আজকাল ওয়েবডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর হামলার ঘটনা নিয়ে “রহস্যজনক নীরবতা” বজায় রাখার অভিযোগ তুলেছে। একই সঙ্গে টিএমসি দাবি করেছে, প্রতিবেশী দেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের প্রশ্নে তারা ধারাবাহিকভাবে মুখ খুলে এসেছে এবং ভবিষ্যতেও তা করবে।
কলকাতায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাজ্যের শিল্প এবং মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী ডা. শশী পাঁজা বলেন, বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর চলতি সময়ে যে হিংসার খবর সামনে আসছে, তা নিয়ে রাজ্য বিজেপি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একটি ভুয়ো বয়ান তৈরির চেষ্টা করছে যেন টিএমসি এই নির্যাতনের নিন্দা করেনি। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “বাংলাদেশে দীপু চন্দ্র দাসকে হত্যার ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা জানাই এবং সে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাইবোনদের পাশে আছি।”
পাঁজার অভিযোগ, এই ঘটনার পরেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় সরকার কার্যত নীরব। তাঁর কথায়, “সবচেয়ে বড় প্রশ্ন একটাই- এই রক্তপাতের মাঝেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী কেন চুপ? যে বিজেপি সরকার প্রতিদিন হিন্দুত্বকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে, তারা কীভাবে দীপু চন্দ্র দাসকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার মতো বর্বর ঘটনার পরেও নীরব থাকতে পারে?” তিনি আরও বলেন, “কলকাতায় হৈচৈ করে কী লাভ? বিদেশমন্ত্রক এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এই পরিকল্পিত নীরবতাই আসল সত্য প্রকাশ করে দেয় বিজেপির কাছে হিন্দুত্ব কোনও বিশ্বাস নয়, শুধুই ভোট ধরার হাতিয়ার।”
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ নতুন নয়। সাম্প্রতিক মাসগুলিতে সেখানে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় হামলা, মন্দির ভাঙচুর এবং সংখ্যালঘুদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের একাধিক অভিযোগ সামনে এসেছে। যদিও ঢাকার তরফে বারবার বলা হয়েছে যে, এই ঘটনাগুলি বিচ্ছিন্ন এবং রাষ্ট্রীয় মদতপুষ্ট নয়, তবু রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে এই ধরনের হিংসা ভারতের রাজনৈতিক মহলেও বিশেষ করে সীমান্তবর্তী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে সংবেদনশীল ইস্যু হয়ে উঠেছে। মানবাধিকার সংগঠন এবং ভারতের বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, সামগ্রিক অশান্তির সুযোগ নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হিন্দু মহল্লা ও উপাসনালয়গুলিকে নিশানা করা হচ্ছে।
শশী পাঁজা দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি কিংবা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কেউই প্রকাশ্যে বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য রাখেননি। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “প্রতিবেশী দেশে এই ধরনের ঘটনার পর বিদেশমন্ত্রক ঠিক কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা স্পষ্ট করা দরকার।” তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্র সরকার ‘নির্বাচিত ক্ষোভ’ বা selective outrage দেখাচ্ছে।
দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির প্রসঙ্গ টেনে পাঁজা বলেন, ওড়িশার সম্ভলপুর জেলায় পশ্চিমবঙ্গের এক পরিযায়ী শ্রমিককে হত্যার ঘটনা শুধু একটি বিচ্ছিন্ন অপরাধ নয়, বরং বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলা ভাষাভাষী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে যে শত্রুতা তৈরি হচ্ছে, তারই অংশ। তাঁর দাবি, মুর্শিদাবাদ জেলার সুতি ব্লকের তিন যুবককে ওড়িশায় আক্রমণ করা হয় এই অভিযোগে যে, তাঁরা নাকি বাংলাদেশি, কারণ তাঁরা বাংলায় কথা বলছিলেন। এই হামলায় একজনের মৃত্যু হয়েছে এবং আরও দু’জন গুরুতর জখম অবস্থায় ওড়িশার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। “আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই,” বলেন টিএমসি মন্ত্রী।
পাঁজার অভিযোগ, বিভিন্ন রাজ্যে বাংলা ভাষাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে হেনস্থা ও হিংসার শিকার করা হচ্ছে, অথচ বিজেপি নেতৃত্ব এ নিয়েও নীরব। তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদির সাম্প্রতিক রানাঘাটের সভায় ব্যবহৃত বিজেপির স্লোগান ‘বাঁচতে চাই, বিজেপি তাই’ নিয়েও কটাক্ষ করেন। তাঁর প্রশ্ন, “এই স্লোগানের মানে কি বাঁচতে চাইলে বিজেপিতেই যোগ দিতে হবে?”
এদিকে, সম্ভলপুরের ঘটনার ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক দিকটি খাটো করে দেখাতে চেয়েছে ওড়িশা পুলিশ। উত্তরাঞ্চলের আইজিপি হিমাংশু কুমার লাল জানান, ৩০ বছর বয়সি পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিক জুয়েল শেখ একটি বিড়ি নিয়ে বচসার জেরে খুন হয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। এই ঘটনায় ছ’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং পুলিশ দাবি করেছে, নিহত ব্যক্তি বাঙালি না বাংলাদেশি এই পরিচয়ের সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের কোনও যোগ নেই।
তবু রাজনৈতিক তরজার মাঝেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং দেশের ভেতরে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তা এই দুই বিষয়ই নতুন করে জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে।
