আজকাল ওয়েবডেস্ক: মহারাষ্ট্রের ড্রাফ্ট ভোটার তালিকায় বিশাল অসঙ্গতি ও অনিয়ম সামনে আসায় আসন্ন পুরসভা নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মুম্বইয়ে ১১ লক্ষেরও বেশি ডুপ্লিকেট ভোটার নাম এবং নান্দেড়ের ভোটার তালিকায় কোচিং সেন্টারের ঠিকানাকে ব্যবহার করে শত শত ভোটার নথিভুক্ত করার ঘটনা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
আজতক–এর হাতে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মুম্বইয়ের মোট ১.০৩ কোটি ভোটারের মধ্যে প্রায় ১০.৬৪ শতাংশ, অর্থাৎ ১১.০১ লক্ষ ভোটার নাম পুনরাবৃত্তি হয়েছে। রিপোর্টে একটি চরম উদাহরণ তুলে ধরে বলা হয়েছে—একজন ভোটারের নাম তালিকায় ১০৩ বার পাওয়া গেছে। কর্তৃপক্ষ এই ভুলের জন্য প্রিন্টিং জনিত সমস্যা, ভোটারদের ঠিকানা পরিবর্তন এবং মৃত ভোটারদের নাম অপসারণ না করাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
এই ডুপ্লিকেট ভোটারের সংখ্যা রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল এলাকায় সবচেয়ে বেশি। রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ডুপ্লিকেট ভোটারের শীর্ষ পাঁচটি ওয়ার্ডের মধ্যে চারটিই বিরোধী দল শিবসেনা (ইউবিটিএ) এবং এনসিপি (শরদ পাওয়ার)–এর পুরনো ঘাঁটি। ওরলির ১৯৯ নম্বর ওয়ার্ড, যেখানে প্রাক্তন মেয়র কিশোরী পেডনেকার কাউন্সিলর ছিলেন, সেখানে ৮,২০৭ জন ডুপ্লিকেট ভোটার পাওয়া গেছে।
এই পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে মহারাষ্ট্র রাজ্য নির্বাচন কমিশন (SEC) মুম্বইয়ে আপত্তি জানানোর শেষ তারিখ ২৭ নভেম্বর থেকে বাড়িয়ে ৩ ডিসেম্বর করেছে। কমিশনের ইঙ্গিত অনুযায়ী, এই পরিষ্কারের কাজ নির্বাচনের সময়সূচি পিছিয়ে দিতে পারে, যদিও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ৩১ জানুয়ারি ২০২৬–এর মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করা বাধ্যতামূলক।
আলাদা এক অনুসন্ধানে The Quint নান্দেড় ওয়াঘালা কর্পোরেশনের ভোটার তালিকায় অস্বাভাবিক অনিয়মের সন্ধান পেয়েছে। ৫ নং ওয়ার্ড-এ ৬০০–রও বেশি ভোটারের ঠিকানা হিসেবে IIB Career Institute এবং RCC Pattern Coaching–এর নাম ব্যবহার করা হয়েছে। আরও ৩,৫৮৭ জন ভোটারের ঠিকানায় লেখা শুধুই—“NA (Not Applicable)”।
IIB Career Institute–এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর দশরথ পাটিল জানিয়েছেন—“বেশিরভাগ ছাত্র এখানে আর থাকেই না। সেই সময় কালেক্টরকে প্রচুর ভোটার নাম অন্তর্ভুক্ত করার টার্গেট দেওয়া হয়েছিল। তাই কোচিং সেন্টারের ঠিকানাই ব্যবহার করা হয়।”
একজন বুথ লেভেল অফিসারও স্বীকার করেছেন, অতিরিক্ত চাপ এবং দ্রুত কাজ শেষ করার তাগিদে প্রক্রিয়াগত ত্রুটি ঘটেছে, কারণ ভোটারদের আধার কার্ডে তাদের গ্রাম বা অন্যান্য জেলা–র ঠিকানা ছিল।
শিবসেনা (ইউবিটিএ)–র নেতা আদিত্য ঠাকরে এই ঘটনাকে “অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং ক্ষমার অযোগ্য” বলে আক্রমণ করে জানিয়েছেন—এর সমাধান না হলে পুরসভা নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়বে।
মুম্বই কংগ্রেস সভাপতি এবং সাংসদ বর্ষা গাইকওয়াডও নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন—“১১ লক্ষ ডুপ্লিকেট ভোটারের তালিকা প্রকাশ্যে আনতেই হবে।” তাঁর দাবি, অনেক ভোটারকে ভুল ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়েছে, যা সরাসরি নির্বাচনী ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে।
এদিকে, উপমুখ্যমন্ত্রী এবং এনসিপি নেতা অজিত পাওয়ারও বিষয়টি স্বীকার করে বলেন—“মুম্বইয়ে ডাবল, ট্রিপল এমনকি চারবার নাম থাকা ভোটার সংখ্যা প্রায় ১১ লক্ষ। এ ধরনের অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না।” তিনি নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপও চেয়েছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মহারাষ্ট্রে এই ধরনের অনিয়ম শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত ত্রুটি নয়—বরং প্রশাসনিক চাপ, রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা এবং অবহেলার ফল যা নির্বাচনী কাঠামোর প্রতি নাগরিকদের আস্থা ক্ষুণ্ণ করছে।
পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াবে এবং পুরসভা নির্বাচন সময়মতো হবে কিনা—সে প্রশ্ন এখনো অনিশ্চিত। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট: ভোটার তালিকার এই বিপুল অসঙ্গতি মহারাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ওপর গভীর ছাপ ফেলেছে।
