আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতীয় থিয়েটারের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, নাট্যকার ও নির্দেশক রতন থিয়াম আজ ভোররাতে ইহলোক ত্যাগ করেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। ইমফলের আঞ্চলিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে (Regional Institute of Medical Sciences) আজ, ২৩ জুলাই ভোর ১টা ৩০ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। রতন থিয়াম, যিনি ‘থিয়াম নেমাই’ নামেও পরিচিত ছিলেন, কেবল একজন নাট্যনির্দেশকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একাধারে চিত্রশিল্পী, সুরকার ও সাংস্কৃতিক চিন্তাবিদ। মণিপুর-উৎপত্তি হলেও তাঁর কাজ ও প্রভাব বহু আগেই সারা ভারত এবং আন্তর্জাতিক থিয়েটার জগতে ছড়িয়ে পড়েছিল।
তিনি “থিয়েটার অফ রুটস” আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচিত হন। ১৯৭০-এর দশকে এই আন্দোলন ভারতীয় নাট্যশিল্পকে এক নতুন দিশা দেয়—যেখানে আধুনিক চিন্তার সঙ্গে মিলেমিশে ধরা দেয় নিজস্ব সংস্কৃতি, আদি কাব্যিকতা ও স্থানীয় রূপকলা। থিয়ামের নির্দেশিত নাটক যেমন চক্রব্যূহ, উত্তর প্রিয়দর্শী, হেই নুংশিবি পৃথিভি ও চিংলন মাপন তাম্পাক আ মা ভারতীয় থিয়েটারের ভাষা ও রূপকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়।
তিনি ১৯৮৭ সালে সংগীত নাটক একাডেমি পুরস্কারে সম্মানিত হন এবং ১৯৮৯ সালে পান দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান পদ্মভূষণ। এর আগে, তিনি ১৯৮৭ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত দিল্লিভিত্তিক ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামার পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছিলেন। রতন থিয়ামের প্রতিষ্ঠিত চোরাস রিপার্টরি থিয়েটার (Chorus Repertory Theatre), ইমফলের সাংস্কৃতিক মানচিত্রে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁর কাজ সাহসিকতার সঙ্গে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রশ্ন তুলে ধরেছে। আন্তর্জাতিক মহলেও তাঁর সৃজনশীলতা প্রশংসিত হয়েছে।
মণিপুর সরকার এক শোকবার্তায় জানায়, “পদ্মভূষণ ও সংগীত নাটক একাডেমি পুরস্কারে সম্মানিত ভারতীয় থিয়েটারের অন্যতম স্তম্ভ, মণিপুরের সাংস্কৃতিক অহংকার রতন থিয়ামের প্রয়াণে আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি। তাঁর পরিবার, শিষ্যবৃন্দ এবং সারা বিশ্বের ভক্তদের প্রতি রইল আমাদের আন্তরিক সমবেদনা।” মণিপুরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এন বিরেন সিং সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, “রতন থিয়ামের প্রয়াণে থিয়েটার জগৎ একজন আলোকবর্তিকাকে হারাল। তাঁর কাজ মণিপুরের আত্মা বহন করত—সেই ইতিহাস, সংগ্রাম আর সৌন্দর্যকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরেছিল।” রতন থিয়ামের মৃত্যুতে ভারতীয় নাট্যজগতে এক শূন্যতা তৈরি হল, যা সহজে পূরণ হবার নয়।
