আজকাল ওয়েবডেস্ক: একটি রাজনৈতিক ক্রাইম থ্রিলারকেও হার মানাবে এমন চাঞ্চল্যকর প্রতারণা-কাণ্ড ফাঁস করল উত্তরপ্রদেশ স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (STF)। গাজিয়াবাদের অভিজাত কবি নগর এলাকায় এক ছদ্ম "দূতাবাস" পরিচালনার অভিযোগে ৪৭ বছর বয়সী হর্ষবর্ধন জৈনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। STF জানিয়েছে, বিগত কয়েক বছর ধরে জৈন "ডিপ্লোম্যাট" সেজে বিদেশে চাকরি ও ব্যবসার সুযোগ দেওয়ার নামে প্রতারণার জাল বিস্তার করেছিলেন। তিনি নিজেকে বিভিন্ন অচেনা ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিহীন "মাইক্রোনেশন" – যেমন ওয়েস্টার্কটিকা, সেবোর্গা, পুলবিয়া ও লন্ডোনিয়া –-এর রাষ্ট্রদূত হিসেবে পরিচয় দিতেন। কভি নগরের তার বিলাসবহুল বাড়িতে লাগানো ছিল জাতীয় পতাকা, গাড়িতে ছিল জাল কূটনৈতিক নম্বর প্লেট, এবং নিজের নামের আগে ব্যবহার করতেন “H.E. HV Jain” উপাধি।
পুলিশ জানায়, এই ছদ্মবেশের আড়ালে জৈন বহু চাকরি প্রার্থী ও ব্যবসায়ীকে প্রলোভন দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। তার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে ১৮টি ভুয়ো কূটনৈতিক নম্বর প্লেট, ১২টি নকল পাসপোর্ট, ৩৪টি ভুয়ো সরকারি সিল, বিদেশ মন্ত্রকের জাল নথিপত্র, ৪৫ লক্ষ টাকার নগদ অর্থ, বিদেশি মুদ্রা, বিলাসবহুল ঘড়ি, ফেক প্রেস আইডি, প্যান কার্ড এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইস। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, প্রতারণার এই কারবার ২০১৭ সাল থেকে চলছে। মাঝে মাঝে "চ্যারিটি ইভেন্ট" ও "দূতাবাসের কার্যক্রম" দেখিয়ে প্রতারণার কাজ চালানো হত।
হর্ষবর্ধন জৈন একসময় মার্বেল ব্যবসায় যুক্ত ধনী রাজস্থানী পরিবার থেকে উঠে এলেও বাবার মৃত্যুর পর অর্থনৈতিক সংকটে পড়েন। তিনি গাজিয়াবাদের ITS কলেজ ও লন্ডনের London College of Applied Science থেকে MBA করেন। গোয়েন্দাদের দাবি, হর্ষবর্ধনের পরিচয় ছিল বিতর্কিত ধর্মগুরু চন্দ্রাস্বামীর সঙ্গে, যিনি তাঁকে লন্ডন পৌঁছতে সাহায্য করেন। সেখানেই তিনি ব্যবসায়িক মহলের সঙ্গে মিশে যান এবং প্রভাবশালী অস্ত্র ব্যবসায়ী আদনান খাশোগির সঙ্গেও তাঁর সংযোগের সম্ভাবনা নিয়ে তদন্ত চলছে। ২০১২ সালেও তিনি স্যাটেলাইট ফোন রাখার অপরাধে টেলিগ্রাফ আইনের আওতায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এখন এই প্রতারণা-কাণ্ড আন্তর্জাতিক মাফিয়ার সঙ্গে যুক্ত কি না, তা তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি। কভি নগর থানায় তাঁর বিরুদ্ধে নতুন করে FIR হয়েছে এবং তদন্ত চলছে বৃহত্তর আর্থিক ও আন্তর্জাতিক যোগসূত্র চিহ্নিত করার লক্ষ্যে।
