আজকাল ওয়েবডেস্ক: বারাণসির এক যুবক স্ত্রীর পরকীয়া এবং দাম্পত্যকলহের কারণে আত্মহত্যা করেছেন। মৃত যুবকের নাম রাহুল মিশ্র। নিজের ঘরের ঝুলন্ত অবস্থায় রাহুলের দেহ উদ্ধার হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর শেষ ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়েছে। সাত মিনিটের ওই ভিডিও ক্লিপটিতে রাহুল দাবি করেছেন, তাঁর স্ত্রী তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করছেন। যার ফলে তিনি নিজেকে শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ভিডিওতে রাহুল আরও দাবি করেছেন যে, তাঁর স্ত্রী সন্ধ্যা তাঁকে ছেলের সঙ্গে দেখা করতে দিতেন না। দৈনিক ভাস্করের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, দম্পতির রেয়াংশ নামের চার বছর বয়সী একটি ছেলে ছিল।
ভিডিও বার্তায় রাহুল জানিয়েছেন, তাঁর স্ত্রী অন্য যখন পুরুষের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছিলেন তা তাঁর ভাল লাগেনি। তিনি দাবি করেন যে, সন্ধ্যা শুভম সিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন এবং এর ফলেই তাঁদের মধ্যে দাম্পত্যকলহ শুরু হয়। পরে সন্ধ্যা তাঁর ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়িতে চলে যান। তিনি আরও বলেন যে, সন্ধ্যা তাঁর বিরুদ্ধে যৌতুকের জন্য হয়রানির অভিযোগ দায়ের করেছেন। রাহুল জানান, এর মাঝে তিনি ছেলের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন এবং স্ত্রীর সঙ্গে সব ঝামেলা মিটিয়ে ফেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে তা করতে দেওয়া হয়নি। এই ঘটনায় হতাশ হয়ে তিনি আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন।
জানা গিয়েছে, বনকট গ্রামের বাসিন্দা রাহুল একজন স্থানীয় ব্যবসায়ীর গাড়ির চালক হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর নিয়োগকর্তার মেয়েকে কাশী বিদ্যাপীঠের গঙ্গাপুর ক্যাম্পাসে নিয়ে যাওয়ার সময় সন্ধ্যা নামের মেয়েটির সঙ্গে আলাপ হয়। শীঘ্রই রাহুলের সঙ্গে সন্ধ্যার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। চার বছর আগে রাহুলের পরিবার অন্য কোথাও তাঁর বিয়ের ব্যবস্থা করেছিল।
দৈনিক ভাস্করের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই খবর পেয়ে সন্ধ্যা নাকি নিজের জীবন শেষ করার জন্য হাতের শিরা কেটে ফেলেন এবং ঘুমের ওষুধ খান। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে রাহুল ও সন্ধ্যার বিয়ে হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শুভমের সঙ্গে সন্ধ্যার আলাপ না হওয়া পর্যন্ত এই দম্পতির দাম্পত্য জীবন মোটামুটি ঠিকই ছিল।
দৈনিক ভাস্করের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সন্ধ্যার পণের অভিযোগের ভিত্তিতে রাহুলকে তিন মাসের জন্য জেলে পাঠানো হয়েছিল। পরে তিনি ৩০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করেন। মৃত্যুর চার দিন আগে শুভম ও তাঁর সঙ্গীরা করৌটা বাজারে রাহুলকে মারধর করেছিলেন বলে জানা গিয়েছে। রাহুলের মা এ বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগও দায়ের করেন।
রাহুলের মা রানি দেবী জানিয়েছেন, রাহুল আর্থিক ঋণের বোঝায় জর্জরিত ছিলেন। যার মধ্যে স্থানীয় দোকানদারদের পাওনা এবং গাড়ির ঋণের কিস্তিও ছিল। তাঁর অভিযোগ, সন্ধ্যা তিনটি থানায় রাহুলের বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। যা তাঁর মানসিক চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল।
রাহুলের মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ সন্ধ্যা ও তার মায়ের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে। এফআইআর-এ শুভমের বিরুদ্ধেও আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয়েছে। স্টেশন হাউস অফিসার রাজবাহাদুর মৌর্য দৈনিক ভাস্করকে জানিয়েছেন যে, সন্ধ্যা ও তাঁর মাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফরেনসিক দল ঘটনাস্থল থেকে প্রমাণ সংগ্রহ করেছে। তদন্ত চলছে।
