আজকাল ওয়েবডেস্ক: মিরাটের লালা লাজপত রায় মেডিকেল কলেজে মর্মান্তিক এক ঘটনার সাক্ষী থাকল গোটা হাসপাতাল। বাঘপত জেলার ২৪ বছর বয়সী এক যুবতীর কাহিনি। যুবতী তাঁর প্রসব ব্যথায় ছটফট করতে থাকেন। আচমকা যন্ত্রণা শুরু হলে যুবতীকে জরুরি ভিত্তিতে ভর্তি করা হয় ওবস্টেট্রিকস ও গাইনোকোলজি বিভাগের অধীনে। সূত্রে জানা গিয়েছে তাঁর দায়িত্বে ছিলেন ডঃ রচনা চৌধুরী। আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষার মাধ্যমে রেডিওলজিস্ট ডঃ ইয়াসমিন উসমানি নিশ্চিত করেন যে, প্রসূতির গর্ভে জমজ (কনজয়েন্ড টুইনস) সন্তান রয়েছে। এরপরই এক জরুরি সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম হয়।

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, নবজাতক দুটি  পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। তাঁদের বুক ও পেটের অংশ  একত্রে জোড়া ছিল। এমনকি শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলিও ছিল অভিন্ন। এর মধ্যে ছিল যকৃত (লিভার) এবং হৃদযন্ত্র (হার্ট)। জন্মের পরই চিকিৎসকরা দেখতে পান যে নবজাতকেরা অত্যন্ত সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। এরপর গভীর পর্যবেক্ষণে রাখার পরও দুঃখজনকভাবে তারা জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মারা যায়।

ডঃ রচনা চৌধুরী জানান, এই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত বিরল। হাজারটার মধ্যে একটি ঘটে এমন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি ৫০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ জন্মে একটি মাত্র যুক্তজমজ সন্তানের জন্ম হয়। চিকিৎসকরা জানান এই ধরনের পরিস্থিতি মূলত গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে ভ্রূণের বিভাজন অসম্পূর্ণ থাকার ফলে ঘটে। এর কারণে দুটি পৃথক শিশুর পূর্ণ বিকাশ সম্ভব হয় না।

চিকিৎসক আরও জানান, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এমন জমজ নবজাতকরা জন্মের পরে দীর্ঘ সময় বাঁচে না। যারা বেঁচে থাকে, তাঁদের শরীরের নির্দিষ্ট কিছু অংশ, যেমন- বুক, পেট কিংবা পেলভিস-এ যুক্ত থাকে এবং কখনও কখনও অভ্যন্তরীণ অঙ্গও ভাগ করে নেয়। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে যুক্তজমজ শিশুদের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পৃথক করা সম্ভব হলেও, এটি নির্ভর করে তারা কোন অংশ দিয়ে সংযুক্ত এবং কোন অঙ্গগুলি তারা শেয়ার করছে তার উপর।

প্রায় ২০ বছরের পেশাগত জীবনে এই প্রথম এমন একটি ঘটনা দেখলেন বলে জানিয়েছেন ডঃ চৌধুরী। জন্মের পর শিশুদের মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। অপরদিকে, মায়ের শারীরিক অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

আরও পড়ুনঃ মধুচন্দ্রিমার রাতে বিয়ের শাড়ি ছিঁড়ে নববধূ এ কী করলেন! হাঁ করে দেখল সবাই, এরপর যা হল জানলে ভিরমি খাবেন ...

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি এক দিল্লির যুবতীর সঙ্গে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। খবর অনুযায়ী, একজন ৩৮ বছর বয়সী দিল্লির যুবতী গর্ভবতী অবস্থায় সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের পর দীর্ঘ চার বছর ধরে 'অজ্ঞাত' এক ব্যথায় ভুগছিলেন। ২০১০ সালে তাঁর অস্ত্রপ্রচার হয়। বিদেশে জরুরি সিজারিয়ানের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরপরই তাঁর পেটের নিচের ডান দিকে ব্যথা শুরু হয়। চিকিৎসকরা তখন এটিকে সাধারণ পোস্ট-অপারেটিভ ব্যথা বলে মনে করেছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা ক্রমশ বেড়ে যায়। একটা সময় এটি চরম আকার ধারণ করে। পরীক্ষার পর সেখানে একটি গাঁঠ দেখা দেয়।

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালে দিল্লিতে আরও পরীক্ষা করানোর সিদ্ধান্ত নেন ওই যুবতী। এরপর চিকিৎসকরা আলট্রাসাউন্ড ও সিটি স্ক্যান করেন। রিপোর্টে সেখানে একটি সিস্ট ধরা পড়ে। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকরা ধারণা করেন এটি একটি মেসেন্টেরিক সিস্ট হতে পারে। চিকিৎসকরা জানান এটি এক ধরনের মাইল্ড টিউমার, যা মাঝে মাঝে পেটে অস্বস্তি ও ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।

এরপর সম্পূর্ণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য চিকিৎসকরা যুবতীর এমআরআই স্ক্যান করেন। এখানেই জটিলতা আরও বেড়ে যায়। রিপোর্ট অনুযায়ী, সিস্টের মধ্যে একটি পুরু ঝিল্লির মত কিছু দেখা যায়। ছবিটি দেখে চিকিৎসকরা অনুমান করেন এটি হয়তো ফিতাকৃমির (tapeworm) সংক্রমণ, যা দূষিত খাদ্যের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করেছে।

তবুও এটি যে আসলে কী তার চূড়ান্ত ফলাফল বোঝা না যাওয়ায় শেষমেশ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সিস্টটি অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অপারেশনের সময় চিকিৎসকরা দেখতে পান, সিস্টটি অন্ত্রের একটি অংশের সঙ্গে মিশে গিয়েছে, যা কেটে ফেলতে হয়। সফল অস্ত্রোপচারের পর রোগীকে এক সপ্তাহের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়।

অদ্ভুত বিষয় হল সিস্টের আকারটি ছিল প্রায় ২০ সেন্টিমিটার দীর্ঘ। অপারেশনের পর যখন এটি খোলা হয়, তখন ভিতরে পাওয়া যায় একটি সার্জিক্যাল স্পঞ্জ, যা সম্ভবত ওই যুবতীর সিজারিয়ান অপারেশনের সময় ভুল করে পেটের ভিতরে রেখে দেওয়া হয়েছিল। চিকিৎসকদের মতে, শরীর যখন কোনও অপ্রয়োজনীয় বিষয় দেখে , তখন সেটিকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে। কিন্তু যেহেতু স্পঞ্জটি জীবাণুমুক্ত ছিল এবং সহজে ভাঙে না, তাই শরীর এটি ঘিরে তার চারপাশে একটি সিস্ট তৈরি করে ফেলে, যাতে সংক্রমণ না ঘটে।

এই অবস্থাকে গসিপিবোমা (gossypiboma) বলে। তথ্য অনুযায়ী ,অস্ত্রোপচারের সময় ভুল করে কোনও সামগ্রী যদি ভেতরে থেকে যায় তখন এটি ঘটে। বিশেষ করে তুলো বা স্পঞ্জ, রোগীর শরীরের ভিতরে রেখে দেওয়া হয়। যদিও এই ঘটনা বিরল বলে মনে করেছেন চিকিৎসকরা। তথাপি প্রতি ১,০০০ থেকে ১,৫০০ অস্ত্রোপচারে এমন ঘটনা একটি করে ঘটতে পারে, বিশেষ করে জরুরি অস্ত্রোপচার বা যখন অস্ত্রোপচার দলের সদস্য পরিবর্তিত হয়।