আজকাল ওয়েবডেস্ক: নিত্যদিন দাম্পত্য কলহ। অশান্তির জেরে জীবন জেরবার। কখনও আবদারের জন্য, কখনও বা সন্দেহের বশে। তিতিবিরক্ত হয়ে স্ত্রীকে নির্মমভাবে খুন করল স্বামী। ধামাচাপা দিয়েও শেষরক্ষা হল না।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে গুজরাটের রাজকোটে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, স্ত্রীকে নির্মমভাবে খুন করে তাঁর স্বামী। খুনের পর গল্প ফেঁদে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল সে। পুলিশকে আগে জানিয়েছিল, ফুচকা খেতে গিয়েই নিখোঁজ হয়ে যান স্ত্রী।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, সেদিন এক যুবতীর দেহ উদ্ধার করে তারা। নিথর দেহের মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল স্পষ্ট। দেহটি শনাক্তকরণের পর জানা যায়, ৩৩ বছরের বধূ স্নেহাবেন আসোদিয়ার। হিতেশ আসোদিয়ার স্ত্রী ছিলেন তিনি। দু'জনেই রাজকোটের বাসিন্দা ছিলেন। দেহ উদ্ধারের পরেই স্বামীকে সন্দেহ করে পুলিশ।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, স্নেহাবেনের সঙ্গে নিত্যদিন অশান্তি হত হিতেশের। সন্দেহের বশে স্বামীর সঙ্গে ঝামেলা করতেন স্নেহাবেন। যা থেকে কথা কাটাকাটি ও অশান্তি লেগেই থাকত। প্রথমে নিখোঁজের গল্প বললেও, পরে স্বীকার করে নেয়, স্ত্রীকে লোহার রড দিয়ে মারধর করে খুন করেছে সে।
তিন বছর আগে হিতেশ ও স্নেহাবেনের বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই তুমুল দাম্পত্য কলহ জীবন জেরবার করে তোলে। কাজে যখন হিতেশ ব্যস্ত থাকতেন, তখন সন্দেহের বশে বারবার ফোন করে বিরক্ত করতেন স্ত্রী। ফোন না ধরলেই অশান্তি শুরু হত। কারখানায় কাজ করত হিতেশ। কাজের চাপ, দাম্পত্য কলহের জেরে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল তার।
দম্পতির দুই বছরের এক ছেলেও আছে। শনিবার সন্ধ্যায় হিতেশকে ফোন করে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার আবদার করেছিল স্নেহাবেন। তখন আবারও ঝামেলা হয় তাঁদের। রাগের মাথায় কারখানা থেকে লোহার রড তুলেই বাড়ির দিকে রওনা দেয়। এরপর স্নেহাবেনকে নিয়ে নির্জন এলাকায় চলে যায়। সেখানেই স্ত্রীকে লোহার রড দিয়ে মেরে খুন করে পালিয়ে যায়। ঘাতক স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গত জুলাইয়ে এমন আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল। সুখের সংসারে হঠাৎ অশান্তি। কারণ? সেই বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক। স্বামী ও স্ত্রীর সম্পর্কে ফাটল ধরেই গিয়েছিল। কিন্তু পরিণতি হল আরও ভয়াবহ। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জেরে প্রাণ হারালেন এক যুবক। রাগের মাথায় স্বামীকে নৃশংসভাবে খুন করেছেন তাঁর স্ত্রী।
প্রতিবেশীরা জানতে পারেন, স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে তুমুল ঝামেলা চলছে। সেই ঝামেলাই যে শেষমেশ এমন মোড় নেবে, তা যেন কল্পনাতীত সকলের কাছে। সুখী দাম্পত্যে চিড় ধরেছিল বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ঘিরে। যুবকের সেই বিবাহিত সম্পর্কের বিষয়টিও এলাকায় জানাজানি হয়ে যায়। বিশ্বাসঘাতক স্বামীর উপর প্রতিশোধ নিতেই খুন করলেন স্ত্রী। স্বামীকে ঘুম পাড়িয়ে খুনের ঘটনাটি ঘটান তিনি। টানা কয়েকদিন ঘরের মধ্যে পড়েছিল যুবকের রক্তাক্ত দেহটি। অবশেষে গত রবিবার, তাঁর পচাগলা দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে ঝাড়খণ্ডের সেরাইকেলা- খারসওয়ান জেলায়। সোমবার পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জেরে স্বামীর সঙ্গে নিত্যদিন অশান্তি হত স্ত্রীর। সেই বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ককে ঘিরে স্বামীকে কুপিয়ে খুন করেন ২৯ বছরের তরুণী।
জানা গেছে, অভিযুক্ত তরুণীর নাম, পূজা কুমারী। গত ১৫ জুলাই রাতে পাশাপাশি স্বামী, স্ত্রী ঘুমিয়ে ছিলেন। ঘুমন্ত অবস্থাতেই রাজেশ কুমার মাহতা নামের যুবকের উপর কুড়ুল নিয়ে হামলা করেন পূজা। ঘুমন্ত অবস্থায় স্বামীকে একাধিকবার কুড়ুল দিয়ে কোপ মারেন। রক্তাক্ত অবস্থায় বিছানাতেই রাজেশ কুমার মাহতার মৃত্যু হয়।
পুলিশ আধিকারিক কুমার লুনায়েত জানিয়েছেন, স্বামীকে খুনের পরিকল্পনা আগেই করেছিলেন পূজা। তবে সঠিক সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। ঘটনার দিন সন্তানদের অন্য ঘরে ঘুম পাড়িয়ে এসেছিলেন তিনি। রাজেশ খাওয়াদাওয়ার পর ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। গভীর রাতে কুড়ুল নিয়ে রাজেশকে কোপ মারেন।
রাজেশ মৃত্যু হয়েছে, তা নিশ্চিত হতেই ঘরের দরজা পিছন থেকে বন্ধ করে বেরিয়ে যান পূজা। এরপর তিন সন্তানকে ঘুম থেকে তুলে তিনি পালিয়ে যান। পরদিন সকাল থেকে গত কয়েকদিনে প্রতিবেশীরা তাঁদের কোনও সাড়াশব্দ পাননি। তাতেই সন্দেহ হয়। পুলিশে খবর দেন তাঁরা। রবিবার ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। বাড়ির দরজা ভেঙে উদ্ধার হয় রাজেশের পচাগলা দেহ।
ঘরের মধ্যেই ছিল রক্ত মাখা কুড়ুলটি। ঘরের ছন্নছাড়া অবস্থা দেখেই পুলিশের সন্দেহ হয়। এদিকে প্রতিবেশীরা জানান, সন্তানদের নিয়ে স্ত্রী পূজা পলাতক। খুনের সন্দেহ হতেই পুলিশ পূজার খোঁজে তল্লাশি অভিযান শুরু করে। অবশেষে আটক করে তাঁকে। দীর্ঘ পুলিশি জেরায় কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। কাঁদতে কাঁদতেই জানান, স্বামীকে তিনি খুন করেছেন।
পূজা আরও জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী, রাজেশ বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। অন্য এক তরুণীর সঙ্গে দিনের পর দিন কথা বলতেন ফোনে। প্রথমে সন্দেহ হলেও, পরে জানতে পারেন, সেই তরুণীর সঙ্গেই বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত স্বামী। অবশেষে তিনি খুনের পরিকল্পনা করেন। পূজাকে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেছে তারা। ঘটনার তদন্ত এখনও জারি রয়েছে। পাশাপাশি খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রটি এবং রক্তের দাগ লাগা দু'টি স্মার্টফোন উদ্ধার করেছে পুলিশ।
