আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহার বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফার মনোনয়ন দাখিলের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাওয়ায় এবং নির্দিষ্ট সময়সীমা ঘনিয়ে আসায় মহাগঠবন্ধনের দুই প্রধান সহযোগী—রাজদ (RJD) ও কংগ্রেসের মধ্যে আসন ভাগ নিয়ে অনিশ্চয়তা ক্রমশই বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এবং দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে নিজ উদ্যোগে আরজেডি  প্রধান লালু প্রসাদ যাদবকে ফোন করেন বলে সূত্রের খবর। তবে সেই টেলিফোনিক আলোচনার ফলাফল এখনো জানা যায়নি।

সূত্র অনুযায়ী, কংগ্রেসের ভাগে কতগুলি আসন পড়বে এবং কিছু প্রভাবশালী আসনে প্রার্থী বাছাই নিয়ে মতভেদই এখন প্রধান অচলাবস্থার কারণ। শুরুতে আরজেডি কংগ্রেসকে ৫২টি আসনের প্রস্তাব দিয়েছিল, যা কংগ্রেস সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে ৬০টি আসনের দাবি জানায়। ফলে রাজ্যের দুই দলের আলোচনায় জট তৈরি হয় এবং বিষয়টি জাতীয় নেতৃত্বের পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায়।

শেষ পর্যন্ত আরজেডি নাকি কংগ্রেসের ৬১টি আসনের দাবিতে রাজি হয়েছে, যদিও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আসন ছাড়তে রাজি নয় আরজেডি। কাহালগাঁও, নারকাটিয়াগঞ্জ ও বসালিগঞ্জের মতো আসন আরজেডি নিজেদের শক্তঘাঁটি হিসেবে ধরে রাখতে চায়। অন্যদিকে চেইনপুর ও বচোয়াড়া আসন নিয়ে আলোচনা হলেও সেগুলি তুলনামূলকভাবে কম বিতর্কিত বলে জানা গেছে।

২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ৭০টি আসনে লড়ে মাত্র ১৯টিতে জয়লাভ করেছিল। এবার দলটি তুলনামূলক কম আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে রাজি হলেও, রাজদ-নেতৃত্বাধীন জোটে নিজেদের প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে। কংগ্রেসের তরফে দাবি করা হয়েছে, রাহুল গান্ধীর ‘ভোট অধিকারের যাত্রা’ (Vote Adhikar Yatra) রাজ্যে দলের ভাবমূর্তি উন্নত করেছে এবং সংগঠনকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। তবুও শেষ পর্যন্ত দলটি আলোচনায় কিছুটা নমনীয়তা দেখিয়েছে।

আরও পড়ুন:  “মোদি রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করবেন”: ট্রাম্পের দাবিতে চাঞ্চল্য! ‘বৈচিত্র্যই ভারতের নীতি’ পাল্টা জবাব দিল নয়াদিল্লি

আরজেডি এবারও জোটের বৃহত্তম অংশীদার হিসেবে বেশি আসনে লড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত নির্বাচনে তারা ১৪৪টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৭৫টিতে জিতেছিল। বাকি আসনগুলিতে বাম দলগুলি—সিপিআই(এমএল) লিবারেশন, সিপিআই(এম) এবং সিপিআই—সহ প্রাক্তন রাজ্য মন্ত্রী মুকেশ সাহানির মতো জোট-সহযোগীদের জন্য কিছু আসন ছেড়ে দেওয়া হতে পারে।

এদিকে, বুধবার রাতে কংগ্রেস আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের প্রথম প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে, যদিও তখনও আরজেডি'র সঙ্গে আসন ভাগের চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি। একই দিন রাজদ নেতা তেজস্বী যাদব রাঘোপুর আসন থেকে নিজের মনোনয়ন দাখিল করেন।

অন্যদিকে, বুধবার গভীর রাতে শোনা যায় যে, লালু প্রসাদ যাদব নিজের বাসভবন রাবড়ি দেবীর বাড়িতে বেশ কয়েকজন আরজেডি প্রার্থীর হাতে দলের প্রতীক তুলে দিয়েছেন। তবে তেজস্বী যাদব দিল্লিতে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক শেষে পাটনায় ফিরতেই সেই প্রতীক বিতরণ স্থগিত রাখা হয় বলে জানা গেছে।

মহাগঠবন্ধনের এই অচলাবস্থা যত দীর্ঘায়িত হচ্ছে, ততই প্রশ্ন উঠছে—বিহারে বিরোধী ঐক্যের দৃঢ়তা কতটা টিকে থাকবে, বিশেষ করে মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন যত ঘনিয়ে আসছে।