আজকাল ওয়েবডেস্ক:নতুন করে বিতর্কে জড়ালেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং বর্ষীয়ান কূটনীতিক মণী শংকর আইয়ার। কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুরের নেতৃত্বে হওয়া ‘অপারেশন সিঁদুর’ কূটনৈতিক প্রচারমিশনকে নিশানা করে আইয়ার দাবি করেছেন, "এই প্রচার কোনওভাবেই ভারতের বার্তা বিশ্বকে ঠিকভাবে পৌঁছে দিতে পারেনি।" তাঁর মতে, থারুরের নেতৃত্বে যে ৩৩টি দেশ সফর করা হয়েছে, তার একটিও পাকিস্তানকে পাহালগাম হামলার জন্য দায়ী করেনি।

 

আইয়ার বলেন, "আমরাই কেবল পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলছি। কিন্তু আমাদের কাছে কোনও এমন প্রমাণ নেই যা বিশ্ব সমাজকে নিশ্চিতভাবে বোঝাতে পারে যে ওই হামলার পিছনে পাক-এজেন্সিগুলির হাত ছিল। জাতিসংঘ হোক বা আমেরিকা, কেউই ভারতীয় অবস্থানকে প্রকাশ্যে সমর্থন করেনি।"

 

এমন মন্তব্যে দল বিরক্ত। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, “এই মন্তব্যগুলিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয়। উনি আমাদের দলের সদস্য নন। এমন বক্তব্য দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করে।”

 

উল্লেখ্য, ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পাহালগামের বাইসারান উপত্যকায় পর্যটক-ভরতি এলাকায় ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (TRF) নামের লস্কর-ই-তইবার সহায়ক সংগঠনের সন্ত্রাসবাদীরা হামলা চালায়। প্রাণ হারান ২৬ জন নিরীহ নাগরিক, যাঁদের মধ্যে ২৫ জনই পর্যটক।

 

এর প্রেক্ষিতে ভারত ৬-৭ মে রাতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামক এক সুনির্দিষ্ট বিমান হামলায় পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর এবং সীমান্তবর্তী এলাকার ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয়। ভারতীয় বায়ুসেনার অভিযানে প্রায় ১০০ জনেরও বেশি সন্ত্রাসবাদীর মৃত্যু হয়েছে বলে সেনা সূত্রে দাবি।

 

এরপর কেন্দ্র সরকার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৭টি বহুদলীয় প্রতিনিধিদল পাঠায়। উদ্দেশ্য ছিল— ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরা এবং পাকিস্তানের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সহানুভূতি জোগাড় করা। এর মধ্যে একটি দল নেতৃত্ব দেন কংগ্রেস সাংসদ ও প্রাক্তন রাষ্ট্রপুঞ্জ কূটনীতিক শশী থারুর।

 

এই দলে ছিলেন জামুমুখী সারফরাজ আহমদ (জেএমএম), গান্তি হরীশ মাধুর বলায়োগী (টিডিপি), বিজেপি সাংসদ শশাঙ্ক মণি ত্রিপাঠী, ভবানীশঙ্কর কলিতা, তেজস্বী সূর্য এবং শিবসেনার মিলিন্দ দেওরা। তাঁরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ বিভিন্ন দেশে ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী বার্তা পৌঁছে দেন এবং জানান, ভারত যুদ্ধ চায় না, তবে ভবিষ্যতে এমন হামলার প্রত্যুত্তরে আরও কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

 

বিশ্বে বার্তা পাঠানোর কৌশল হিসেবে এই উদ্যোগকে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল সমর্থন করলেও মণী শংকর আইয়ার প্রশ্ন তুলেছেন এই প্রচারের কার্যকারিতা নিয়েই। তিনি বলেছেন, "কলম্বিয়ার মতো একটি দেশ প্রথমে পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছিল। পরে শশী থারুরের তীব্র প্রতিবাদে সেই অবস্থান থেকে তারা সরে আসে। তবে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া ছিল অপ্রতুল।"

 

তবে কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই মিশনের রাজনৈতিক বহুত্ববাদ এবং প্রাক্তন কূটনীতিকদের যুক্ত করা ভারতের অবস্থানকে আন্তর্জাতিক মহলে স্বচ্ছতা ও ধার দিয়েছে। ৫০ জনেরও বেশি রাজনীতিক ও প্রাক্তন রাষ্ট্রদূতের সমন্বয়ে গঠিত এই মিশনের নেতৃত্বে ছিলেন বিজেপির রবিশঙ্কর প্রসাদ, বৈজয়ন্ত পাণ্ডা, কংগ্রেসের শশী থারুর, জেডিইউ-র সঞ্জয় ঝা, ডিএমকে-র কানিমোঝি ও এনসিপি(এসপি)-র সুপ্রিয়া সূলে।

 

শেষ পর্যন্ত, মণী শংকর আইয়ারের এই মন্তব্য শুধু কংগ্রেস নয়, সমস্ত কূটনৈতিক মহলেও অস্বস্তি তৈরি করেছে। সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে দলীয় রাজনীতি নয়, বরং জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন— এটাই অধিকাংশ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের বার্তা।