আজকাল ওয়েবডেস্ক: তিন দিনের রাশিয়া সফরে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বৃহস্পতিবার মস্কোতে প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনার জন্য দিল্লির উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। ওয়াশিংটনের যুক্তি একে ভারত পরোক্ষভাবে ইউক্রেনের উপর মস্কোর আগ্রাসনকে অর্থের জোগান দিয়ে সমর্থন করছে।  এই আহবে জয়শঙ্কর-পুতিন সাক্ষাৎ বেশ তাৎপর্যবাহী।

বিদেশমন্ত্রী পুতিনের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের ছবি এক্স হ্যান্ডেলে পোস্টে করেছেন। সেখানেই তিনি লেখেন, 'আজ ক্রেমলিনে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং প্রধানমন্ত্রী মোদি-র উষ্ণ শুভেচ্ছা প্রেসিডেন্ট পুতিনের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী ডেনিস মান্টুরভ এবং এফএম সার্জেই ল্যাভরভের সঙ্গে আমার আলোচনা সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করেছি। বিশ্বের পরিস্থিতি এবং ইউক্রেনের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ভাগ করে নেওয়া বেশ প্রশংসার কাজ।'

এর আগে, জয়শঙ্কর ভারত-রাশিয়া সম্পর্ককে "দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিশ্বের সবচেয়ে স্থিতিশীল সম্পর্কগুলির একটি হল ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক।" একই সুরে রুশ বিদেশমন্ত্রী সার্জেই লাভরভ এই বন্ধুত্বকে "বিশেষ কৌশলগত অংশীদারিত্ব" বলে উল্লেখ করেন।

উপ-প্রধানমন্ত্রী ডেনিস মান্তুরভের সঙ্গে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক আলোচনার পর মস্কোতে পৌঁছান জয়শঙ্কর। ভারতের বিদেশমন্ত্রী বলেছেন যে, লাভরভের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত রাজনৈতিক সম্পর্ক এবং দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা উভয়ই পর্যালোচনা করার একটি সুযোগ।

জয়শঙ্কর মস্কোর সঙ্গে আরও শক্তিশালী বাণিজ্যের আহ্বান জানিয়েছেন, রাশিয়ান সংস্থাগুলিকে ভারতীয় অংশীদারদের সঙ্গে "আরও নিবিড়ভাবে" কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। মস্কোতে রাশিয়ার প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী ডেনিস মান্তুরভের সঙ্গে যৌথ-ভাষণে জয়শঙ্কর বলেন যে, "বাণিজ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে, যৌথ উদ্যোগ বাড়াতে হবে। আমাদের মন্ত্র হওয়া উচিত- আরও বেশি কাজ, এবং তা নতুনভাবে করা।" 

আরও পড়ুন-  "নীরবতা কেবল উৎপীড়ককেই উৎসাহিত করে", ট্রাম্পকে বেনজির কটাক্ষ চীনা রাষ্ট্রদূতের, দিল্লিকে সমর্থনের বার্তা

বিদেশমন্ত্রী আরও বলেন, শুল্ক ও অ-শুল্ক প্রতিবন্ধকতা দূর করা, লজিস্টিকস সহজ করা, ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডর, নর্দার্ন সি রুট ও চেন্নাই-ভ্লাদিভোস্তক করিডরের মাধ্যমে সংযোগ বাড়ানো এবং মসৃণ পেমেন্ট ব্যবস্থাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ।

বুধবার, ভারতে রাশিয়ার চার্জ ডি'অ্যাফেয়ার্স রোমান বাবুশকিন বলেছেন যে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এবং ভূ-রাজনৈতিক চাপ সত্ত্বেও ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক "উন্নতির পথে" রয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, জ্বালানি এবং প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্বের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ, যা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও প্রসারিত হচ্ছে।

ভারত-রাশিয়া বাণিজ্য গত চার বছরে পাঁচগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিসংখ্যান মোতাবেক, ২০২১ সালে ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ২০২৪-২৫ সালে ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। মূলত রাশিয়ান হাইড্রোকার্বন আমদানির কারণে এই বৃদ্ধি। রুশ দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে ভারত-রাশিয়া বাণিজ্য ৭০০ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে।