আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাংলা ভাষা নিয়ে এখন বিতর্কের শেষ নেই। সাহিত্য-সংস্কৃতি-ভাষা, সবকিছু নিয়ে রাজনীতির চর্চা। একপক্ষ বলছেন এক, এক পক্ষ তা খণ্ডাতে গিয়ে বলছে আর-এক। তবে এই বিতর্কের আঁচ সবথেকে বেশি বাড়িয়েছিলেন বিজেপির অমিত মালব্য। বাংলা ভাষা আছে কি নেই, সেই অস্বিত্ব নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন তিনি। অন্য এক পক্ষ রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-গীতাঞ্জলিকে প্রামাণ্য তথ্য হিসেবে তুলে ধরে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। তবে ভারতের স্বাধীনতা দিবসের দিন নোবেল কর্তৃপক্ষ যে তথ্য তুলে ধরেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, তা যেন এই হাজার বিতর্কের উপর শান্তির প্রলেপ।

কী এমন বলা হয়েছে তাতে? যে কারণে এই বিস্তারিত আলোচনা? ১৫ আগস্ট, অর্থাৎ ভারতের স্বাধীনতা দিবসের দিন, নোবেল কর্তৃপক্ষ 'নোবেল প্রাইজ' অ্যাকাউন্ট থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবি পোস্ট করে। তাতে লেখা হয়, ভারতের জাতীয় সঙ্গীত হল 'জন গণ মন', যা 'অরিজিনালি কম্পোজড' অর্থাৎ লেখা-সুর দেওয়া হয়েছিল বাংলা ভাষায়। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ভাষাতেই তা করেন। তিনি ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন, সেই তথ্যও উল্লেখ করা হয়েছে ছবির ক্যাপশনে। একই সঙ্গে একেবারে শেষে উল্লেখ করা হয়েছে, 'ছবি: ঠাকুরের জন গণ মন-এর ইংরেজি অনুবাদ।' অর্থাৎ ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের ইংরেজি অনুবাদের ছবি, যে অনুবাদটিও স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ করেছিলেন। 

ওই পোস্টে বহু মানুষ নিজেদের মতামত জানিয়েছেন। কেউ লিখেছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কেবল ভারতের নয়, আরও এক দেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা। কেউ কেউ আবার সেটি রবীন্দ্রনাথেরই করা ইংরেজি অনুবাদ কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, বেশিরভাগ মানুষ সেখানে মনে করিয়ে দিয়েছেন অমিত মালব্যর মন্তব্য। 

আরও পড়ুন: প্রথমবার চাকরিতে ঢুকলেই মিলবে মোটা অঙ্কের টাকা! স্বাধীনতা দিবসে যুবক-যুবতীদের জন্য বিরাট ঘোষণা মোদির

কী বলেছিলেন অমিত মালব্য? আগস্টের একেবারে শুরুতেই বাংলাভাষীদের উপর লাগাতার আক্রমণ-প্রতিবাদের আবহেই বাংলা ভাষাকে বাংলাদেশি তকমা দিয়ে চিঠি লিখে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে দিল্লি পুলিশ। আর দিল্লি পুলিশের মন্তব্যের সাফাই দিতে গিয়েই আরও জট পাকিয়ে ফেলেন বিজেপির আইটি সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত অমিত মালব্য। তিনি একটি পোস্টে লেখেন, 'দিল্লি পুলিশ অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করতে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছে। এখানে 'বাংলাদেশি ভাষা' বলতে তারা বোঝাতে চেয়েছে এমন একধরনের ভাষার রূপ, যার উপভাষা, ব্যাকরণ এবং উচ্চারণগত বৈশিষ্ট্য পশ্চিমবঙ্গের বাংলা ভাষার থেকে অনেকটাই আলাদা। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের সরকারিভাষা শুধু ভিন্ন উচ্চারণেই নয়, বরং সেখানে এমন কিছু উপভাষা ব্যবহৃত হয়, যেমন সিলেটি, যা ভারতীয় বাঙালিদের কাছে কার্যত বোধগম্যই নয়।' এখানেই শেষ নয়, তিনি আরও বলেন, 'বাংলা ভাষা বলে এমন কোনও একক ভাষা নেই যা সমস্ত ভিন্নতা ঢেকে দেয়। ‘বাঙালি’ মূলত শব্দটি জাতিগত পরিচয় বোঝায়, ভাষাগত ঐক্য নয়। সুতরাং দিল্লি পুলিশ যখন 'বাংলাদেশি ভাষা' শব্দটি ব্যবহার করে, তখন সেটা অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ভাষাগত বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করার জন্যই। বাংলা ভাষার ভারতীয় সংস্করণ সম্পর্কে কোনো বিরূপ মন্তব্য নয়।'

 

অমিত-মন্তব্যে বিস্তর জলঘোলা হয়। যদিও পরিস্থিতি বুঝে, বাইশে শ্রাবণ, অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুদিনে তিনি একটি লম্বা পোস্ট দেন। লেখেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা, চিন্তা ভাবনা, কীভাবে দেশ এবং বিশ্বের মানুষকে প্রভাবিত করেছে। ভারতের জাতীয় সঙ্গীত, জন গণ মন, কীভাবে মানুষের মনে দেশপ্রেম জাগত করে। তারপরেই লিখেছেন, ‘সম্ভবত তাঁর সবচেয়ে বড় অবদান ছিল বাংলা ভাষাকে আজ দেশে এবং বিদেশে উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছেন।‘ ওই পোস্টেই আরও লেখেন, '‘এটি ভারতের দ্বিতীয় সর্বাধিক কথ্য ভাষা এবং দেশের একটি সরকারী ভাষা; বিশ্বব্যাপী, এটি দশটি সর্বাধিক কথ্য ভাষার মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। গদ্য এবং কবিতা উভয়ের মাধ্যমেই, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলাকে এমন একটি সাহিত্যিক সমৃদ্ধি প্রদান করেছেন যা সর্বজনীনভাবে অনুরণিত হয়। তাঁর রচিত সঙ্গীত ভাষাগত এবং ভৌগোলিক বাধা অতিক্রম করে- এর আবেদন কালজয়ী এবং সর্বজনীন।‘ 

নোবেল কর্তৃপক্ষ জন গন মন নিয়ে তথ্য সামনে আনতেই, ফের তীব্র কটাক্ষ ধেয়ে যাচ্ছে অমিত মালব্যর দিকেই।