আজকাল ওয়েবডেস্ক: দীর্ঘ বন্দিদশায় ছিলেন। উপরন্তু বারবার জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার হতাশায় চরম পদক্ষেপ ছয় নর্তকীর। মহারাষ্ট্রের কোলাপুরে কাত্যায়ণী এলাকায় একটি মহিলা সংশোধনাগারের ভিতরে একসঙ্গে ছয় মহিলা নর্তকী আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন বলে খবর। শুক্রবার সকালে জেলের ভেতরেই তাঁরা নিজেদের কব্জি ব্লেড বা ধারালো কিছু দিয়ে কেটে ফেলেন বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় ছয় জনকেই স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার পর থেকেই সংশোধনাগারের নিরাপত্তা ও পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

 

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আহত ছয় মহিলাকেই তড়িঘড়ি কোলাপুরের সরকারি ছত্রপতি প্রমীলা রাজে (সিপিআর) হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে তাঁদের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর। তবে একযোগে ছয়জনেরই আত্মহত্যার চেষ্টার মতো গুরুতর ঘটনায় ইতিমধ্যে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কোলাপুর জেলা প্রশাসন।

 

কোলাপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বি. ধীরজ কুমার এই খবর নিশ্চিত করে বলেন, "সংশোধনাগারে ছয় মহিলা নর্তকী নিজেদের কব্জি কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তাঁদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার আসল কারণ জানতে আমরা তদন্ত শুরু করেছি।"

 

পুলিশের প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় দু'মাস আগে এই ছয় মহিলাকে আটক করা হয়েছিল। জানা গিয়েছে একটি রিসর্টে মধুচক্র এবং অশ্লীল নৃত্য পরিবেশন করা হচ্ছে, এমন অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। সেই অভিযান থেকেই তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

 

স্থানীয় আদালত তাঁদের জামিন না হওয়া পর্যন্ত সংশোধনাগারে থাকার নির্দেশ দিয়েছিল। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মহিলারা গত দু'মাসে বেশ কয়েক বার জামিনের জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু বারবারই তাঁদের আবেদন খারিজ হয়ে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্তকারী দলের এক কর্তা জানিয়েছেন, "এই মহিলারা টানা দু'মাস ধরে সংশোধনাগারে বন্দি জীবন কাটাচ্ছিলেন। তাঁদের মনে প্রবল হতাশা তৈরি হচ্ছিল। মনে করা হচ্ছে, বারংবার জামিনের আর্জি খারিজ হয়ে যাওয়ায় তৈরি হওয়া হতাশা এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যৎই তাঁদের এমন চরম পথ বেছে নিতে বাধ্য করেছে।"

আরও পড়ুন: শ্বশুরবাড়ি নয় জ্যান্ত নরক! কিশোরীকে জোর করে বিয়ে দিলেন দাদু, এরপর চলল লাগাতার ধর্ষণ, শিউরে ওঠা ঘটনা এই রাজ্যে

 

এই ঘটনা ঘিরে ইতিমধ্যেই চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। কীভাবে জেলের ভিতরে একযোগে ছয় জন বন্দি এমন একটি ধারালো বস্তু জোগাড় করলেন, তা নিয়েও সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের ভূমিকায় প্রশ্ন উঠেছে। বন্দিদের কাউন্সেলিং বা মানসিক সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো কি সেখানে রয়েছে? বন্দিদশার মানসিক চাপ কমানোর ব্যবস্থা কী ছিল, সেই সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

 

পুলিশ জানিয়েছে, তারা শুধুমাত্র ঘটনার কারণই নয়, সংশোধনাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনও গাফিলতি ছিল কি না, তাও খতিয়ে দেখবে। বন্দিদের বয়ান রেকর্ড করে এবং সংশোধনাগার কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ চিত্র জানার চেষ্টা চলছে। তবে আপাতভাবে মনে করা হচ্ছে, বিচার প্রক্রিয়ার অনিশ্চয়তা এই ঘটনার অন্যতম প্রধান অনুঘটক। দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে এবং বন্দিদের মানসিক স্বাস্থ্যের দেখভালের জন্য বিশেষ দল পাঠানোর ব্যবস্থা করছে প্রশাসন।