আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীতে আচমকা পরপর মেঘভাঙা বৃষ্টি। তার জেরে ভয়াবহ হড়পা বান। নিমেষে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে গোটা গ্রাম। বাড়ি, হোটেল, হোমস্টে, রেঁস্তোরা, দোকানপাট, আর কিছুরই নেই চিহ্ন। এই উত্তরকাশীতে ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরেই মৃত্যুমিছিল বাড়ছে। বুধবার আরও বাড়ল মৃতের সংখ্যা। 

গতকাল, মঙ্গলবার, প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছিল, হড়পা বানে তলিয়ে মৃত্যু হয়েছে চারজনের। আজ মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল পাঁচ‌। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ১০০ জনের বেশি বাসিন্দা নিখোঁজ রয়েছেন। এর মধ্যে সেনা বাহিনীর ১১ জন জওয়ান নিখোঁজ রয়েছেন। এ পর্যন্ত ১৩০ জনকে উদ্ধার করা গেছে। ভারী বৃষ্টি উপেক্ষা করে জোরকদমে চলছে উদ্ধারকাজ। 

এদিকে মৌসম ভবন জানিয়েছে, আজ, বুধবার উত্তরাখণ্ডের সব জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। জারি রয়েছে লাল সতর্কতা। চলতি সপ্তাহ জুড়েই উত্তরাখণ্ডে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। জারি রয়েছে হলুদ সর্তকতা। 

সেনা বাহিনী, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী একযোগে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে।‌ এমনকী উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশ থেকেও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর টিম উত্তরকাশীতে এসে উদ্ধারকাজে সহায়তা করছে। রাজ্য সরকার হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছে। এই পরিস্থিতিতে 01374222126, 01374222722 এবং 9456556431, এই তিনটি হেল্পলাইন নম্বর চালু রয়েছে। 

আরও পড়ুন: 'বাবার মতো পাত্র চাই', খুঁজে না পাওয়ায় বাবার সঙ্গেই সাত পাক ঘুরলেন মেয়ে! ছিঃ ছিক্কার গ্রামবাসীদের

উত্তরকাশীর ধারালি গ্রামে মঙ্গলবার ভোরে প্রবল মেঘভাঙা বৃষ্টি এবং হড়পা বান বিশাল ভূমিধসের ঘটনাটি ঘটেছে। জানা গিয়েছে, এই ঘটনার জেরে প্রাথমিকভাবে 
৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিখোঁজ ছিল। স্থানীয় সূত্রে খবর, এই ভয়াবহ দুর্যোগে গঙ্গোত্রী ধামের সঙ্গে সমস্ত রাস্তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ঘটনাস্থলের খুব কাছেই অবস্থিত গঙ্গার শীতকালীন আসন মুখবা ও পবিত্র গঙ্গোত্রী ধাম। পর্যটকদের তোলা ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, পাহাড় থেকে নেমে আসা জলপ্রবাহ ধেয়ে আসছে নিচের দিকে, একের পর এক বাড়ি ও গাছপালা ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। হরশিল অঞ্চলের খীর গাধ নালার উপচে পড়া জলের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়েছে।

দুর্যোগ মোকাবিলায় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, এসডিআরএফ, এনডিআরএফ, সেনাবাহিনী, স্থানীয় পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থাগুলি একসঙ্গে কাজ করছে। প্রবল বৃষ্টির কারণে উদ্ধারকার্যে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসনের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে, নিখোঁজদের খোঁজে ও দুর্গতদের সাহায্যে কোনও কমতি থাকছে না। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্টে লেখেন, ‘উত্তরকাশীর ধারালি অঞ্চলে মেঘভাঙা বৃষ্টির ফলে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। উদ্ধার ও ত্রাণকার্য দ্রুত গতিতে চলছে। ঈশ্বরের কাছে সকলের নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা করছি’। এই ঘটনার ফলে গঙ্গোত্রি ধাম যা চারধাম তীর্থের অন্যতম, বর্তমানে সম্পূর্ণভাবে বাকি ভারতের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন।

গোটা হিমালয় অঞ্চলে এই মুহূর্তে প্রবল বর্ষণের ফলে রীতিমত বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। উল্লেখ্য, উত্তরাখণ্ডের প্রতিবেশী রাজ্য হিমাচল প্রদেশেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মারাত্মক রূপ নিয়েছে। শুধুমাত্র সোমবার দিনেই প্রবল বর্ষণের কারণে রাজ্যের ৩১০টি রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে, যার মধ্যে একটি জাতীয় সড়কও আছে। মান্ডি জেলায় একটি গাড়ি খাদে পড়ে ৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। সিমলার পান্থাঘাটি এলাকায় রবিবার রাতে ধস নামায় মেহলি-শোগি বাইপাস সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে এবং কিছু দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।