আজকাল ওয়েবডেস্ক: মধ্যপ্রদেশের রাইসেন জেলার উমারিয়া গ্রামে আজ সকালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, ভারতের দ্রুত অগ্রগতি দেখে বিশ্বশক্তিগুলির মধ্যে ঈর্ষা জন্মেছে এবং নানা উপায়ে ভারতের অগ্রযাত্রা ঠেকানোর চেষ্টা চলছে।
রাইসেনে ভারত আর্থ মুভার্স লিমিটেডের (বিইএমএল) ‘ব্রহ্ম’ রেল হাব ফর ম্যানুফ্যাকচারিং-এর শিলান্যাস অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজনাথ সিং বলেন, “কিছু মানুষ ভারতের এই উন্নতি মেনে নিতে পারছেন না। তারা ভাবছেন—‘সবকে বস তো আমরা, ভারত এত দ্রুত এগোচ্ছে কীভাবে?’ তাই এখন চেষ্টা চলছে যাতে মেইড-ইন-ইন্ডিয়া পণ্য বিদেশে রপ্তানি হলে তা আরও দামী হয়ে যায়।”
তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার তেল কেনার জন্য ভারতের উপর ৫০ শতাংশের বেশি শুল্ক বসিয়েছে, যা ভারত সরকার “অন্যায্য ও অযৌক্তিক” বলে অভিহিত করেছে। রাজনাথ সিংয়ের কথায়, “যেভাবে ভারত এগোচ্ছে, আমি আশ্বস্ত করে বলতে পারি—কোনও বিশ্বশক্তি আমাদের সুপারপাওয়ার হওয়া আটকাতে পারবে না।”
অনুষ্ঠানে তিনি ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এই সামরিক অভিযানে ভারতীয় বাহিনী সম্পূর্ণ দেশীয় সরঞ্জাম ব্যবহার করেছে, যা অভিযানের সাফল্যের অন্যতম চাবিকাঠি। “প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হওয়ার অঙ্গীকার নিয়েই ভারত আজকের অবস্থানে পৌঁছেছে,” মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির অগ্রগতির প্রসঙ্গ তুলে রাজনাথ সিং জানান, ভারতের প্রতিরক্ষা উৎপাদন ও রপ্তানি অভূতপূর্ব গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৪ সালে যেখানে প্রতিরক্ষা রপ্তানির পরিমাণ ছিল মাত্র ৬০০ কোটি টাকা, সেখানে বর্তমানে তা ২৪,০০০ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। “আজ আমরা শুধু নিজেদের প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র, বিমান বা সামরিক সরঞ্জামই তৈরি করছি না, বিদেশেও রপ্তানি করছি,” বলেন তিনি।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ২০১৪ সালে ভারত ছিল বিশ্বের ১১তম বৃহত্তম অর্থনীতি, আর বর্তমানে ভারত শীর্ষ চার অর্থনীতির মধ্যে রয়েছে। দেশের প্রবৃদ্ধি হার প্রায় ৬.৩ শতাংশ—যা বিশ্বের অন্যতম দ্রুত। “বিশ্বে যদি কোনও দেশের অর্থনীতি উদ্যমী ও গতিশীল হয়, তবে তা আমাদের ভারত,” বলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী।
রাইসেনে ১,৮০০ কোটি টাকার গ্রিনফিল্ড রেল কোচ কারখানা প্রকল্প নিয়েও তিনি কথা বলেন। এই কারখানায় শুধু হাই-স্পিড ট্রেনের কোচ নয়, অন্যান্য রেলপণ্যও তৈরি হবে এবং প্রায় ৫,০০০ সরাসরি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
মধ্যপ্রদেশকে প্রতিরক্ষা শিল্পের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার সম্ভাবনা নিয়েও আশাবাদী রাজনাথ সিং বলেন, “রাজ্যের প্রাকৃতিক সম্পদ, অবকাঠামো এবং নেতৃত্ব—সবই রয়েছে। প্রতিরক্ষা খাতে যা কিছু করা সম্ভব, আমি সবসময় প্রস্তুত।”
তিনি মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদবের প্রশংসা করে জানান, রাজ্যে ইতিমধ্যেই ৩০ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি এসেছে এবং ১৮,০০০ হেক্টর জমির ভূমি ব্যাংক তৈরি হয়েছে। পর্যাপ্ত সংযোগ ব্যবস্থা, শিল্পোন্নয়ন, সামাজিক-সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ এবং ধর্মীয় উন্নয়ন একসঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। “মোহনজির মতো পরিশ্রমী ও নিবেদিত নেতা থাকলে ‘মধ্যপ্রদেশ’কে আজ ‘মডার্ন প্রদেশ’ বলা যায়,” মন্তব্য করেন তিনি।
পরিশেষে রাজনাথ সিং উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণের ভারসাম্যের কথা উল্লেখ করেন এবং রেল কোচ কারখানাকে “আধুনিক উন্নয়নের প্রতীক” হিসেবে আখ্যা দেন।
