আজকাল ওয়েবডেস্ক: নাসা জানিয়েছে ২০২৫ সালে প্রশান্ত মহাসাগরে একটি দুর্বল ‘লা নিনা’ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। লা নিনা হল এল নিনো–সাদার্ন অসিলেশন চক্রের একটি পর্যায়, যেখানে মধ্য ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের পৃষ্ঠের জল স্বাভাবিকের তুলনায় ঠান্ডা হয়ে যায়। নাসার বিজ্ঞানীদের মতে, এবারের লা নিনা শক্তিশালী নয়, তবে এর প্রভাব বিশ্বব্যাপী আবহাওয়ার ধরণে সূক্ষ্ম কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে।
লা নিনা সাধারণত বিশ্বের তাপমাত্রা কিছুটা কমাতে সাহায্য করে। শক্তিশালী এল নিনোর পর দুর্বল লা নিনা আসার ফলে ২০২৫ সালে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা সামান্য স্বস্তি পেতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিচ্ছেন—এটি বিশ্ব উষ্ণায়নের দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতাকে থামাবে না। বরং এটি সাময়িকভাবে তাপমাত্রার বৃদ্ধি কিছুটা কম করতে পারে।
আবহাওয়ার দিক থেকে, লা নিনা সাধারণত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতীয় উপমহাদেশে তুলনামূলকভাবে বেশি বৃষ্টিপাতের সঙ্গে যুক্ত। ২০২৫ সালের দুর্বল লা নিনা ভারতে মৌসুমি বৃষ্টিকে কিছুটা সহায়তা করতে পারে, যদিও অতিবৃষ্টি বা চরম বন্যার সম্ভাবনা শক্তিশালী লা নিনার মতো ততটা বেশি নয়। অন্যদিকে, দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাংশে অপেক্ষাকৃত শুষ্ক পরিস্থিতি দেখা যেতে পারে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার ক্ষেত্রেও লা নিনার একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। লা নিনার সময় শক্তিশালী বাণিজ্যিক বায়ু পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে ঠেলে দেয়, যার ফলে পূর্ব প্রশান্তে সমুদ্রপৃষ্ঠ কিছুটা নিচে নামে এবং পশ্চিম অংশে সামান্য বাড়ে। ২০২৫ সালের দুর্বল লা নিনা এই পরিবর্তনকে সীমিত মাত্রায় প্রভাবিত করবে।
শীতকালীন আবহাওয়ার পূর্বাভাসেও লা নিনার প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ। উত্তর গোলার্ধে লা নিনার সময় সাধারণত উত্তর যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় ঠান্ডা ও তুষারপাতের প্রবণতা বাড়ে, আর দক্ষিণ যুক্তরাষ্ট্রে তুলনামূলকভাবে উষ্ণ ও শুষ্ক শীত দেখা যায়। ইউরোপে এর প্রভাব তুলনামূলকভাবে দুর্বল হলেও, উত্তর ইউরোপে ঠান্ডা হাওয়ার প্রবাহ বাড়তে পারে।
নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন, যেহেতু এবারের লা নিনা দুর্বল, তাই গরম আবহাওয়ার সমস্যা মাঝারি মাত্রার হতে পারে। তবুও কৃষি, জলসম্পদ এবং দুর্যোগ প্রস্তুতির ক্ষেত্রে দেশগুলিকে সতর্ক থাকা জরুরি। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের যুগে দুর্বল লা নিনার এই চক্রও স্থানীয় পর্যায়ে বড় প্রভাব ফেলতে সক্ষম। এর বিরাট প্রভাব পড়তে পারে আগামী বছরেও। সেখানেও আবহাওয়ার বড় ধরণের পরিবর্তন হতে পারে। সেই দিকেই ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী।
