আজকাল ওয়েবডেস্ক: হিমাচল প্রদেশের কুলু জেলার কাসোল—পর্যটনের এক জনপ্রিয় কেন্দ্র। পর্বতের কোলে, পার্বতী নদীর তীরে অবস্থিত এই ছোট্ট পাহাড়ি গ্রামটি দীর্ঘদিন ধরেই ভারত ও বিদেশের ‘ব্যাকপ্যাকার’ পর্যটকদের কাছে স্বর্গতুল্য। কিন্তু সম্প্রতি এই মনোরম উপত্যকার নাম আবারও শিরোনামে উঠে এসেছে এক বিতর্কিত ঘটনার কারণে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া এক ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, কাসোল সংলগ্ন এক নির্জন বনে এক দল বিদেশি পর্যটক রাতের অন্ধকারে ‘সাইকেডেলিক ট্রান্স পার্টি’তে মেতে উঠেছেন। ওই ভিডিয়োয় এক স্বল্পবসনা তরুণীকে গাছের সঙ্গে বাঁধা দড়িতে অন্তর্বাস পরে শূন্যে ঝুলে ধূমপান করতে দেখা গিয়েছে। তাঁকে দোলাচ্ছেন আর এক ব্যক্তি। চারপাশে বাজছে ইলেকট্রনিক সঙ্গীত, বাদ্যযন্ত্রে তাল দিচ্ছেন অন্যান্য তরুণ-তরুণীরা। ধোঁয়ার কুণ্ডলিতে মোড়া সেই দৃশ্য দেখে হতবাক নেটাগরিকরা।
ভাইরাল ভিডিওটি প্রথমে পোস্ট করা হয় ‘সিদ্ধার্থ শুল্ক’ নামের এক্স হ্যান্ডল থেকে। এরপর মুহূর্তে তা ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই লক্ষাধিক মানুষ দেখেন সেই ভিডিও। মন্তব্যের বন্যায় ভেসে যায় পোস্টটি। কেউ লিখেছেন, “কাসোল এখন যেন মাদক ও অনৈতিক কাজের আস্তানায় পরিণত হয়েছে।” আর এক জনের দাবি, “স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর নজরদারি চালানো উচিত, না হলে হিমাচলের পরিবেশ ও সংস্কৃতি ধ্বংস হয়ে যাবে।”
অনেকেই এই পার্টির ঘটনায় গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, বিদেশি পর্যটকদের নাম করে এই ধরনের কর্মকাণ্ড কেবলমাত্র স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি অসম্মান নয়, বরং পরিবেশগত দিক থেকেও অত্যন্ত ক্ষতিকর। পাহাড়ি জঙ্গলের নীরবতা ও জীববৈচিত্র্য এমন উচ্চশব্দ ও ধোঁয়ায় বিপর্যস্ত হয়। কেউ কেউ প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, এই ধরনের পার্টি সংগঠনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক, প্রয়োজনে নির্দিষ্ট এলাকায় বিদেশি পর্যটকদের রাতযাপন বা পার্টির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হোক।
কাসোল বরাবরই ‘হিপি ট্রেল’-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে পরিচিত। এখানে প্রতিবছর ইউরোপ ও ইজরায়েল থেকে বহু তরুণ-তরুণী আসেন শান্তি, সঙ্গীত ও প্রকৃতির খোঁজে। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে সেই পর্যটন ধারা অনেকের মতে বিপজ্জনক দিক নিচ্ছে—মাদক সেবন, বন্যপ্রাণী বিরক্তি, এবং পরিবেশ দূষণ বেড়ে চলেছে। স্থানীয় বাসিন্দারাও এই নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
কুলু জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “ভিডিয়োটি আমরা দেখেছি। ঘটনাটি কোথায় ঘটেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি সত্যিই এটি কাসোল অঞ্চলের হয়, তবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
নেটাগরিকদের একাংশ এখন প্রশ্ন তুলেছেন—“পর্যটন কি প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থানের কথা বলে, না কি উচ্ছৃঙ্খলতার?” কাসোলের মতো শান্ত উপত্যকার সুনাম রক্ষার স্বার্থে এই বিতর্ক হয়তো প্রশাসনকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে—কীভাবে পর্যটন ও সংবেদনশীলতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা যায়।
The kind of nonsense happening in Kasol.#HimachalPradesh pic.twitter.com/UlEyrDI7GD
— Sidharth Shukla (@sidhshuk)Tweet by @sidhshuk
