আজকাল ওয়েবডেস্ক: একের পর এক হৃদয়বিদারক ঘটনা৷ খবর অনুযায়ী, মহারাষ্ট্র ও উত্তরপ্রদেশে সম্প্রতি ঘটে গিয়েছে দুটি ভয়াবহ ঘটনা। একদিকে চিতাবাঘের আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছে মাত্র তিন বছর বয়সী এক শিশু। অন্য দিকে একইভাবে নিহত হন ৩৫ বছর বয়সী এক যুবতী। পরপর এই ঘটনা ঘিরে কেবল দুটি পরিবার নয়, বরং গোটা সমাজ আতঙ্কে। এই ঘটনা দেশজুড়ে গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম ঘটনাটি ঘটে মহারাষ্ট্রের নাসিক জেলায়। খবর অনুযায়ী জানা গিয়েছে, শিশুর নাম আয়ুষ৷ মাত্র তিন বছর বয়সী এই শিশু তার বাড়ির পাশে খেলছিল। শুক্রবার রাত আনুমানিক সাড়ে আটটার দিকে হঠাৎ করেই একটি চিতাবাঘ এসে তাকে আক্রমণ করে। এহেন পরিস্থিতিতে পরিবার প্রথমে কিছু বুঝতে পারেনি। আয়ুষ তার বাবার ডাকের জবাব না দেওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন তারা। এরপর শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। কিছু সময় পর, বাড়ির অদূরে একটি খামারের পাশে রক্তমাখা অবস্থায় শিশুর নিথর দেহ পাওয়া যায়। চিতাবাঘের আক্রমণে শরীরের বিভিন্ন অংশ ক্ষতবিক্ষত ছিল।
এই মর্মান্তিক ঘটনাটি তখনই ঘটে যখন রাখিবন্ধন উৎসব৷ সাধারণত এই উৎসবের দিন বোনেরা তাঁদের ভাইদের হাতে রাখি বেঁধে ভালোবাসা ও সুরক্ষার প্রতীক হিসাবে তা উদযাপন করেন। কিন্তু আয়ুষের পরিবারের কাছে এই রাখি উৎসব হয়ে ওঠে জীবনের দুর্বিষহ এক স্মৃতি। ভাইয়ের মৃত্যুতে শোকাহত বোন শেষ পর্যন্ত ভাইয়ের মৃতদেহের হাতেই রাখি বাঁধে। এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখে গোটা এলাকা স্তব্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এর আগেও আশেপাশে চিতাবাঘ দেখা গিয়েছিল, কিন্তু বনবিভাগ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অপরদিকে, উত্তরপ্রদেশের বিজনোর আফজলগড় এলাকার ভিখ্কাওয়ালা গ্রামে ঘটে আরেকটি ভয়াবহ ঘটনা। ৩৫ বছর বয়সী পুনম নামে এক যুবতী খেতে কাজ করার সময় আচমকা একটি চিতাবাঘ তাঁর ওপর হামলা চালায়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, চিতাবাঘটি পুনমকে হত্যার পর তার কাঁধের কিছু অংশ ছিঁড়ে খেয়ে ফেলে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বন বিভাগের কর্মকর্তারা। আমানগড় টাইগার রিজার্ভের ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসার অঙ্কিতা কিশোর জানান, নিহত যুবতীর দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে পুরো ঘটনার তদন্ত চলছে।
আরও পড়ুনঃ সাংসারিক কলহ মূল কারণ? তিন সন্তান নিয়ে মায়ের চরম পদক্ষেপ, উত্তর প্রদেশে হাড়হিম কাণ্ড ...
এই দুটি ঘটনার পর থেকেই সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে চরম আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বনবিভাগ এলাকাগুলিতে ইতিমধ্যেই কড়া নজরদারি বাড়িয়েছে। পাশাপাশি চিতাবাঘ ধরতে ফাঁদ পাতা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। তবে এই ধরনের প্রাণঘাতী ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে এখনই জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মানুষ ও বন্যপ্রাণীর মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাত এখন একটি জ্বলন্ত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বনাঞ্চলের আশেপাশে বসবাসরত সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত চিতাবাঘ, বাঘ, হাতির মতো বন্যপ্রাণীর হামলার মুখে পড়ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বনভূমি সংকুচিত হওয়া, খাদ্যের অভাব এবং মানুষের অনুপ্রবেশের কারণেই বন্যপ্রাণীরা লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। এ অবস্থায় প্রয়োজন যথাযথ পরিকল্পনা, বন সংরক্ষণ এবং বন্যপ্রাণী ও মানুষের মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব নিশ্চিত করার।
স্থানীয় বাসিন্দারা প্রশাসনের প্রতি দাবি তুলেছেন, নিয়মিত টহল, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা, ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়ন না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। এ ঘটনায় দুইটি পরিবার শোকাহত, আর সমাজ পেল এক অমূল্য বার্তা-বন্যপ্রাণীদের সঙ্গে সহাবস্থান করতে হলে চাই সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর পদক্ষেপ।
