আজকাল ওয়েবডেস্ক: সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাইসাইকেল দিবস ঘিরে সোচ্চার হয়েছে সারা বিশ্ব। অথচ ক’জনই বা জানেন, এক সাধারণ ‘অ্যাটলাস’ সাইকেল একদিন ঠাঁই পেয়েছিল সুইডেনের নোবেল প্রাইজ মিউজিয়ামে! তাও আবার আমাদেরই অমর্ত্য সেনের – যাঁর গবেষণার ধমনিতে বইতো বাংলার মাটির ধুলো আর হাওয়ার সঙ্গে চলা সাইকেলের চাকা।
নোবেল প্রাপ্তদের কাছ থেকে স্মারক সংগ্রহ করে যে রেওয়াজ সুইডেনের নোবেল মিউজিয়ামের, তার পিছনে রয়েছে একটাই শর্ত – উপহারটি হতে হবে সেই পুরস্কারজয়ীর গবেষণা বা কাজের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে। সেই সূত্রেই দুইটি বস্তু দীর্ঘমেয়াদী ধার হিসেবে জমা দিয়েছিলেন অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন – একটি, ‘আর্যভটীয়’ শাস্ত্রের একটি সংস্করণ; অন্যটি, তাঁর বহু ব্যবহৃত সাইকেল, যেটি ছাত্রজীবন থেকে দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর তাঁর বিশ্বস্ত সঙ্গী ছিল।
অমর্ত্য সেন নিজেই লেখেন, “১৯৪৩-এর বাংলার দুর্ভিক্ষ নিয়ে যখন আমি গবেষণায় নেমেছিলাম, তখন পুরনো গুদামঘর থেকে ধানচাল মজুদের হিসেব, পরিত্যক্ত খামার বাড়ি থেকে স্থানীয় তথ্য সংগ্রহ – এসবই করতে হতো সাইকেলেই চড়ে। শুধু তা-ই নয়, শান্তিনিকেতনের আশেপাশের গ্রামাঞ্চলের শিশুদের ওজন নির্ধারণের কাজে যে যন্ত্রটি ব্যবহার করতাম, সেটিও বয়ে নিয়ে যেতাম এই সাইকেলের পিছনে।”
তিনি আরও জানান, গ্রাম বাংলার শিশুদের ওজন মাপার কাজ নেহাতই ছিল না সহজ। অনেকে ভয় পেয়ে কামড়ে-আঁচড়ে দিতেন তাঁর সহকারীকে। এই মাঠপর্যায়ের তথ্যই তাঁকে সাহায্য করে মানব উন্নয়ন সূচকের (Human Development Index) ধারণা গঠনে, যার জন্যে আজ বিশ্ব তাঁকে সম্মান জানায়।
নোবেল কমিটির এক পদস্থ কর্তা ‘ইকনমিক টাইমস’-কে জানান, “প্রথমে অমর্ত্য সেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের এই ফিল্ডওয়ার্কে যুক্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কেউই রাজি হয়নি ক্যাম্পাসের আরাম ছেড়ে গ্রামের পথে যেতে। শেষে নিজেই চেপে বসেন সাইকেলে, নিজের মতো করেই শুরু করেন গ্রামীণ পরিসংখ্যান সংগ্রহের কাজ।”
এই যে গবেষণার রসদ জোগাড়ে একজন মনীষী বাইসাইকেলকে হাতিয়ার করেন, সেই কাহিনি শুধুই অনুপ্রেরণার নয়—এটা বুঝিয়ে দেয়, সাইকেল কখনো শুধু বাহন নয়, কখনো তা হয়ে ওঠে নোবেল-মূল্যের এক গবেষণা-সঙ্গী।
তাই আজ আন্তর্জাতিক বাইসাইকেল দিবসে, অমর্ত্য সেনের সেই ‘অ্যাটলাস’ সাইকেল যেন দাঁড়িয়ে থাকে এক প্রতীক হয়ে—একটি নীরব অথচ উজ্জ্বল স্মারক, যা আমাদের শেখায়, গবেষণার পথে যেকোনো সাধারণ জিনিসও হয়ে উঠতে পারে অসাধারণ।
