আজকাল ওয়েবডেস্ক: শেষরক্ষা করা গেল না। এইমস-এ মৃত্যুর কাছে হার মানল পুরীর নাবালিকা নির্যাতিতা।
নাবালিকার মৃত্যুর পর অবশ্য বিতর্ক নয়া মোড় নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করেছিল যে, তিনজন ব্যক্তি নাবালিকার গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এখন পুলিশ দাবি করেছে যে- অন্য কোনও ব্যক্তি এই কাজে জড়িত ছিল না। এক্ষেত্রে পুলিশ হাতিয়ার করেছে নির্যাতিতার বাবার প্রকাশ করা একটি ভিডিও, যেখানে দাবি করা হয়েছে যে- মানসিক যন্ত্রণার কারণে তাঁর মেয়ে নিজের জীবন শেষ করেছে।
ঘটনার পর শোরগোল হতেই পুলিশের দাবি ছিল, গত ১৯ জুলাই বন্ধুর বাড়িতে যাওয়ার সময় তিন দুষ্কৃতী বাইকে করে এসে ওই নাবালিকাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। তারপর নদীর ধারে নিয়ে গিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। জ্বলন্ত অবস্থাতেই কোনওক্রমে দুষ্কৃতীদের কবল থেকে পালিয়ে রাস্তায় ছুটে বেরিয়ে আসে মেয়েটি। দুষ্কৃতীরা তখনই এলাকা ছেড়ে চম্পট দেয়।
মেয়েটির শরীরে ৭৫ শতাংশ অগ্নিদগ্ধ ছিল। ১৯ তারিখ এই ভয়াবহ ঘটনার পর নাবালিকাটিকে দিল্লির এইমস-এ স্থানান্তর করা হয়। গভীর শোক প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী মোহন মাঝি জানিয়েছেন, সরকার এবং চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের সমস্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, তার জীবন বাঁচানো যায়নি।
মেয়েটির মৃত্যুর কয়েক মিনিট পরেই, ওড়িশা পুলিশ জানিয়েছে যে- আগুন লাগার ঘটনার তদন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। এখনও পর্যন্ত পরিচালিত তদন্ত অনুসারে, অন্য কোনও ব্যক্তি এই কাজের সঙ্গে জড়িত ছিল না বলে মনে হচ্ছে। তবে, কীভাবে মেয়েটিকে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল তা জানানো হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, "এই মর্মান্তিক মুহূর্তে এই বিষয়ে কোনও সংবেদনশীল মন্তব্য না করার জন্য আমরা সকলকে অনুরোধ করছি।"
এরপর একটি আবেগঘন ভিডিও প্রকাশ করা হয়। যেখানে মৃতার বাবা বলেন যে- তিনি অসহনীয় মানসিক আঘাতের সম্মুখীন হয়েছেন এবং বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি না করার জন্য জনসাধারণের কাছে আবেদন করেন।
ভিডিও-তে মৃতার বাবাকে বলতে শোনা যায়, "আমি আমার মেয়েকে হারিয়েছি। মানসিক চাপের কারণে সে তার জীবন শেষ করে দিয়েছে। সে যে আঘাতের সম্মুখীন হয়েছিল তা অসহনীয় ছিল। আমি শুধু বলতে চাই যে ওড়িশা সরকার আমার এবং আমার পরিবারের জন্য অনেক কিছু করেছে। আমি বিনীতভাবে সকলকে অনুরোধ করছি যে, দয়া করে এই দুঃখ নিয়ে রাজনীতি করবেন না। বরং তার আত্মার জন্য প্রার্থনা করুন। এখন আমি কেবল আমার মেয়ের জন্য শান্তি চাই।"
ওড়িশা জুড়ে ব্যাপক ক্ষোভ এবং বিক্ষোভের মধ্যে নির্যাতিতার বাবা তাঁর অপূরণীয় ব্যক্তিগত ক্ষতির মধ্যেও সংবেদনশীলতা এবং মর্যাদার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন।
১৯ জুলাই পুরী জেলার বালঙ্গা এলাকায় ১৫ বছর বয়সী মেয়েটিকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন যে- তিনজন পুরুষ এই অপরাধে জড়িত ছিল। স্থানীয়রা মেয়েটিকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং পরে ভুবনেশ্বরের এইমস-এ স্থানান্তরিত করে।
আগুন নেভাতে সাহায্যকারী এবং মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগকারী প্রত্যক্ষদর্শী দুঃখীশ্যম সেনাপতি সংবাদ মাধ্যমে বলেছিলেন, "মেয়েটি যখন আমার বাড়ির দিকে দৌড়ে আসছিল তখন তার শরীরে আগুন জ্বলছিল। তার হাত বাঁধা ছিল। সে গুরুতরভাবে পুড়ে গিয়েছিল। আমি, আমার স্ত্রী এবং মেয়ে আগুন নেভাই এবং তাকে নতুন পোশাক পরিয়ে দিয়েছিলাম। সে আমাকে বলেছিল যে দু'টি বাইকে তিনজন লোক তাকে জোর করে এখানে নিয়ে এসেছিল, কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল।"
পুলিশের সর্বশেষ বিবৃতি অবশ্য অন্যরকম। তাদের দাবি, অন্য কোনও ব্যক্তি এই কাজে জড়িত ছিল না। যা পুলিশের প্রাথমিক অনুসন্ধানের ঠিক বিপরীত। প্রাখমিক অনুসন্ধানে বলা হয়েছিল যে, বাইকে তিনজন লোক মেয়েটিকে পথভ্রষ্ট করেছে, জোর করে নদীর তীরে নিয়ে গিয়েছে এবং তারপর আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এমনকি মেয়েটির মাও এর আগে এফআইআরে অভিযোগ করেছিলেন যে তিনজন অজ্ঞাত ব্যক্তি তার মেয়েকে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
