গিয়েছে। ফলে ক্রেমলিনকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে ওয়াশিংটন। এসবের মধ্যেই রাশিয়ার থেকে জ্বালানি তেল কিনছে ভারত। এতেই দিল্লির উপর অসন্তুষ্ট পাশ্চাত্য শক্তি। নয়াদিল্লির বাণিজ্য ও কূটনৈতিক কৌশলে আপত্তি তুলেছে তারা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন যে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিকে রাশিয়ার তেলের উপর নির্ভরতা কমাতেহবে। তা না পারলে আর্থিক জরিমানা আরোপের হুমকি দিয়েছেন তিনি। আমেরিকা এবং তার মিত্ররা রাশিয়ার তেল ও গ্যাস বিক্রি রোধ করার চেষ্টা করছে। ওয়াশিটং মনে করছে, তেল রপ্তানির ব্যবসা বন্ধ করা গলেই মস্কোর অর্থনীতি দুর্বল হবে, এতে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ থেকে সরে আসবেন পুতিনরা।
ট্রাম্পের হুঁশিয়ারিতে অবশ্য কর্ণপাত করেনি দিল্লি। রাশিয়া থেকে তেল কেনা জারি রেখেছে। অস্বস্তি বেড়েছে আমেরিকার। এই প্রেক্ষিতে আমেরিকা, রাশিয়ার তেল কেনার উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক এবং অতিরিক্ত জরিমানা ঘোষণা করেছে। এরপর, নয়াদিল্লি তার অবস্থান স্পষ্ট করে বলেছে যে- ভারত তার জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে জ্বালানি নীতি নির্ধারণ করবে এবং কোনও বহিরাগত চাপের মুখে পড়বে না।
প্রশ্ন হল যে, রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের তেল সম্পর্কে আমেরিকার আপত্তি কেন?
পাশ্চাত্যের নিষেধাজ্ঞার কারণে দাম কমে যাওয়ার পর থেকে ভারত রাশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম তেল গ্রাহক হয়ে উঠেছে। যা মস্কোকে গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি রাজস্ব বজায় রাখতে সাহায্য করেছে এবং নয়াদিল্লিও সস্তায় জ্বালানি পাচ্ছে।
ভারত রাশিয়া থেকে তেল না কিনলে কী হবে?
এটা লক্ষণীয় যে ভারত এবং রাশিয়ার মধ্যে শক্তিশালী বাণিজ্য এবং কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে। ২০২২ সালে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর, নয়াদিল্লি মস্কো থেকে তেল আমদানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেছে। এর ফলে ভারত এবং চীন রাশিয়ার তেলের বৃহত্তম ক্রেতা হয়ে উঠেছে।
ভারত যদি রাশিয়া থেকে তেল না কিনে, তাহলে এ দেশে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পাবে। যার ফলে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বৃদ্ধি পাবে। এর মোকাবিলা করার জন্য, বিদেশি দেশগুলির উপর নির্ভরতা কমাতে দেশটির তেল ও গ্যাসের অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান এবং উৎপাদনে বিনিয়োগ বৃদ্ধির উপর মনোযোগ দেওয়া উচিত।
অপরিশোধিত তেল
উল্লেখযোগ্যভাবে, রাশিয়া ভারতের জন্য সস্তা তেলের প্রধান উৎস, যা দেশের সামগ্রিক আমদানির প্রায় ৩৮-৪০ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে, ভারতের মোট তেল আমদানির প্রায় ৩৫-৩৯ শতাংশ রাশিয়া থেকে এসেছে। এই বছরের মে মাসে, নয়াদিল্লি রাশিয়া থেকে প্রতিদিন ১.৯৬ মিলিয়ন ব্যারেল তেল আমদানি রেকর্ড করেছে, যা দশ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
কয়লা
২০২৩ সালে, ভারত রাশিয়া থেকে মোট ১০.০৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন কয়লা আমদানি করেছে। এটি মোট জ্বালানি আমদানির ছয় শতাংশ। ভারতের জ্বালানি ও শিল্প খাতের জন্য কয়লা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বায়ু ও সৌরশক্তির মতো নবীকরণযোগ্য শক্তির পরেও কয়লা এখনও বেশ কয়েকটি দেশের জন্য শক্তির একটি প্রধান উৎস।
অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম
গত বিশ বছরে, ভারত রাশিয়া থেকে প্রায় ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সামরিক সরঞ্জাম অর্জন করেছে। এই ক্রয়ের মধ্যে রয়েছে এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ট্যাঙ্ক, যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন এবং অন্যান্য বিভিন্ন সামরিক সম্পদ।
সার
রাশিয়া ভারতকে রাসায়নিক সার (যেমন ইউরিয়া এবং অন্যান্য নাইট্রোজেন-ভিত্তিক সার) সরবরাহ করে, যা ভারতের কৃষি খাতের জন্য অপরিহার্য।
আরও পড়ুন- পুরীর নির্যাতিতার মৃত্যুর পরই ঘটনায় চাঞ্চল্যকর মোড়! পুলিশের ভোল বদল, হাতিয়ার মৃতার বাবার ভিডিও
