আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রতিটি জনপদের নিজস্ব এক জাদুকরী রীতি থাকে। ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমে, কর্ণাটক ও কেরালার উপকূলবর্তী অঞ্চলে রয়েছে এমনই এক প্রাচীন লোকাচার—ভূতা কোলা।
ভূতা কোলা মানে ‘আত্মার নৃত্য’। হাজার বছরের পুরনো এই আচার আজও প্রতি বছর নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত গ্রামে গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়। এক সময় যাদের সমাজের প্রান্তে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল—পাম্বাডা, নালিকে, পারাভা সম্প্রদায়ের মানুষরাই হন এই আচার্যের প্রধান পুরোহিত।
এই আচার শুরু হয় রাতে, গাঢ় অন্ধকারে, একটি ‘দৈবাস্তানে’—দেবতার নিবাসে। ঢাকের বাজনা, সানাইয়ের সুর আর ‘পাদ্দানা’ নামের কাহিনিগান গেয়ে হাজির হন ভূতা কোলা শিল্পী। মুখে রঙ, কোমরে নারকেল পাতার গাঁথা বেষ্টনী, মাথায় বিশাল পাগড়ি—একজন মানুষ তখন রূপ নেন দেবতার।
এবং ঠিক সেই মুহূর্তে ঘটে জাদু। ধীরে ধীরে তিনি কাঁপতে শুরু করেন, তীব্র হয়ে ওঠে বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ, আর একসময় তিনি বলেন—“আমি এসেছি!”
তারপর থেকেই তিনি আর কেবল একজন শিল্পী নন—তিনি ‘আত্মা অধিষ্ঠিত’ দেবতা। মানুষ তখন এসে তার পায়ে পড়ে প্রণাম করে, প্রশ্ন করে নিজেদের পারিবারিক বিবাদ বা গ্রাম্য দ্বন্দ্বের বিচার নিয়ে।
এই পরব এক আশ্চর্য একতা তৈরি করে—যেখানে ভক্তরা হন সকল বর্ণের, কিন্তু দেবতা হয়ে ওঠেন সেই সমাজের প্রান্তিক মানুষজন। কোনো ব্রাহ্মণ এখানে বিচার করেন না, বরং তাদের ভূমিকা এসেছে পরে, সংযোজন হয়েছে বেদীয় আচার।
এভাবে যুগে যুগে রূপান্তরিত হয়ে উঠেছে ভূতা কোলা। কখনো এতে এসেছে সামান্য বাণিজ্যিক ছোঁয়া, কখনো যুক্ত হয়েছে নতুন রীতি। কিন্তু মূল কথাটি রয়ে গেছে অক্ষত—ভূতা কোলা হল মানুষের, আত্মার, মাটির, এবং আত্ম-মর্যাদার উৎসব।
তুলুনাড়ুর (Tulunadu) মানুষদের কাছে এটি কেবল একটি উৎসব নয়—এটি তাদের ইতিহাস, তাদের পূর্বপুরুষ, আর তাদের একান্ত পরিচয়ের ধারক।
আর এই রীতিতেই মিশে আছে এমন এক শক্তি, যা বলে—দেবতা কখনো জন্মে না, তিনি সৃষ্টি হন—প্রান্তিক মানুষের শরীরেই।
