আজকাল ওয়েবডেস্ক: লোকসভায় কর্মীদের কাজের সময়সীমা, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, নারীর স্বাস্থ্যসুবিধা এবং মৃত্যুদণ্ড বিলোপ–সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রাইভেট মেম্বার বিল পেশ করা হয়। সাধারণত, লোকসভা ও রাজ্যসভার সদস্যরা যেসব ইস্যুকে আইন প্রণয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন, সেই বিষয়ে নিজেরা বিল আনতে পারেন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকার পক্ষের মতামত শোনার পর এসব বিল পরে প্রত্যাহার করা হয়। তবুও এসব প্রস্তাবের মাধ্যমেই সংসদে নীতি-আলোচনার নতুন দিক উন্মোচিত হয়।


সবচেয়ে আলোচিত বিলগুলির মধ্যে ছিল এনসিপি সাংসদ সুপ্রিয়া সুলের প্রস্তাবিত ‘রাইট টু ডিজকানেক্ট বিল, ২০২৫’। এই বিল কর্মীদের অধিকার রক্ষায় একটি Employees’ Welfare Authority গঠনের কথা বলে। বিল অনুসারে, সরকারি ও বেসরকারি— সকল কর্মচারী অফিসের কাজের সময়সীমা শেষে বা ছুটির দিনে কাজ-সংক্রান্ত ফোন বা ইমেলের জবাব দিতে বাধ্য থাকবেন না।

 আধুনিক কর্মসংস্কৃতির অতিরিক্ত চাপ এবং ‘অলওয়েজ অন’ সংস্কৃতি থেকে মুক্তি দিতেই এই উদ্যোগ, দাবি করেন সুপ্রিয়া সুলে। বিলটিতে কর্মীদের এমন যোগাযোগ এড়িয়ে যাওয়ার অধিকার এবং তা নিয়ে কোনো চাপ বা শাস্তির নিষেধাজ্ঞাও প্রস্তাব করা হয়েছে।


নারীর স্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং কর্মক্ষেত্রে সহায়তার লক্ষ্যে আরও দুটি বিল পেশ হয়। কংগ্রেস সাংসদ কাদিয়াম কাভ্যা প্রস্তাব করেন ‘মেনস্ট্রুয়াল বেনিফিটস বিল, ২০২৪’, যাতে কর্মরত নারীদের মাসিকের সময় বিশেষ সুবিধা, উপযুক্ত কর্মপরিবেশ এবং প্রয়োজনীয় স্যানিটারি সুবিধা নিশ্চিত করার আইনি কাঠামো তৈরির কথা বলা হয়েছে।


অন্যদিকে এলজেপি সাংসদ শম্ভাবী চৌধুরী একটি বিল পেশ করেন, যা কর্মরত নারীদের পাশাপাশি মহিলা শিক্ষার্থীদের জন্যও পরিশোধিত মাসিক ছুটি, স্বাস্থ্যসুবিধা এবং পরিচ্ছন্ন স্যানিটেশন ব্যবস্থার নিশ্চয়তা দিতে চায়।


চিকিৎসাশিক্ষায় প্রবেশিকা পরীক্ষা নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্ক নতুন মাত্রা পেল কংগ্রেস সাংসদ মানিকম টাগোরের প্রস্তাবিত বিলের মাধ্যমে। তিনি তামিলনাড়ুকে এনইইটি পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য একটি নতুন বিল পেশ করেন। উল্লেখ্য, গত মাসেই তামিলনাড়ু সরকার সুপ্রিম কোর্টে যায়, কারণ রাষ্ট্রপতি রাজ্যের এনইইটি অব্যাহতি-সংক্রান্ত আইনে সম্মতি দিতে অস্বীকার করেছিলেন।


একই দিনে ডিএমকে সাংসদ কানিমোঝি করুণানিধি দেশে মৃত্যুদণ্ড বিলোপ করার একটি বিল উপস্থাপন করেন। যদিও বারবার মানবাধিকার সংগঠন এবং বিশেষজ্ঞ মহল মৃত্যুদণ্ড তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার দীর্ঘদিন ধরেই কিছু ক্ষেত্রে এটি অপরিহার্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা বলে মনে করে আসছে। প্রায় এক দশক আগে আইন কমিশনও মৃত্যুদণ্ড পর্যায়ক্রমে তুলে দেওয়ার সুপারিশ করেছিল, সন্ত্রাসবাদ-সংক্রান্ত অপরাধ ছাড়া অন্য সব ক্ষেত্রে।


সাংসদ বিশালদাদা প্রকাশবাপু পাটিল সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে ‘জার্নালিস্ট বিল, ২০২৪’ পেশ করেন। এতে সাংবাদিকদের ওপর হামলা রোধ, তাঁদের নিরাপত্তা এবং সম্পত্তির সুরক্ষার জন্য কঠোর বিধান সংযোজনের প্রস্তাব রয়েছে।


সংসদের এদিনের অধিবেশন দেখাল— যদিও প্রাইভেট মেম্বার বিল বিরল ক্ষেত্রেই আইন হয়, তবু দেশের গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক, পেশাগত ও মানবাধিকার ইস্যুগুলো এই বিলগুলির মাধ্যমে সামনে আসছে এবং ভবিষ্যতের নীতি নির্ধারণে তা উল্লেখযোগ্য আলোচনার সূত্র তৈরি করছে।