আজকাল ওয়েবডেস্ক: এসআইআর-এর প্রক্রিয়ায় বিতর্ক যেন বেড়েই চলেছে। অতিরিক্ত কাজের চাপে একের পর এক বিএলও-র মৃত্যুকে ঘিরে আতঙ্কের ছায়া মধ্যপ্রদেশে। চলতি সপ্তাহে এখনও পর্যন্ত দু'জন বিএলও প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানা গেছে। গত ১০ দিনে এ নিয়ে মোট ছ'জন বিএলও-র মৃত্যু হল এই রাজ্যে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ নভেম্বর থেকে মধ্যপ্রদেশের ২৩০টি বিধানসভা কেন্দ্রে এসআইআর-এর কাজ শুরু হয়েছে। ৬৫ হাজার ১৪ জন বিএলও এসআইআর-এর প্রক্রিয়ার কাজে নিযুক্ত হয়েছেন। শুধুমাত্র ভোপালেই দু'হাজার ২৯ জন বিএলও নিযুক্ত আছেন। এ পর্যন্ত মাত্র ৩৭ শতাংশ ফর্ম পূরণের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। দশ দিনের মধ্যে বাকি ৬৩ শতাংশ ফর্ম পূরণ করতে হবে।
বিপুল কাজের চাপে আতঙ্ক ও প্যানিকে ভুগছেন বিএলও-রা। ইন্টারনেটের সমস্যার কারণেও সময় মতো ফর্ম আপলোড করা যাচ্ছে না। যা ঘিরে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছেন তাঁরা।
শহদলে ৫৪ বছরের মনিরাম নাপিত বিএলও হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। গ্রামে ফর্ম তুলতে গিয়ে, বাকি কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করে কর্তৃপক্ষের থেকে ফোন পান। তখনই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। নর্দমাপুরমের শিক্ষক সুজন সিং রঘুবংশী এসআইআর-এর কাজ সেরে ফেরার পথে ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছেন।
মান্ডিদ্বীপের বিএলও রমাকান্ত পাণ্ডে এসআইআর-এর কাজের মিটিংয়ের মাঝেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ঝাবুয়ায় ভুবন সিং চৌহান নামের এক বিএলও কাজে গাফিলতির অভিযোগে সাসপেন্ডেড হয়েছিলেন। এরপরই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। দামোহ জেলায় কর্মরত ছিলেন রমাকান্ত পাণ্ডে। কাজের মাঝেই অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। বালাঘাটে ৫০ বছর বয়সি অনীতা নাগেশ্বর অতিরিক্ত কাজের চাপ সামলাতে না পেরে, অসুস্থ হয়ে মারা যান।
তথ্য অনুযায়ী, মধ্যপ্রদেশ জুড়ে বহু বিএলও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অনেকেরই শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। কেউ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন, কারও মস্তিষ্কে চাপ জনিত কারণে গুরুতর সমস্যা, কেউ বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন (SIR) প্রক্রিয়া ঘিরে রাজ্যে রাজ্যে হুলস্থুল কাণ্ড। বাংলা, বিহার, মধ্যপ্রদেশের পাশাপাশি এবার কেরলেও বিএলওদের অসুস্থতা ও আত্মহত্যার ঘটনা প্রকাশ্যে। কাজের চাপে এক বিএলও আত্মঘাতী হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই আরও এক বিএলও আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে চিঠি লিখলেন। তাঁর দাবি, তিনি আত্মঘাতী হলে, নির্বাচন কমিশন, এসআইআর প্রক্রিয়াই দায়ী থাকবে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, দিন কয়েক আগেই কেরলের কন্নুর জেলায় এক বিএলও মানসিক চাপে আত্মঘাতী হন। এবার কোট্টায়াম জেলায় আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে চিঠি লিখলেন এক বিএলও। পুঞ্জার বিধানসভা এলাকায় ১১০ নম্বর বুথে বিএলও হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত রয়েছেন অ্যান্থনি নামের এক যুবক। বিএলওদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ভয়েস মেসেজ পাঠিয়ে জানিয়েছেন, অতিরিক্ত কাজের চাপে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত তিনি।
অ্যান্থনি জানিয়েছেন, ইন্টারনেটের সমস্যার কারণে কাজের গতি বাড়াতেও পারছেন না। এক সপ্তাহ ধরে ফর্ম পৌঁছে দিয়েছেন বাড়ি বাড়ি। অধিকাংশ ফর্ম অর্ধেকের বেশি পূরণ করা নেই। আবারও সমস্ত তথ্য জোগাড় করে তাঁকে ফর্ম পূরণ করতে হবে। অতিরিক্ত কাজের চাপে শারীরিক ও মানসিক হেনস্থার শিকার হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
এই কাজ থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন তিনি। এসআইআর-এর কাজ থেকে তাঁকে মুক্তি না দিলে, বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হবেন হুমকি দিয়েছেন তিনি। যা ঘিরে আবারও শোরগোল গোটা রাজ্যে।
