আজকাল ওয়েবডেস্ক: শুধু পাকিস্তান নয়, অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন ভারতীয় বাহিনী পাক-চীনের যৌথ হামলার মুখে পড়েছিল বলে জানাল নয়াদিল্লি। অপারেশন সিঁদুরের মোকাবিলায় পাকিস্তানের সামরিক অভিযানে সাহায্য করছিল বেজিং। শুক্রবার এই বিস্ফোরক তথ্য জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ (ক্যাপাবিলিটি ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সাসটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাহুল আর সিং। তিনি বলেছেন, "চিন সরাসরি রিয়েল টাইমে তথ্য ও সামরিক সহায়তা দিচ্ছিল পাকিস্তানকে।"

ফিকির এক অনুষ্ঠানে ভাষণের সময়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল সিং বলেন, "একটি সীমান্ত, কিন্তু দুই শত্রু—এটাই ছিল অপারেশন সিঁদুর থেকে ভারতের সবচেয়ে বড় শিক্ষা। পাকিস্তান ছিল সামনের মুখ, আর তার পিছনে ছিল চিনের প্রযুক্তিগত ও তথ্যভিত্তিক সহায়তা। আমাদের ডিজিএমও স্তরের আলোচনার সময়ে পাকিস্তান বলছিল, তারা জানে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ভেক্টর প্রস্তুত আছে। ওরা সেটা তখনই টানতে বলছিল। মানে ওরা সরাসরি চিন থেকে লাইভ ইনপুট পাচ্ছিল।"

গত পাঁচ বছরে পাকিস্তানের ৮১ শতাংশ সামরিক সরঞ্জাম এসেছে চিন থেকে। শুধু তাই নয়, চিন এই সুযোগকে ‘লাইভ ল্যাব’-এর মতো ব্যবহার করছে, নিজেদের অস্ত্র পরীক্ষা করছে অন্য দেশের বিরুদ্ধে। এমনই দাবি সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাহুল সিংয়ের।

 

?ref_src=twsrc%5Etfw">July 4, 2025

সাম্প্রতিক ভারত-চীন সংঘাতে বেজিংয়ের অবস্থান ব্যাখ্যা করছেন জেনারেল সিং। তাঁর কথায়, "চিন নিজে সংঘাতে না জড়িয়ে পড়ে, প্রতিবেশী পাকিস্তানকে দিয়ে ভারতের উপর আঘাত হানতে চেয়েছিল। চীন পাকিস্তানকে ব্যবহার করছে। এটা ওদের পুরনো খেলা। নিজেদের পরীক্ষা, অস্ত্রের ক্ষমতা যাচাই- সবই তারা করছে পাকিস্তানকে দিয়ে।"

কেবল চিনই নয়, অপারেশন সিঁদুরে তুরস্কের ভূমিকার গুরুত্বও তুলে ধরেছেন উপ-সেনাপ্রধান। তাঁর দাবি, পাকিস্তানকে রাজনৈতিক ও গোয়েন্দা স্তরে সহায়তা করেছে তুরস্ক। 

অপারেশন সিঁদুর শুরু হয়েছিল ৭ মে। তার আগে, ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগামে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের গুলিতে ২৬ জন নিহত হন, তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক। এই ঘটনার জবাবেই শুরু হয় ভারতীয় সেনার প্রতিক্রিয়া।

চার দিনের বেশি দিন ধরে চলা সংঘাতে ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই ব্যবহার করে ড্রোন, যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, এবং ভারী গোলাবারুদ। জম্মু-কাশ্মীরের পুঞ্চ ও রাজৌরি জেলায় প্রচণ্ড আঘাত হানে পাকিস্তান। প্রাণ হারান অন্তত ১০ জন সাধারণ মানুষ। পালটা জবাবে ভারত ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে থাকা পরিকাঠামো নির্ভুলভাবে হামলা চালায়।

সেনার ডেপুটি চিফ অব স্টাফ জানান, এবার নাগরিক এলাকাগুলি বড় আঘাতের মুখে পড়েনি ঠিকই, কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য আরও শক্তিশালী এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম গড়ে তোলার প্রয়োজন রয়েছে।

শেষে ১০ মে, দু’পক্ষের মধ্যে সংঘাত প্রশমনের লক্ষ্যে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো হয়। ভারতের দাবি, এই চার দিনের অভিযানে অন্তত ১০০ জন জঙ্গিকে নিকেশ করা হয়েছে।

অপারেশন সিঁদুর প্রমাণ করেছে যে, পাকিস্তান সামনে থেকে লড়াই করলেও ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নেপথ্যের কারিগর চীন ও তুরস্ক। মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা (DIA)-এর ২০২৫ সালের একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে- ভারত চীনকে তার "প্রধান প্রতিপক্ষ" হিসেবে দেখে, যেখানে পাকিস্তানকে "পরিচালনার জন্য সহায়ক নিরাপত্তা সমস্যা" হিসেবে দেখা হয়ে থাকে।