আজকাল ওয়েবডেস্ক: কেরালার একাধিক স্কুলে বড়দিনের (ক্রিসমাস) উদ্‌যাপন বাতিল হওয়ার ঘটনাকে ঘিরে তীব্র রাজনৈতিক ও সামাজিক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ভি. শিবনকুট্টি অভিযোগ করেছেন, ডানপন্থী সংগঠনগুলির, বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) চাপের মুখে পড়ে স্কুল কর্তৃপক্ষগুলি এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রীর দাবি, একাধিক স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে বছরের শেষের উৎসব উপলক্ষে যে অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছিল, তা পরে ফেরত দিতে হয়েছে। কারণ হিসেবে উঠে এসেছে আরএসএস-ঘনিষ্ঠ গোষ্ঠীগুলির হুমকি ও চাপ।

“বিভিন্ন অভিভাবক, ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক আমার কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। সরকার বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। যেসব স্কুল কর্তৃপক্ষ আরএসএসের হুমকির কাছে নতি স্বীকার করে বড়দিনের উদ্‌যাপন বাতিল করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে,” বলেন শিবনকুট্টি।

শিক্ষামন্ত্রী আরও অভিযোগ করেন, আরএসএস পরিকল্পিতভাবে খ্রিস্টান ও মুসলিম সম্প্রদায়-সহ সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব পালনে বাধা সৃষ্টি করছে। তাঁর মতে, “আরএসএস ছুটির দিনগুলিকে ধর্মীয় রঙে রাঙিয়ে সমাজে সাম্প্রদায়িক বিভাজন সৃষ্টি করতে চাইছে। তারা ভুলভাবে ভেবেছে, কেরালার স্কুলগুলি তাদের বিভাজনমূলক রাজনীতির জন্য সহজ লক্ষ্য।”

শিবনকুট্টি বলেন, কেরালায় উত্তর ভারতের ‘সংখ্যালঘু-বিরোধী’ মডেল প্রয়োগ করার চেষ্টা চলছে। তবে রাজ্য সরকার এই ধরনের সমস্ত প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াবে।

“কোনও মৌলবাদী গোষ্ঠী যদি স্কুলগুলিকে ধর্মীয় বিভাজনের দমবন্ধ করা খাঁচায় পরিণত করতে চায়, সরকার তা বরদাস্ত করবে না। শিশুদের ছোটবেলা থেকেই ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে শিক্ষিত করা মানবিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ গঠনের ভিত্তি,” স্পষ্ট ভাষায় বলেন শিক্ষামন্ত্রী।

এই বিতর্ক এমন এক সময়ে সামনে এল, যখন কেরালার ডাক বিভাগে বড়দিনের অনুষ্ঠান বাতিল হওয়ার ঘটনা রাজ্যজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। জানা গেছে, আরএসএস-ঘনিষ্ঠ ভারতীয় পোস্টাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার্স এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (BPAOEU) বড়দিন ও নববর্ষের অনুষ্ঠানে ‘আরএসএস গণগীতম’ গাওয়া এবং গণপতি স্তোত্র অন্তর্ভুক্ত করার দাবি তোলে।

এই প্রস্তাবে ডাক বিভাগের বহু কর্মী আপত্তি জানান। তাঁদের মতে, বড়দিনের অনুষ্ঠানে নির্দিষ্ট ধর্মীয় সংগঠনের সঙ্গীত ও হিন্দু দেবতার স্তোত্র অন্তর্ভুক্ত করা ধর্মনিরপেক্ষতার পরিপন্থী। শেষ পর্যন্ত বিরোধের জেরে ১৮ ডিসেম্বর কেরালার বিভিন্ন পোস্ট অফিসে যে বড়দিনের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল, তা সম্পূর্ণভাবে বাতিল করে দেওয়া হয়।

কেরালা দীর্ঘদিন ধরেই ধর্মীয় সহাবস্থান ও ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতির জন্য পরিচিত। স্কুলে বড়দিন, ঈদ বা ওনামের মতো উৎসব উদ্‌যাপনকে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখা হয়। এই প্রেক্ষাপটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি দপ্তরে ধর্মীয় উৎসব ঘিরে বাড়তে থাকা বিতর্ক রাজ্যের সামাজিক পরিসরে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

রাজ্য সরকার স্পষ্ট করে জানিয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কোনওভাবেই সাম্প্রদায়িক রাজনীতির হাতিয়ার হতে দেওয়া হবে না। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক তদন্ত ও প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ চলবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।