আজকাল ওয়েবডেস্ক: "বৈবাহিক সম্পর্ককে বহু ক্ষেত্রেই নারীদের উপর দমন-পীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে", বুধবার এমনই মন্তব্য করলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত। পাশাপাশি, ভিন্ দেশের বিবাহবিচ্ছেদের ডিক্রিকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং পরোক্ষভাবে তা কার্যকর করার মতো যে সমস্যাগুলি ভারতের আদালতগুলিতে বারংবার উঠে আসে, সে বিষয়টির উপরেও তিনি আলোকপাত করেন।
‘ইংল্যান্ড ও ভারতে পারিবারিক আইনে উদীয়মান ধারা এবং প্রতিবন্ধকতা’ শীর্ষক এক আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিচারপতি কান্ত বলেন, "আমার মতে, আজকের দিনে বহু দেশকেই এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। কারণ বিশ্ব যত বেশি সংযুক্ত হচ্ছে, স্বামী-স্ত্রীর ভিন্ন ভিন্ন দেশে বসবাস করার ঘটনাও বাড়ছে। ফলস্বরূপ তৈরি হচ্ছে আন্তর্দেশীয় দাম্পত্য বিবাদ।"
বিচারপতি কান্তের কথায়, বিয়ে এমনিতেই দুই সঙ্গীর কাছে বেশ কঠিন হতে পারে। কিন্তু ইতিহাস দেখলেই বোঝা যায়, মহাদেশ, সংস্কৃতি এবং যুগ নির্বিশেষে এই সম্পর্ককে প্রায়শই নারীদের দমনের একটি যন্ত্র হিসাবে অপব্যবহার করা হয়েছে।
তিনি আরও যোগ করেন, “তবে এটাও ঠিক যে এখন বহু দেশই সমসাময়িক আইন এবং সামাজিক সংস্কারের মাধ্যমে ধীরে ধীরে বিবাহকে অসাম্যের থেকে মর্যাদা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং সাম্যের দিকে নিয়ে আসছে। সাংবিধানিক মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে একটি পবিত্র অংশীদারিত্বে রূপান্তরিত করছে।” শীর্ষ আদালতের বিচারপতি আরও জানান যে, ভারতে বিচারব্যবস্থা এবং আইনসভা নারীদের অধিকার রক্ষার জন্য আইনি কাঠামো তৈরিতে একাধিক পদক্ষেপ করেছে।
আন্তর্দেশীয় দাম্পত্য বিবাদ প্রসঙ্গে বিচারপতি কান্ত জানিয়েছেন, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বিদেশের আদালতের দাম্পত্য সংক্রান্ত রায়কে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশিকা তৈরি করেছে। তাঁর কথায়, "এটাও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, যদি অন্যদেশে এই ধরনের রায় কোনও অসঙ্গতি থাকে বা যদি সেই রায় ন্যায়বিচার বা এ দেশের মূল আইনগুলির পরিপন্থী হয়, তবে ভারতে সেই রায়কে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না।"
আরও পড়ুন: ক্লাস ফাঁকি কেন? প্রশ্ন করতেই সাংবাদিককে চপ্পলপেটা শিক্ষিকার, ঘটনা ঘিরে তুমুল শোরগোল
বিচারপতি আরও বলেন, "যখন এই ধরনের আন্তর্দেশীয় দাম্পত্য বিবাদে শিশুরা জড়িত থাকে, তখন পরিস্থিতি আরও অনেক বেশি জটিল হয়ে ওঠে। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের আদালতগুলির পারস্পরিক সম্মান ও সহযোগিতার নীতি (কমিটি অফ কোর্টস) বজায় রাখা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। একইসঙ্গে, শিশুর কল্যাণ এবং মঙ্গল রক্ষা করার প্রাথমিক কর্তব্যে অবিচল থাকাও জরুরি।” তাঁর মতে, শিশুদের সুরক্ষা এবং তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করা একটি সর্বজনীন স্বীকৃত নীতি এবং এই বিষয়ে ভারত ও ইংল্যান্ড, দুই দেশের দৃষ্টিভঙ্গিই বহুলাংশে এক।
