আজকাল ওয়েবডেস্ক: নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে আদানি গোষ্ঠীকে আর্থিকভাবে সহায়তা করার অভিযোগের মাঝেই সংসদে স্বীকার করল কেন্দ্র—রাষ্ট্রায়ত্ত লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন (LIC) এখন পর্যন্ত আদানি গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থায় মোট ৪৮,২৮৪.৬২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে ৩৮,৬৫৮.৮৫ কোটি টাকা শেয়ারবাজারে (ইকুইটি) এবং ৯,৬২৫.৭৭ কোটি টাকা ঋণ আকারে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া LIC সম্প্রতি আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন (APSEZ)-এর নিরাপদ NCD-তে আরও ৫,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।
এই তথ্য সংসদে লিখিত প্রশ্নের জবাবে দেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তবে LIC কোন কোন বেসরকারি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছে তার সম্পূর্ণ তালিকা সরকার দিতে অস্বীকার করেছে। কেন্দ্র জানিয়েছে—এই তথ্য প্রকাশ করা "বাণিজ্যিকভাবে যুক্তিসঙ্গত নয়" এবং তা LIC-এর আর্থিক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
কংগ্রেস সাংসদ মহম্মদ জাওয়েদ এবং তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রা LIC-এর এই বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণ, স্বচ্ছতা, ঝুঁকি মূল্যায়ন এবং সরকারের সম্ভাব্য হস্তক্ষেপ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তাদের দাবি—আদানি গোষ্ঠী তদন্ত ও বাজার অস্থিরতার মধ্যে থাকা অবস্থায় LIC-এর এমন বিপুল বিনিয়োগ পলিসিহোল্ডারদের টাকাকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
সরকার অবশ্য দাবি করেছে—LIC-এর বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত স্বতন্ত্র এবং অর্থ মন্ত্রক বা DFS থেকে কোনও নির্দেশ বা উপদেশ দেওয়া হয়নি। কেন্দ্র জানায়, LIC তার বিনিয়োগ Insurance Act, 1938, এবং IRDAI, RBI ও SEBI-এর নিয়মে করে।
তবে সরকার বিরোধীদের অভিযোগ পুরোপুরি নস্যাৎ করতে পারেনি, কারণ মাত্র দুই মাস আগেই ওয়াশিংটন পোস্ট-এর তদন্ত রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল—অর্থ মন্ত্রক, DFS, নীতি আয়োগ এবং LIC মিলিতভাবে আদানি গোষ্ঠীর জন্য একটি আর্থিক “রহস্য পরিকল্পনা” তৈরি করেছিল, যার মাধ্যমে LIC এককভাবে আদানি পোর্টস-এর ৫৮৫ মিলিয়ন ডলারের বন্ড ইস্যু ফান্ড করে।
সংসদে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী LIC বর্তমানে আদানির সাতটি প্রতিষ্ঠান—আদানি এন্টারপ্রাইজেস, আদানি টোটাল গ্যাস, আদানি গ্রিন এনার্জি, আদানি এনার্জি সলিউশনস, আদানি পোর্টস অ্যান্ড SEZ, আম্বুজা সিমেন্ট এবং ACC—এ বিনিয়োগ বজায় রেখেছে। সরকার জানিয়েছে—LIC মূলত NSE ও BSE-র শীর্ষ ৫০০ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে এবং Nifty-50 কোম্পানিতে LIC-এর মোট বিনিয়োগ এখন ৪,৩০,৭৭৬.৯৭ কোটি টাকা, যা তাদের পূর্ণ ইকুইটি বিনিয়োগের প্রায় ৪৬%।
সরকার দাবি করেছে, LIC-এর সব বিনিয়োগ নিয়মিত অডিট, পর্যবেক্ষণ ও তদারকির মধ্যেই হয় এবং সরকারের সরাসরি কোনও নজরদারি বা নির্দেশ নেই। তবে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছে—যদি বিনিয়োগ স্বাধীনভাবে হয়, তবে কেন বিনিয়োগের সম্পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করা যাচ্ছে না? আর তদন্তে থাকা একটি বিতর্কিত কর্পোরেট গোষ্ঠীতে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থার এত বড় বিনিয়োগ কি জনগণের সঞ্চয়কে বিপদের সামনে ঠেলে দিচ্ছে না?
এই প্রশ্নগুলির উত্তর এখনো অস্পষ্ট—কিন্তু রাজনৈতিক ও আর্থিক বিতর্ক যে আরও তীব্র হবে, তা স্পষ্ট।
