আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তরাখণ্ড রাজ্যের উত্তরকাশী জেলায় ভয়াবহ হড়পা বান। এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বৃহস্পতিবার উদ্ধার তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, এদিন ৬৫ জন আটকে পড়া মানুষকে হেলিকপ্টারে করে মাতলি এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে একাধিক পর্যটক ও তীর্থযাত্রী রয়েছেন। মঙ্গলবারের আকস্মিক বন্যার পর থেকে এই পর্যটক ও তীর্থযাত্রীরা বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়েছিলেন।

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, উদ্ধার হওয়া পর্যটক ও তীর্থযাত্রীদের তাঁদের নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছে দিতে বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি উদ্ধারকাজ পর্যবেক্ষণে বর্তমানে উত্তরকাশীতেই রয়েছেন। পাশাপাশি তিনি বাসে করে রওনা দেওয়া কিছু উদ্ধারপ্রাপ্তের সঙ্গে কথা বলেন। উদ্ধারকৃত তীর্থযাত্রীরা বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গঙ্গোত্রী যাত্রার পথে এসে আচমকা এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে আটকে পড়েন। তাঁরা সেনাবাহিনী, রাজ্য সরকার এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের তাঁদের প্রতি সহানুভূতির জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।

জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (NDRF), রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (SDRF), সেনাবাহিনী, ইন্দো-তিব্বত সীমান্ত পুলিশ (ITBP), পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থা একযোগে উদ্ধার ও ত্রাণকাজে নিযুক্ত রয়েছে। এসডিআরএফ (SDRF) এর আইজি অরুণ মোহন জোশী জানিয়েছেন, 'আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার এখন উন্নত যন্ত্রপাতি ঘটনাস্থলে হেলিকপ্টারে পৌঁছে দেওয়া। বুধবার যে টিম উন্নত যন্ত্রপাতি নিয়ে যাচ্ছিল, তারা রাস্তা বন্ধ থাকায় আটকে পড়ে।'

ঘটনার প্রেক্ষিতে তিনি আরও বলেন, '৫০ থেকে ৬০ ফুট উঁচু ধ্বংসস্তূপের স্তর রয়েছে। নিখোঁজরা তার নিচে চাপা পড়ে থাকতে পারেন।' ভূমিধসের কারণে ধারালি যাওয়ার মূল রাস্তা ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মঙ্গলবারের হড়পা বানে ওই এলাকায় বহু বাড়ি ও গাড়ি ভেসে যায়, এবং বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়েন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

উন্নত যন্ত্রপাতি ব্যবহারে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে নিখোঁজদের সন্ধান চালানো সহজ হবে। হরসিল সেনা শিবির থেকে ১১ জন সেনা সদস্য নিখোঁজ রয়েছেন বলেও জানা গিয়েছে। প্রসঙ্গত বিভিন্ন স্থানে আটকে থাকা তীর্থযাত্রীদের উদ্ধার করার কাজ জারি রয়েছে, যাঁদের সংখ্যা ৩০০ থেকে ৪০০ হতে পারে বলে আশঙ্কা।

স্থানীয় বাসিন্দা, পর্যটক ছাড়াও নিখোঁজদের মধ্যে নির্মাণাধীন হোটেলগুলির শ্রমিকরাও থাকতে পারেন বলে অনুমান করা হয়েছে। কারণ হড়পা বানের সময় সেসব স্থানে কাজ চলছিল। নিখোঁজদের খোঁজে বর্তমানে গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং রাডার ও স্নিফার কুকুর ব্যবহার করার পরিকল্পনাও রয়েছে প্রশাসনের।

গঙ্গোত্রী যাওয়ার পথে ধারালি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টপওভার। এখানে অনেক হোটেল ও হোমস্টে রয়েছে। এর অনেকগুলিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা ভেসে গিয়েছে। উদ্ধারকর্মীরা বুধবার দু’টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন, তবে নিখোঁজের প্রকৃত সংখ্যা এখনও স্পষ্ট নয়। স্থানীয়রা দাবি করছেন, শতাধিক মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকতে পারেন।

মঙ্গলবার, প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছিল, হড়পা বানে তলিয়ে মৃত্যু হয়েছে চারজনের। বুধবারেই আরও বাড়ে মৃত্যুর সংখ্যা। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ১০০ জনের বেশি বাসিন্দা নিখোঁজ রয়েছেন। এর মধ্যে সেনা বাহিনীর ১১ জন জওয়ান নিখোঁজ রয়েছেন। এ পর্যন্ত ১৩০ জনকে উদ্ধার করা গেছে। ভারী বৃষ্টি উপেক্ষা করে জোরকদমে চলছে উদ্ধারকাজ। 

উত্তরকাশীর ধারালি গ্রামে মঙ্গলবার ভোরে প্রবল মেঘভাঙা বৃষ্টি এবং হড়পা বান বিশাল ভূমিধসের ঘটনাটি ঘটেছে। জানা গিয়েছে, এই ঘটনার জেরে প্রাথমিকভাবে ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিখোঁজ ছিল। স্থানীয় সূত্রে খবর, এই ভয়াবহ দুর্যোগে গঙ্গোত্রী ধামের সঙ্গে সমস্ত রাস্তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ঘটনাস্থলের খুব কাছেই অবস্থিত গঙ্গার শীতকালীন আসন মুখবা ও পবিত্র গঙ্গোত্রী ধাম। পর্যটকদের তোলা ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, পাহাড় থেকে নেমে আসা জলপ্রবাহ ধেয়ে আসছে নিচের দিকে, একের পর এক বাড়ি ও গাছপালা ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। হরশিল অঞ্চলের খীর গাধ নালার উপচে পড়া জলের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুনঃ নিমন্ত্রণের এই পরিণতি? দীর্ঘ আট ঘন্টা গাড়ি চালিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানে পৌঁছন যুবতী, এরপর যা হল জানলে ভিরমি খাবেন ...

গোটা হিমালয় অঞ্চলে এই মুহূর্তে প্রবল বর্ষণের ফলে রীতিমত বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। উল্লেখ্য, উত্তরাখণ্ডের প্রতিবেশী রাজ্য হিমাচল প্রদেশেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মারাত্মক রূপ নিয়েছে। শুধুমাত্র সোমবার দিনেই প্রবল বর্ষণের কারণে রাজ্যের ৩১০টি রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে, যার মধ্যে একটি জাতীয় সড়কও আছে। মান্ডি জেলায় একটি গাড়ি খাদে পড়ে ৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। সিমলার পান্থাঘাটি এলাকায় রবিবার রাতে ধস নামায় মেহলি-শোগি বাইপাস সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে এবং কিছু দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।