আজকাল ওয়েবডেস্ক: পরিবারের আপত্তি সত্ত্বেও দলিত যুবককে বিয়ে। গর্ভবতী মেয়েকে মারতে মারতে শেষ করার অভিযোগ উঠল বাবা ও পরিবারের আত্মীয়দের বিরুদ্ধে। যে হত্যাকাণ্ডের জেরে শিউরে উঠেছেন স্থানীয়রা। 

 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে কর্ণাটকে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছে হুব্বালিতে। সাত মাসের গর্ভবতী এক তরুণীকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে। খুনের অভিযোগ উঠেছে তাঁর বাবা ও নিজের পরিবারের আত্মীয়দের বিরুদ্ধে। পরিবারের আপত্তি সত্ত্বেও এক দলিত যুবককে বিয়ে করেছিলেন তরুণী। সেই কারণেই নৃশংস হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে বলেই অনুমান পুলিশের। 

 

পুলিশ আরও জানিয়েছে, রবিবার হুব্বালি থানার অন্তর্গত ভিরাপুর গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। মান্য নামের ওই তরুণী বিবেকানন্দ নামের এক যুবককে বিয়ে করেছিলেন গত কয়েক মাস আগে। তার আগে কয়েক বছর ধরেই ওই যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল তরুণীর। দু'জনেই এক গ্রামের বাসিন্দা। যুবক ভিন জাতের কারণেই বিয়েতে আপত্তি ছিল তরুণীর পরিবারের।

 

বিবেকানন্দকে বিয়ের আগে মান্য জানিয়েছিলেন, তিনি অন্য কারও সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবেন না। বিবেকানন্দ দলিত বলেই আপত্তি ছিল মান্যর বাবার। পরিবারের অনুমতি না নিয়ে আইনিভাবে বিয়ে সারেন মান্য ও বিবেকানন্দ।‌ এরপর হাভেরি জেলায় চলে যান। এরপর দুই পরিবারকেই থানায় ডেকে ঝামেলা মেটানোর চেষ্টা করে পুলিশ। কিন্তু তারপরেও অশান্তি মেটেনি। 

বিয়ের সাত মাস পর গর্ভবতী অবস্থায় আগের গ্রামেই ফেরেন মান্য ও বিবেকানন্দ। মেয়ের ফেরার খবর পেয়েছিলেন বাবা। রবিবার সন্ধ্যায় বিবেকানন্দের বাড়িতে গিয়ে আচমকা অশান্তি শুরু করেন মান্যর বাবা ও আত্মীয়রা। ভয়াবহ হামলা চালান তাঁরা। 

 

অভিযোগ, মান্যকে লাঠি দিয়ে মারধর করেন তাঁরা। গর্ভবতী জেনেও তলোয়ার নিয়ে আঘাত করেন বাবা। অতিরিক্ত রক্তপাতের জেরে ঘটনাস্থলে লুটিয়ে পড়েন মান্য। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। পাশাপাশি বিবেকানন্দ ও তাঁর মা গুরুতর আহত হয়েছেন। এই ঘটনার পরেই মান্যর বাবা ও দুই আত্মীয় গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান। পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে। 

 

গত মাসেই মহারাষ্ট্রের নান্দেদে এমন আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, তিন বছরের প্রেমের সম্পর্ক ভাঙতে মরিয়া হয়ে ওঠে আঁচলের বাড়ির লোকেরা। সক্ষম তাতেকে এলাকায় দেখতে পেয়েই বাড়ির কাছে ডেকে পাঠান আঁচলের বাবা, ভাইয়েরা। সক্ষমকে মারধর করে, মাথায় গুলি করে খুন করা হয়। পরে পাথর দিয়ে মাথা থেঁথলে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। 

 

শুক্রবার সকালে খবরের কাগজে সক্ষমের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন আঁচল। শেষকৃত্য চলাকালীন আঁচল সক্ষমের বাড়িতে পৌঁছন। নিথর প্রেমিকের হাত দিয়ে নিজের সিঁথি সিঁদুরে রাঙিয়ে তোলেন যুবতী। সক্ষমের বিধবা স্ত্রী হিসেবে বাকি জীবন শ্বশুড়বাড়িতে থাকার সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি। সক্ষমের খুনিদের মৃত্যুদণ্ড দাবি করার সময় বলেন, "আমাদের ভালবাসা জিতেছে, এমনকী সক্ষমের (প্রেমিকের নাম) মৃত্যুতেও আমার বাবা এবং ভাইয়েরা হেরে গিয়েছে।" জোর গলায় আঁচল বলতে থাকেন, তিনি বিয়ে করেছেন কারণ সক্ষম মারা গেলেও তাঁদের ভালবাসা এখনও বেঁচে আছে। গোটা পরিবারের মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়েছেন আঁচল। 

 

পুলিশ জানিয়েছে, ১২ ঘণ্টার মধ্যে মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছে, আঁচলের বাবা গজানন বালাজি মামিদওয়ার, মা জয়শ্রী মামিদওয়ার, দাদা সাহিল গজানন মামিদওয়ার, সোমেশ সুভাষ, বেদান্ত অশোক কুন্দেকার, চেতন বালাজি মামিদওয়ার, আরও এক অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তি‌। এই অভিযুক্তদের মধ্যে আঁচলের ১৭ বছরের এক ভাইও আছে। সক্ষম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গতকাল ছ'জনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। আজ ধৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট। 

 

এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে আঁচল জানিয়েছেন, সক্ষম জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরেই খুনের পরিকল্পনা করেছিল পরিবারের সদস্যদের। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁকে নিয়ে থানায় গিয়েছিল দাদা, ভাইয়েরা। মিথ্যে মামলায় সক্ষমকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু পুলিশ সেই মামলা রুজু না করে, সক্ষমকে খুনের উস্কানি দেয়। থানা থেকে ফিরেই বৃহস্পতিবার তাঁর অনুপস্থিতিতে সক্ষমকে নির্মমভাবে খুন করে তারা। 

 

আঁচল আরও জানিয়েছে, 'সক্ষম তফশিলি জাতির ছিল বলেই পরিবারের আপত্তি ছিল বিয়েতে। পরিবার জানিয়েছিল, আমাকে বিয়ে করতে হলে জাতি বদলে ফেলতে হবে। তার জন্যেও প্রস্তুত ছিল সক্ষম। আমার পরিবার ওকে শেষ করার অপেক্ষায় দিন গুনছিল।' প্রত্যক্ষদর্শীরাও জানিয়েছেন, সক্ষমকে কাছে পেয়েই তড়িঘড়ি গুলি চালায় আঁচলের ভাই। স্থানীয়রা হস্তক্ষেপ করার আগেই সক্ষমের মৃত্যু হয়।