আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাতে আর দু’দিনেই উদ্বোধন হতে চলেছে বিশ্বের উচ্চতম রেল ব্রিজের। আগামী ৬ জুন জম্মু-কাশ্মীরে উদ্বোধন হতে চলেছে চেনাব ব্রিজের। এর পাশাপাশি কাটরা-শ্রীনগর বন্দে ভারত এক্সপ্রেসও উদ্বোধন হবে। এর ফলে কাশ্মীরের পর্যটন চিত্রে পরিবর্তন আসতে চলেছে। গত ২২ এপ্রিল দক্ষিণ কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হানার পর পর্যটন শিল্পে আঘাত এসেছে। ফের অতিথিদের স্বাগত জানাতে তৈরি কাশ্মীর। রেল সেক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে।

ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৫৯ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত চেনাব ব্রিজটি উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুল্লা রেল লিঙ্ক প্রজেক্টের অংশ। ২০০৩ সালে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার চেনাব ব্রিজ তৈরির অনুমোদন দেয়। দুই দশকের বেশি সময় পরে তৈর ব্রিজটি। প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের চেয়ে লম্বায় ৩৫ মিটার বেশি এবং কুতুব মিনারের চেয়ে লম্বায় পাঁচগুণ বেশি। মাইনাস ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপ সহ্য করতে পারবে সেতুটি। এটি তৈরিতে ২৮ হাজার ৬৬০ মেগাটন স্টিল। ১.৩১ কিলোমিটার লম্বা ব্রিজটি তৈরি করতে ১৪৮৬ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে।

?ref_src=twsrc%5Etfw">June 3, 2025

চেনাব সেতু নির্মাণ ছিল একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। এই অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু এবং দুর্গম অবস্থান ছিল প্রধান বাধা। হিমালয় অঞ্চলে যে কোনও নির্মাণ কাজই কঠিন। এছাড়াও, ট্রেন চলাচল এবং খারাপ আবহাওয়া সহ্য করার জন্য সেতুটি যথেষ্ট শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন ছিল। কয়েক দশকের গবেষণা, পরামর্শ এবং কঠিন কাজ এখন এই আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভবকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে। সেতুটি ২৬৬ কিমি/ঘন্টা পর্যন্ত তীব্র বাতাসের গতি এবং সর্বোচ্চ তীব্রতার ভূমিকম্প সহ্য করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। সেতুটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, সেতুটি চালু থাকবে এবং ট্রেনগুলি কম গতিতে অতিক্রম করতে পারবে।

Chenab Bridge | WSP

চেনাব সেতুটি উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুল্লা রেল সংযোগের অংশ, যা পৃথিবীর সবচেয়ে ভূতাত্ত্বিকভাবে জটিল অংশের মধ্য দিয়ে নির্মিত ২৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি মেগা প্রকল্প। কেন্দ্র এই প্রকল্পে ৪২ হাজার কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ করেছে। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই রুটের ৯০ শতাংশেরও বেশি অংশ ৯৪৩টি সেতু এবং ৩৬টি সুড়ঙ্গে নির্মিত। যার মধ্যে ১২.৭৭ কিলোমিটার দৈর্ঘের ভারতের দীর্ঘতম রেল সুড়ঙ্গ টি-৫০ও রয়েছে।

পর্যটন বৃদ্ধির পাশাপাশি এই প্রকল্পের ফলে সারা বছর ধরে উপত্যকায় প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং অন্যান্য জরুরি পণ্য পরিবহন সম্ভব হবে। যা প্রায়শই তীব্র শীতে বন্ধ হয়ে যেত। এটি উপত্যকার ব্যবসায়ীদের জন্যও একটি আশীর্বাদও। সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন আপেল চাষিরা। যারা একদিনের মধ্যে তাঁদের পণ্য দিল্লিতে পাঠাতে সক্ষম হবেন।

২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কাশ্মীরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল মোদি সরকার। এই উদ্যোগের নেপথ্যে ধারণাটি ছিল সহজ: উন্নয়ন বনাম সন্ত্রাসবাদ। সরকারের যুক্তি ছিল, উপত্যকার সঙ্গে যোগাযোগ উন্নত করলে পর্যটন এবং ব্যবসা বৃদ্ধি পাবে, যা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কড়া জবাব। আগে, কাশ্মীরে ভ্রমণ অনেক কঠিন ছিল। বিমান যোগাযোগ সবার জন্য সাশ্রয়ী ছিল না এবং সড়ক যোগাযোগ যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। কিন্তু উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুল্লা সংযোগ সম্পূর্ণভাবে চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উপত্যকায় পর্যটন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। 

Latest and Breaking News on NDTV

গত ১৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী মোদির চেনাব সেতু উদ্বোধন এবং বন্দে ভারত-এর একটি বিশেষ সংস্করণের উদ্বোধন করার কথা ছিল। কিন্তু সেই সফর বাতিল করা হয়। এর তিন দিন পর জঙ্গিরা পহেলগামের বৈসরণ উপত্যকায় ২৫ জন পর্যটক এবং একজন কাশ্মীরি ব্যক্তিকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করে।