আজকাল ওয়েবডেস্ক: গত মাসেই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করতে ব্রিটেন সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিমানবন্দরে পা রাখতেই একটি দৃশ্য নজর কেড়েছিল সকলের। প্রধানমন্ত্রীর ঠিক পিছনেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক মহিলা। পরণে কালো স্যুট এবং কানে ইয়ারপিস। ঠিকড়ে পড়ছে ব্যক্তিত্ব। দৃষ্টি তীক্ষ্ণ, মোদির সুরক্ষাই তাঁর আসল দায়িত্ব। মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায় সেই ছবি। কে এই মহিলা?

সেই মহিলা হলেন মণিপুরের একজন অগ্রণী অফিসার ইন্সপেক্টর আদাসো কাপেসা, যিনি ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। তিনি তাঁর রাজ্যের প্রথম মহিলা এবং সর্বপ্রথম যিনি প্রধানমন্ত্রীর সুরক্ষার জন্য নিবেদিত ভারতের শীর্ষস্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনী স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ (এসপিজি)-এ যোগদান করেছেন।

কাপেসা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে পরিচালিত কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী, সশস্ত্র সীমা বল (SSB) থেকে তাঁর যাত্রা শুরু করেছিলেন। বর্তমানে তিনি উত্তরাখণ্ডের পিথোরাগড়ে এসএসবি-র ৫৫তম ব্যাটালিয়নে কর্মরত। এসপিজি-তে প্রবেশের মাধ্যমে, তিনি দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর লিঙ্গগত বাধাগুলির মধ্যে একটি অতিক্রম করেছেন।

আরও পড়ুন: আমেরিকা এবং ইইউও ব্যবসা বন্ধ করেনি রাশিয়ার সঙ্গে, ভারতকে ‘অযথা’ নিশানা করা হচ্ছে, ট্রাম্পের শুল্কের হুমকির পাল্টা জবাব কেন্দ্রের

প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা দলে কাপেসার দায়িত্ব কেবল ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়েও বেশি। তাঁর উপস্থিতি ভারতীয় প্রতিরক্ষা এবং আধাসামরিক বাহিনীতে ক্রমশ মহিলাদের উপস্থিতি বৃদ্ধির প্রতীক। প্রধানমন্ত্রীর ব্রিটেন সফরের সময় তাঁর পাশে কাপেসার উপস্থিতি ছিল অগ্রগতির প্রতীক, যা সারা দেশের নারীদের মধ্যে গভীরভাবে অনুরণিত হয়েছিল। ঐতিহ্যগতভাবে এসপিজি ছিল সম্পূর্ণ পুরুষ ইউনিট। কাপেসা আনুষ্ঠানিকভাবে সেই বেড়া ভেঙে দিয়েছেন।

সোশ্যাল মিডিয়া তাঁকে নিয়ে প্রশংসা এবং গর্বের বার্তায় ভরে উঠেছে। অনেক ব্যবহারকারী তাঁকে একজন আদর্শ উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কাপেসা দেখিয়ে দিয়েছেন দৃঢ় সংকল্প, শৃঙ্খলা এবং দক্ষতা কী অর্জন করতে পারে। 

?ref_src=twsrc%5Etfw">July 26, 2025

স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ (এসপিজি) হল একটি উচ্চ প্রশিক্ষিত এবং নির্বাচিত বাহিনী যা ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং কিছু পরিস্থিতিতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং তাদের নিকটাত্মীয়দের ব্যক্তিগত সুরক্ষার দায়িত্বে থাকে। 

সদস্যরা খুব কাছ থেকে যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবিলা, গোয়েন্দা অভিযান, নজরদারি এবং জরুরি প্রতিক্রিয়ার উপর কঠোর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এটিকে ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সবচেয়ে কঠিন পদগুলির মধ্যে একটি।

কাপেসার এসপিজিতে যোগদান কেবল নারীদের অংশগ্রহণই নয়, বরং নেতৃত্ব ও ক্ষমতার এক নতুন রূপ কী হতে পারে তাও প্রকাশ করে। তাঁর উপস্থিতি প্রমাণ করে যে নারীরা প্রতিটি ক্ষেত্রে সমানভাবে কাজ করতে পারে।

প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় মোট পাঁচটি আলাদা আলাদা বলয় থাকে। প্রথম বলয় অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর সবচেয়ে কাছের বৃত্তের নিরাপত্তার দেখভাল করে এসপিজি। দ্বিতীয় বৃত্তের নিরাপত্তার দেখভালের ভার প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষীদের উপর। এসপিজি কম্যান্ডোদের সঙ্গেই তাঁদেরও প্রশিক্ষণ হয়। তৃতীয় বলয়ের দায়িত্ব ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড’ (এনএসজি)-এর। নিরাপত্তা বেষ্টনীর চতুর্থ ধাপে থাকেন নিরাপত্তা প্রদানের জন্য নিয়োজিত বিশেষ কর্মীরা। এ ছাড়াও তাদের সঙ্গেই থাকেন প্রধানমন্ত্রী যে রাজ্যে সফরে যাচ্ছেন সেই রাজ্যের নিরাপত্তা আধিকারিকরা। পঞ্চম তথা শেষ বেষ্টনীতে থাকে গোয়েন্দা কুকুর, কম্যান্ডো ও পুলিশের নিরাপত্তা সম্পন্ন গাড়ি। সেখানেই থাকে জ্যামার গাড়িও। সব ক’টিতেই সংযুক্ত থাকে বিধ্বংসী অস্ত্রশস্ত্রও।