আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহার নির্বাচনে আরজেডি-র ভরাডুবি হয়েছে। তারপরই দিনই রাজনীতি থেকে ইস্তফা দিয়ে পরিবারকেও বর্জনের ঘোষণা করেছিলেন লালু-কন্যা রোহিণী আচার্য। তাঁর অভিযোগ, তাঁকে এ সিদ্ধান্ত নিতে বলেন আরজেডি-র সাংসদ সঞ্জয় যাদব। সঞ্জয় তেজস্বী ঘনিষ্ঠ। একই সঙ্গে রোহিণীর নিশানায় ছিল আরও এক নাম- রামিজ নেমত খান। বিহারের রাজনীতিতে আপাতত আলোচনার কেন্দ্রে রামিজ। কে তিনি?

আরজেডি সূত্রে খবর, তেজস্বী যাদবের দীর্ঘদিনের বন্ধু রামিজ নেমত খান। বর্তমানে তিনি লালু-পুত্রের ‘কোর টিম’-এর সদস্য। ক্রিকেট মাঠে শুরু হওয়া বন্ধুত্ব গাঢ় হয়েছে রাজনীতির ময়দানে। তেজস্বীর প্রচার, সোশ্যাল মিডিয়া টিমের দায়িত্বে রয়েছেন এই রামিজ।

উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা রামিজের শ্বশুর প্রাক্তন সাংসদ রিজওয়ান জাহিরের পরিবারে রাজনৈতিকভাবে যুক্ত। রিজওয়ান জাহির শ্ৰাবস্তী (আগের বলরামপুর) লোকসভা কেন্দ্র থেকে দু'বার সাংসদ হয়েছেন, কখনও সমাজবাদী পার্টির, কখনও বহুজন সমাজ পার্টির টিকিটে। একবার লড়েছেন নির্দল হিসেবেও। একসময় ছিলেন উত্তরপ্রদেশের কনিষ্ঠতম বিধায়ক।

তুলসীপুর কেন্দ্র থেকে রামিজের স্ত্রী জেবা রিজওয়ানও দু'বার নির্বাচন লড়েছেন, , একবার কংগ্রেসের টিকিটে, একবার নির্দল হয়ে জেলবন্দি অবস্থায়, কিন্তু দু'বারই হেরেছেন।

বার বার বিতর্কে জড়িয়েছে রামিজ। ২০২১ সালে তুলসীপুর জেলা পরিষদ ভোট চলাকালীন কংগ্রেস নেতা দীবঙ্কর সিংহের উপর হামলার অভিযোগ ওঠে রামিজের বিরুদ্ধে। তারপর ২০২২ সালে রামিজ, তাঁর স্ত্রী, শ্বশুর রিজওয়ান জাহির-সহ আরও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয় তুলসীপুর নগরপঞ্চায়েতের প্রাক্তন সভাপতি ফিরোজ পাপ্পু খুনের ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার অভিযোগে। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা চলছে, বলরামপুরে নয়'টি, কৌশাম্বীতে দু'টি। একাধিক মামলায় জামিন পেয়েছেন, কিছু এখনও বিচারাধীন।

২০২৩ সালে আরও একটি গুরুতর অভিযোগ ওঠে, প্রতাপগড়ের ঠিকাদার শাকিল খানের হত্যা। কুশীনগরের রেললাইনের ধারে উদ্ধার হয় দেহ। সেই মামলাতেও রামিজকে অভিযুক্ত করেন নিহতের স্ত্রী।

ওই বছরেই উত্তরপ্রদেশ সরকার রামিজের নামে কেনা প্রায় ৪.৭৫ কোটি টাকার জমি বাজেয়াপ্ত করে। জুলাই ২০২৪-এ 'গ্যাংস্টার অ্যাক্টে'-এ গ্রেফতার হন ফের। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সেখানেও পান জামিন।

এরপর রামিজ ও তাঁর স্ত্রী সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন করেন। সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, তাঁদের গ্রেফতার বা নতুন মামলা শুরু করার আগে স্থানীয় আদালতের অনুমতি বাধ্যতামূলক। তারপর থেকেই একে একে বহু মামলায় স্বস্তি পেয়েছেন দম্পতি। নতুন কোনও মামলাও হয়নি।

ব্যক্তিগত জীবন
১৯৮৬ সালের নভেম্বর মাসে জন্ম রামিজের। বাবা নেমাতুল্লাহ খান জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার অধ্যাপক। দিল্লি পাবলিক স্কুল, মতিউর রোড থেকে স্কুলজীবন, পরে জামিয়া থেকে বিএ ও এমবিএ। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটার, দিল্লি ও ঝাড়খণ্ডের বয়সভিত্তিক দলে খেলেছেন। ২০০৮-০৯ সালে ছিলেন ঝাড়খণ্ড আন্ডার-২২ দলের অধিনায়ক। তখনই রামিজ ঘনিষ্ঠ হন তেজস্বীর।

২০১৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেন আরজেডি-তে। তারপর থেকেই তেজস্বীর ঘনিষ্ঠ সঙ্গী, রাজনৈতিক কৌশল, প্রচার ও সোশ্যাল মিডিয়া- সব ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে।