আজকাল ওয়েবডেস্ক: লোকসভায় আগামী ৮ ডিসেম্বর ‘বন্দে মাতরম’-এর ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠিত করতে চলেছে। এই আলোচনায় জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে পরিচিত এই ঐতিহাসিক গানের নানা গুরুত্বপূর্ণ অথচ কম-পরিচিত দিক আলোকপাত করা হবে বলে সংসদীয় সূত্রে জানা গেছে।
সোমবার দুপুর ১২টায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই বিশেষ আলোচনার সূচনা করবেন। আলোচনার শেষ পর্যায়ে বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর। লোকসভায় এই বিতর্কে অংশগ্রহণের জন্য বিজেপি-নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারকে মোট তিন ঘণ্টা সময় বরাদ্দ করা হয়েছে। তবে পুরো সংসদীয় আলোচনার জন্য মোট ১০ ঘণ্টা সময় নির্ধারিত, কারণ এই আলোচনা পরবর্তী দিন অর্থাৎ ৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভাতেও অনুষ্ঠিত হবে।
রাজ্যসভায় এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার সূচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এই দুই কক্ষের আলোচনাই ‘বন্দে মাতরম’-এর ঐতিহ্য, ইতিহাস ও জাতীয় জীবনে তার গুরুত্ব উদ্যাপনের উদ্দেশ্যে বিশেষভাবে আয়োজন করা হয়েছে।
লোকসভায় এই আলোচনায় কংগ্রেস দলের পক্ষ থেকেও একাধিক নেতা বক্তব্য রাখবেন। কংগ্রেসের মোট আটজন নেতা এই আলোচনায় অংশ নেবেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন লোকসভার ডেপুটি বিরোধী দলনেতা গৌরব গগৈ, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রা, দীপেন্দ্র হুডা, বিমোল আকাশজাম, প্রণীতি শিন্ডে, প্রশান্ত পদোলে, চামালা রেড্ডি এবং জ্যোৎস্না মহান্ত।
উল্লেখযোগ্যভাবে, সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হয়েছে ১ ডিসেম্বর এবং চলবে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই অধিবেশনেই ‘বন্দে মাতরম’-এর ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
চলতি বছরের ৭ নভেম্বর ভারতের জাতীয় সংগীত ‘বন্দে মাতরম’-এর ১৫০তম বার্ষিকী পালন করা হয়েছে। ‘বন্দে মাতরম’-এর অর্থ—“মা, তোমায় প্রণাম”। এই অমর গানটি রচনা করেছিলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। প্রথমবার এই গানটি প্রকাশিত হয়েছিল ৭ নভেম্বর ১৮৭৫ সালে, বঙ্কিমচন্দ্রের সম্পাদিত সাহিত্যপত্রিকা ‘বঙ্গদর্শন’-এ।
পরবর্তী সময়ে, ১৮৮২ সালে প্রকাশিত তাঁর অমর উপন্যাস ‘আনন্দমঠ’-এ ‘বন্দে মাতরম’ গানটি অন্তর্ভুক্ত করেন বঙ্কিমচন্দ্র। পরে এই গানটি সুরারোপ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কালক্রমে ‘বন্দে মাতরম’ ভারতের সভ্যতা, রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক চেতনায় অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে ওঠে।
এর আগে, ৭ নভেম্বর জাতীয় রাজধানীতে ‘বন্দে মাতরম’-এর ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বছরব্যাপী উদ্যাপনের সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “‘বন্দে মাতরম’ শুধু একটি শব্দ নয়—এটি একটি মন্ত্র, একটি শক্তি, একটি স্বপ্ন এবং একটি দৃঢ় সংকল্প।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই গান ‘মা ভারতীর প্রতি ভক্তি ও আধ্যাত্মিক সমর্পণ’-এর প্রতীক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বন্দে মাতরম’ আমাদের দেশের ইতিহাসের সঙ্গে মানুষকে যুক্ত করে, বর্তমানকে আত্মবিশ্বাসে ভরিয়ে তোলে এবং ভবিষ্যৎকে এমন সাহসে অনুপ্রাণিত করে, যেখানে কোনও সংকল্পই অসম্ভব নয়, কোনও লক্ষ্যই অধরাই থাকে না।
