আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিয়ের পরেই আরও পণের দাবি। স্ত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা বন্ধুর। চরম নির্যাতনের পরেও শান্তি হয়নি স্বামীর। নগ্ন অবস্থায় স্ত্রীকে বাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। সদ্য বিবাহিতা তরুণীর মুখে নির্যাতনের বর্ণনা শুনে শিউরে উঠল পুলিশ।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের পিলিভিট এলাকায়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২৫ বছর বয়সি এক তরুণীকে নগ্ন অবস্থায় বাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের বিরুদ্ধে। কারণ? স্বামীর এক বন্ধু তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিলেন। তবে যৌন নির্যাতনের হাত থেকে কোনও মতে নিজেকে রক্ষা করেন তরুণী। এরপরেই তাঁকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে।
এরপরই থানায় পৌঁছে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন তরুণী। তাঁর দাবি, বিয়ের পর থেকেই চরম হেনস্থার শিকার হয়েছেন তিনি। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হত তাঁকে। বিশেষত আরও পণের দাবিতেই নির্যাতনের শিকার তিনি। তাঁর অভিযোগ, বিয়ের পর নগদ আরও পাঁচ লক্ষ টাকা, সোনার হার, চার চাকা গাড়ি পণ হিসেবে দাবি করেছিল শ্বশুরবাড়ি।
পুলিশকে তরুণী জানিয়েছেন, গত ৫ ফেব্রুয়ারি জোর করে তাঁর ঘরে ঢুকে পড়েন স্বামীর এক বন্ধু। জোরজবরদস্তি সঙ্গমে লিপ্ত হতে চেয়েছিলেন তিনি। এরপর জামাকাপড় ছিঁড়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। তরুণীর চিৎকারেই ভয়ে পালিয়ে যান ওই যুবক। ঘটনাটি ঘিরে স্বামীর কাছে অভিযোগ জানাতে আরও হেনস্থার শিকার হন তিনি। বন্ধুর দোষ ঢেকে, স্ত্রীকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। তাও আবার নগ্ন অবস্থায় তরুণীকে বাড়ি থেকে বের করে দেন।
৮ নভেম্বর থানায় অভিযোগ জানান তরুণী। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছেন তাঁর স্বামী, শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা, এবং স্বামীর সেই বন্ধুও। পুলিশকে তরুণী আরও জানিয়েছেন, গত ২০ মার্চ বাবার বাড়িতে তাঁকে রেখে এসেছিলেন স্বামী। পাশাপাশি এও জানিয়েছিলেন, পণ হিসেবে নগদ টাকা দিতে পারলে, তবেই যেন শ্বশুরবাড়িতে পা রাখেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তরুণীর স্বামী বরেলির এক সরকারি কর্মী। গতবছর নভেম্বর মাসেই বিয়ে হয়েছিল তাঁদের। বিয়ের পর থেকেই নির্যাতনের শিকার হন তরুণী।
প্রসঙ্গত, গত আগস্ট মাসে পণের দাবিতে আরও এক ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল। পণের জন্য সদ্য বিবাহিত তরুণীর গলায় ফাঁস দিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠেছিল শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের বিরুদ্ধে। ঘটনাস্থল বিহার। এবারেও পণ হিসেবে সোনার গয়নার দাবি করেছিল শ্বশুরবাড়ি। কিন্তু খানিকটা সময় চেয়েছিলেন তরুণীর বাবা। অধৈর্য হয়ে তরুণীকে খুন করার অভিযোগ উঠেছিল তাদের বিরুদ্ধে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছিল বিহারের খাগাড়িয়া জেলার বরখান্দি তোলা গ্রামে। জানা গেছে, তরুণীর সঙ্গে বিভীষণ যাদবের বিয়ে হয়েছিল এক বছর আগে। তরুণীর বাবা জাদো যাদব জানিয়েছেন, বিয়ের পর থেকেই স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা পণের জন্য হেনস্থা করতেন তরুণীকে। আরও সোনার গয়নার দাবি করতেন তাঁরা। এদিকে তরুণীর বাবা আশ্বাস দেন, আর দুই মাস পরেই তিনি সব দাবি পূরণ করবেন।
কাঁদতে কাঁদতেই জাদো যাদব জানান, 'আমি শুধুমাত্র দুই মাস সময় চেয়েছিলাম!' আরেক আত্মীয় জানান, সোনার গয়না না পেলে তরুণীকে খুনের হুমকিও দিয়েছিল তারা। তাঁদের আরও অভিযোগ, আগে বিভীষণ চাষবাসের কাজ করতেন। কিন্তু গত মাস ধরেই বিহারেই গাঁজা ও বিষমদ বিক্রি করতেন। তরুণীর ভাইয়ের অভিযোগ, প্রথমে তাঁকে বেধড়ক মারধর করেন শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা। এরপর তাঁর দেহটি ঝুলিয়ে দেন। তরুণীর শরীরেও আঘাতের চিহ্ন ছিল।
তরুণীর বাবা জানিয়েছিলেন, 'আমার যা সার্মথ্য ছিল, সবকিছুই দিয়েছিলাম। তাও সোনার হার আর গাড়ির দাবি করছিল মেয়ের শ্বশুরবাড়ি। সদ্য ছেলের বিয়ে দিয়েছি। ছেলের বিয়ের সময় থেকেই সোনার হারের দাবিদাওয়া শুরু হয়। দুই মাস সময় চেয়েছিলাম। তার মধ্যেই মেয়েকে খুন করে দিল।' তরুণীর দেহ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছিল পুলিশ। অভিযুক্তরা সকলেই পলাতক।
