আজকাল ওয়েবডেস্ক: চেন্নাইয়ের কাছে এক পরিযায়ী শ্রমিককে নৃশংসভাবে মারধর করা হল। অভিযোগে চার কিশোরকে গ্রেপ্তার করল তামিলনাড়ু পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে ট্রেনের ভিতরে৷ সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। জানা গিয়েছে, চেন্নাই থেকে তিরুত্তানিগামী একটি লোকাল ট্রেনের ভেতরে ওই চার জন মিলে এক ব্যক্তিকে ক্রমাগত হেনস্থা ও মারধর করছে। শুধু তাই নয়, হামলার পর রক্তাক্ত দেহের পাশে দাঁড়িয়ে এক অভিযুক্তকে ‘বিজয় চিহ্ন’ দেখাতেও দেখা গিয়েছে। এমনকী সেই মারধরের ভিডিওর সঙ্গে তামিল গান জুড়ে দিয়ে তারা ইনস্টাগ্রামে ‘রিল’ বানিয়ে পোস্ট করে। এই ঘটনা ঘিরে হুলুস্থুল পড়ে গিয়েছে৷ 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, আক্রান্ত ব্যক্তি মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা। বর্তমানে তিনি তিরুভল্লুর সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অভিযুক্ত চারজনেরই বয়স ১৭ বছর। পুলিশ তাদের আটক করলে আদালত তিনজনকে সংশোধনাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। তবে পড়াশোনার কথা বিবেচনা করে একজনকে জামিন দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যে রাজনৈতিক শোরগোল শুরু হয়েছে। শিবগঙ্গার সাংসদ কার্তি চিদম্বরম পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি অবিলম্বে রাজ্যজুড়ে তল্লাশি অভিযান শুরু করার দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে, বিরোধী দল এআইএডিএমকে-র অভিযোগ, শাসক দল ডিএমকে রাজ্যে মাদকের রমরমা রুখতে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের দাবি, এই অপরাধীদের কিশোর নয়, বরং প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে বিচার করা উচিত।

পাল্টা জবাবে ডিএমকে নেতা টিকেএস ইলানগোভান জানিয়েছেন, এটি একটি ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’। তাঁর দাবি, পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ করেছে,  রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকরা সম্পূর্ণ নিরাপদেই আছেন। বর্তমানে পুরো ঘটনার তদন্ত জারি রয়েছে৷

অন্যদিকে, বর্ণবিদ্বেষের শিকার এক ছাত্র।অকালে প্রাণ গেল ত্রিপুরার এক মেধাবী ছাত্রের। দেরাদুনের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ পড়তেন অ্যাঞ্জেল চাকমা (২৪)। অভিযোগ, গত ৯ ডিসেম্বর একদল দুষ্কৃতী তাঁকে এবং তাঁর ভাইকে ‘চিনা’ বলে কটাক্ষ করে। প্রতিবাদ করায় অ্যাঞ্জেলকে ছুরি ও ভারী বস্তু দিয়ে নৃশংসভাবে আক্রমণ করা হয়। টানা ১৭ দিন হাসপাতালে লড়াই করার পর গত শুক্রবার তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ছাত্রের বাবা তরুণ চাকমা। তিনি বর্তমানে মণিপুরে কর্মরত এক বিএসএফ জওয়ান। তাঁর অভিযোগ, ঘটনার দিন অ্যাঞ্জেল ও তাঁর ভাই মাইকেল বাজারে গিয়েছিলেন। সেখানে দুই বাইকে চড়ে আসা ৬ জন দুষ্কৃতী মাইকেলকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এবং ‘চায়নিজ মোমো’ বলে গালিগালাজ করতে থাকে। অ্যাঞ্জেল নিজেকে ভারতীয় বলে পরিচয় দিলেও রেহাই পাননি। ঘাড় ও পিঠে গুরুতর চোট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাঁকে। শেষ পর্যন্ত ঘাড়ের হাড় ভেঙে যাওয়ায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।

পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা নিয়েও সরব হয়েছেন শোকার্ত বাবা। তাঁর দাবি, ঘটনার পর অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ শুরুতে মামলা নিতে চায়নি। পরে ছাত্র সংগঠন ও উচ্চপদস্থ কর্তাদের চাপে এফআইআর নেওয়া হয়। তবে দেরাদুনের এসএসপি অজয় সিং জানিয়েছেন, ১০ ডিসেম্বর অভিযোগ পাওয়ামাত্রই তদন্ত শুরু হয়েছিল। ইতিমধ্যেই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে এক অভিযুক্ত নেপালে পালিয়ে গিয়েছে বলে পুলিশের অনুমান।

মেধাবী ছাত্র অ্যাঞ্জেলের মৃত্যুতে রীতিমত শোকের ছায়া নেমেছে ত্রিপুরার মাছমারা গ্রামে। সবেমাত্র ভালো একটি সংস্থায় চাকরি পেয়েছিলেন তিনি। নিজের গ্রামেই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। ভেঙে পড়া বাবার একটাই দাবি- “আমি ছেলেকে হারিয়েছি, এবার যেন বিচার পাই। দোষীদের কঠোর শাস্তি হোক।”