আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহার বিধানসভা নির্বাচনে মহাগঠবন্ধনের ভয়াবহ পরাজয়ের পর RJD–র অভ্যন্তরীণ অশান্তি আরও তীব্র রূপ নিল। সেই অস্থিরতার কেন্দ্রবিন্দুতে এবার লালু প্রসাদ যাদবের মেয়ে ও চিকিৎসক-রাজনীতিক রোহিণী আচার্য। শনিবার পাটনা বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রোহিণী এক চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেন— “আমার কোনও পরিবার নেই।” এর আগে তিনি হঠাৎই ঘোষণা করেন যে তিনি রাজনীতি ছাড়ছেন এবং নিজের পরিবারকেও “ত্যাগ” করছেন।
রোহিণীর অভিযোগ, RJD–র রাজ্যসভার সাংসদ ও তেজস্বী যাদবের ঘনিষ্ঠ সহযোগী সঞ্জয় যাদব এবং রমিজ নামের এক ব্যক্তি তাকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাপ দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, পরিবার ও দলের মধ্যে এমন এক ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে যেখানে কোনও প্রশ্ন তুললেই অপমান, হুমকি এমনকি জুতার বাড়িও খেতে হয়।
রোহিণীর এই মন্তব্য RJD–র ভেতরে জমে থাকা ক্ষোভ, দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বচ্ছতার অভাব এবং নেতৃত্ব ও কর্মীদের মধ্যে দূরত্বকে আরও প্রকট করে তুলেছে। নির্বাচনে ২৫ আসনে থেমে যাওয়া RJD–র বিপর্যয় দলটির ভেতরের অন্তর্দ্বন্দ্বকে আরও তীব্র করে তুলেছে।
রোহিণীর দাবি, সঞ্জয় যাদবকে সব প্রশ্ন থেকে দূরে রাখা হয়, যেন তিনি দলের ভরাডুবির জন্য কোনও দায় বহন না করেন। কিন্তু দলের কর্মীরাই তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। তিনি জানান, সঞ্জয় যাদব বা রমিজ সম্পর্কে কোনও প্রশ্ন তুললেই তাঁকে বা অন্য কর্মীদের সাইডলাইন করা হয়, বদনাম করা হয় এবং শারীরিকভাবে অপদস্থ হওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
তেজ প্রতাপ যাদব— রোহিণীর দাদা ও ইতিমধ্যেই দল থেকে বহিষ্কৃত— তিনিও বহুবার সঞ্জয় যাদবকে দলে অতিরিক্ত হস্তক্ষেপের জন্য দোষারোপ করেছেন এবং তাকে “জয়চন্দ” বলে কটাক্ষ করেছেন।
কে এই রমিজ নেমাত?
রোহিণীর পোস্টে উঠে এসেছে রমিজ নেমাতের নাম, যাকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে আগে তেমন কোনও তথ্য জানা ছিল না। দাবি করা হয়েছে—তিনি উত্তরপ্রদেশের বালরামপুরের বাসিন্দা, ঝাড়খণ্ডের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছেন, সঞ্জয় যাদবের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ, তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা রয়েছে এবং তিনি বর্তমানে জামিনে মুক্ত, তার শ্বশুর নাকি উত্তরপ্রদেশের কুখ্যাত অপরাধীদের একজন।
যদিও এসব অভিযোগের কোনও যাচাই এখনও হয়নি, কিন্তু রোহিণীর বিস্ফোরক মন্তব্যে RJD–র অভ্যন্তরীণ রাজনীতির অন্ধকার দিক আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
শনিবার বিকেলে রোহিণী X–এ লিখেন, “আমি রাজনীতি ছাড়ছি এবং আমার পরিবারকে ত্যাগ করছি। সঞ্জয় যাদব ও রমিজ— এটাই আমাকে করতে বলেছে। সমস্ত দোষ আমিই নিচ্ছি।”
তথ্য অনুযায়ী, বহু মাস ধরেই রোহিণী RJD, লালু যাদব এবং তেজস্বী যাদবকে সামাজিক মাধ্যমে আনফলো করেছিলেন। তিনি একাধিক রহস্যময়, আবেগঘন পোস্টে দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন। ২০২২ সালে বাবাকে কিডনি দেওয়া নিয়ে নানা গুজবও তাকে মানসিকভাবে আঘাত করেছে বলে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে।
বিহারের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে NDA ২০২টি আসন পেয়ে বিপুল জয়লাভ করেছে। বিপরীতে মহাগঠবন্ধন মাত্র ৩৫টিতে সীমাবদ্ধ— যার মধ্যে RJD–র ঝুলিতে মাত্র ২৫। এই ভরাডুবির পর লালু পরিবারে ভাঙন আরও স্পষ্ট। দলের ভিতরেও ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ, সিদ্ধান্ত গ্রহণে গোপনীয়তা এবং “অন্দরমহলের শাসন” নিয়ে আঙুল উঠছে।
রোহিণী আচার্যের এই নাটকীয় পদত্যাগ ও পরিবারবিচ্ছেদ RJD–র রাজনীতিতে এক গভীর সঙ্কটের ইঙ্গিত দিচ্ছে— যেখানে ক্ষমতার লড়াই, ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভাঙন এবং নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন ভবিষ্যতে দলটিকে আরও বিপাকে ফেলতে পারে।
