আজকাল ওয়েবডেস্ক: আবারও নীল ড্রাম রহস্য। এবার ঘটনাস্থল রাজস্থান। নীল ড্রামের মধ্যে থেকে উদ্ধার এক যুবকের পচাগলা দেহ। খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না তাঁর স্ত্রীর। ছাদে কাপড় শুকাতে গিয়েছিলেন বাড়ির মালিক। পচা দুর্গন্ধ পেয়েই পুলিশকে ডাকেন তিনি। সেই নীল ড্রামের ঢাকনা খুলতেই সকলে শিউরে উঠলেন। কবে যুবককে খুন করা হয়েছে, খুনের নেপথ্যে কী কারণ, তা ঘিরে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে রাজস্থানের আলওয়ারে। রবিবার পুলিশ জানিয়েছে, তিজারা জেলায় আদর্শ কলোনিতে। ওই এলাকার একটি বাড়ির ছাদে নীল ড্রামের মধ্যে থেকে এক ব্যক্তির পচাগলা দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ওই বাড়ির মালিক, এক বৃদ্ধ মহিলা ছাদে কাজ করতে উঠেছিলেন। কিন্তু পচা দুর্গন্ধ পেয়েই তড়িঘড়ি করে নীচে নেমে আসেন। এরপরই তিনি পুলিশে খবর দেন।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত যুবকের নাম, হংসরাজ। তিনি আদতে উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা ছিলেন। ঘটনার দিন থেকে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানরা নিখোঁজ রয়েছেন। ওই বাড়ির ছাদে একটি নীল ড্রামের মধ্যে ছিল যুবকের পচাগলা দেহ। নীল ড্রামের উপরে ছোট ছোট পাথর রাখা ছিল। সম্ভবত, যাতে দুর্গন্ধ বাইরে না বেরোতে পারে।
পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, ওই এলাকায় গত দেড় মাস ধরে বসবাস করছিলেন হংসরাজ। ওই বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকতেন। ঘটনার পর থেকে স্ত্রী ও সন্তানদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ইতিমধ্যেই দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ফরেন্সিক টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। কবে থেকে নীল ড্রামের মধ্যে দেহটি ছিল, তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: সপ্তাহের শুরুতেই কমল সোনার দাম, আজ কলকাতায় হলুদ ধাতুর দর না জানলে পস্তাবেন
প্রসঙ্গত, চলতি বছরেই মার্চ মাসে নীল ড্রামে দেহ লুকিয়ে রাখার ঘটনা ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল।। ২০১৬ সালে সৌরভ রাজপুত ও মুসকান রাস্তোগি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। প্রেমের সম্পর্ক পরিণতি পাওয়ায় খুব খুশি ছিলেন দু'জনে। স্ত্রীর সঙ্গে আরও সময় কাটানোর জন্য মার্চেন্ট নেভির চাকরি ছেড়ে বাড়িতে চলে আসেন। কিন্তু পারিবারিক অশান্তির কারণে এরপর বাড়ি ছেড়ে মুসকানকে নিয়ে ভাড়াবাড়িতে থাকতে শুরু করেন সৌরভ। ২০১৯ সালে ফুটফুটে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন মুসকান। কিন্তু সেই সুখের মুহূর্ত বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। দিন কয়েক পরেই সৌরভ জানতে পারেন, তাঁর বন্ধু সাহিলের সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত মুসকান।
সেই সম্পর্ক ঘিরে অশান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছয়। ডিভোর্সের পথে এগিয়েও, সন্তানের কথা ভেবে পিছিয়ে আসেন সৌরভ। ফের নেভির চাকরি নিয়ে ২০২৩ সালে ভিন দেশে চলে যান। মেয়ের ছ'বছরের জন্মদিন উপলক্ষে ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশে ফেরেন সৌরভ। এর মাঝেই সাহিল ও মুসকান আরও গভীর প্রেমে ডুবে যান। সৌরভ দেশে ফেরার পরেই তাঁকে খুনের পরিকল্পনা করেন।
৪ মার্চ খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে সৌরভকে খাওয়ান। অচৈতন্য অবস্থায় সৌরভকে কুপিয়ে খুন করেন মুসকান ও সাহিল। এরপর মৃতদেহ ১৫ টুকরো করে, ড্রামের মধ্যে ভরে সিমেন্ট দিয়ে আটকে দেন। কিছুদিন পর প্রতিবেশীরা সৌরভের খোঁজখবর জিজ্ঞেস করতেই, দু'জনে বলেন, তিনি পাহাড়ে বেড়াতে গিয়েছেন।
খুনের বিষয়টি লুকিয়ে রাখতে এরপর সৌরভের ফোন নিয়ে মানালিতে বেড়াতে যান সাহিল ও মুসকান। সেখানে গিয়ে সৌরভের ফোন থেকে ছবি শেয়ার করেন। কিন্তু সৌরভের সঙ্গে দীর্ঘদিন ফোনে কথা না হওয়ায় থানায় অভিযোগ দায়ের করে পরিবার। তখনই পুলিশ তদন্ত শুরু করে। স্ত্রী ও বন্ধুকে আটক করে জেরা শুরু করে তারা। পুলিশি জেরায় খুনের ঘটনাটি স্বীকার করে নেন তাঁরা। খুনের ১৪ দিন পর সেই ড্রাম থেকে দেহের টুকরোগুলো উদ্ধার করা হয়।
