আজকাল ওয়েবডেস্ক: ‘এক মাসের মধ্যে হিন্দি শিখুন, নইলে এলাকা ছাড়তে হবে।’ দিল্লির একটি পার্কে এক আফ্রিকান নাগরিককে ঠিক এই ভাষাতেই হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল বিজেপি কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ উঠেছে, বিজেপি কাউন্সিলর রেণু চৌধুরীর বিরুদ্ধে। গোটা ঘটনার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
সমালোচকদের অভিযোগ, প্রকাশ্য স্থানে এই ধরনের আচরণ একেবারেই কাম্য নয়। এই ধরনের ঘটনা কার্যত বিদেশি বিদ্বেষের উদাহরণ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, বিজেপি কাউন্সিলর রেণু চৌধুরী একটি পার্কে কয়েকজনের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়ছেন।
জোর গলায় হিন্দিতে কথা বলতে বলতে তিনি এক আফ্রিকান নাগরিককে প্রশ্ন করেন, ভারতে থাকার পরও কেন তিনি হিন্দি শেখেননি।
এরপর তিনি হুঁশিয়ারি দেন, এক মাসের মধ্যে হিন্দি না শিখলে সংশ্লিষ্ট পার্কটি তাঁর জন্য ফল ভাল হবে না। ভিডিওতে আরও দেখা যায়, কাউন্সিলর রেণু চৌধুরী অভিযোগ করছেন যে উপস্থিত ব্যক্তিরা বিষয়টিকে হালকাভাবে নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, এটি হাসি-ঠাট্টার বিষয় নয়। এক পর্যায়ে তিনি মন্তব্য করেন, যারা ভারতে থেকে উপার্জন করছেন, তাঁদের হিন্দি শেখা উচিত। ভিডিওর আরেক অংশে তাঁকে ক্যামেরার বাইরে কাউকে আঙুল দেখিয়ে পার্কের নিয়মকানুন নিয়ে সতর্ক করতে দেখা যায়।
তিনি বলেন, পার্ক সন্ধ্যা ৮টার মধ্যে বন্ধ করা উচিত এবং সেখানে কোনও অপরাধমূলক কার্যকলাপ হলে উপস্থিত ব্যক্তিদেরই দায় নিতে হবে।
এই ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। অনেকেই কাউন্সিলরের আচরণকে ‘বুলিং’ এবং একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির জন্য এই ধরনের মন্তব্য অনুপযুক্ত বলে কমেন্ট করেন। এক ব্যবহারকারী লেখেন, জনপ্রিয়তা ও ক্ষমতা দেখানোর জন্যই এই ধরনের আচরণ করা হয়েছে।
অনেকে আবার বলেন, এই ঘটনা ভারতের সংবিধানকে ক্ষুণ্ণ করে। আর এক ব্যক্তির অভিযোগ, এই ধরনের ঘটনা সমাজের জনজীবনের মান সম্পর্কেও অবগত করে।
তবে সমালোচনার মুখে রেণু চৌধুরী ঘটনার ব্যাখ্যা করেন। এমনকী, নিজের অবস্থান স্পষ্ট করার চেষ্টা করেন তিনি। তিনি জানান, ওই আফ্রিকান নাগরিক প্রায় ১৫ বছর ধরে ওই এলাকায় বসবাস করছেন।
পেশায় তিনি একজন বেসরকারি ফুটবল কোচ হিসেবে কাজ করেন। তাঁর দাবি, যেদিন ভিডিওটি করা হয়, সেদিন মাঠে প্রায় ২০ জন আফ্রিকান নাগরিক উপস্থিত ছিলেন।
চৌধুরীর বক্তব্য, দিল্লি পুরনিগমের অধিকাংশ কর্মী ইংরেজি বোঝেন না। দীর্ঘদিন এলাকায় থাকার পরও বিদেশি কোচরা ন্যূনতম হিন্দি না বোঝায় যোগাযোগে সমস্যা ও ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, তাঁর এলাকার বাসিন্দারা পার্ক ও আশপাশে মাদক সংক্রান্ত কার্যকলাপ নিয়ে একাধিকবার অভিযোগ করেছেন, যার কারণেই তিনি সেখানে গিয়েছিলেন।
কাউন্সিলরের দাবি, কাউকে হুমকি দেওয়ার কোনও উদ্দেশ্য তাঁর ছিল না; যোগাযোগ সহজ করার জন্যই তিনি হিন্দি শেখার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, রেণু চৌধুরী পূর্ব দিল্লির পাটপড়গঞ্জ এলাকার ওয়ার্ড নম্বর ১৯৭ থেকে নির্বাচিত হয়ে দিল্লি পুরনিগমের কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
