আজকাল ওয়েবডেস্ক: বেঙ্গালুরুর কেন্দ্রীয় লোকসভা আসনে ভোটার তালিকা জালিয়াতির অভিযোগ ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী সম্প্রতি অভিযোগ করেছিলেন, মহাদেবপুরা বিধানসভা এলাকার ভোটার তালিকায় বিপুল সংখ্যক ভুয়ো ভোটার যুক্ত হয়েছে। তাঁর অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম গ্রাউন্ড জিরো তদন্ত চালিয়ে চমকপ্রদ তথ্য পেয়েছে।
তদন্তের কেন্দ্রবিন্দু ছিল মুনি রেড্ডি গার্ডেনের বাড়ি নম্বর ৩৫। রাহুলের দাবি— মাত্র ১০-১৫ বর্গফুট আয়তনের এই ছোট্ট ঘরে প্রায় ৮০ জন ভোটারের নাম নথিভুক্ত! বর্তমান ভাড়াটিয়া, পশ্চিমবঙ্গের খাবার ডেলিভারি কর্মী দিপঙ্কর জানান, তিনি মাত্র এক মাস আগে এখানে এসেছেন এবং বেঙ্গালুরুতে তাঁর কোনও ভোটার তালিকায় নাম নেই। তালিকায় থাকা কোনও নামই তিনি চেনেন না।
দিপঙ্করের বক্তব্য, বাড়ির মালিক জয়ারাম রেড্ডি বিজেপি সমর্থক। রেড্ডি প্রথমে নিজের বিজেপি-যোগ স্বীকার করলেও পরে বলেন তিনি কেবল ভোটার, সক্রিয় কর্মী নন। তিনি স্বীকার করেন, বহু ভাড়াটিয়া এখানে বসবাসকালে ভোটার তালিকায় নাম তুলেছেন, কিন্তু এখন তারা অন্যত্র চলে গেছেন। তবুও কিছু লোক ভোটের সময় ফিরে এসে ভোট দেন। রেড্ডি স্বীকার করেন, এতদিন তিনি নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টি জানাননি, তবে এখন জানাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে তিনি নিশ্চিত করেছেন যে ভোটার তালিকায় এখনো ৮০ জনের নাম এই ঠিকানায় রয়েছে—যা বাস্তবে থাকারই কথা নয়। তাঁদের অনেকেই ইতিমধ্যেই ওড়িশা, বিহার বা কর্ণাটকের মাণ্ড্যায় চলে গেছেন, কিন্তু কয়েকজন ভোটের সময় ফিরে আসেন।
বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) মুনিরত্না এই তথ্যের সত্যতা মেনে নিয়েছেন। তিনি জানান, আইটি করিডরের আশপাশে বহু অভিবাসী শ্রমিক—যেমন সিকিউরিটি গার্ড, গৃহপরিচারক, হাউসকিপার—ভাড়ার চুক্তি দেখিয়ে ভোটার কার্ড নেন। পরে তাঁরা স্থান পরিবর্তন করলেও তালিকায় নাম থেকে যায়। নির্বাচন কমিশনের কাছে ‘শিফটেড’ ভোটারদের তালিকা পাঠানো হয়েছে, কিন্তু নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জটিলতার কারণে এখনো নাম মুছে ফেলা হয়নি। অনেকে নিজের নাম বাদ দিতে অস্বীকার করেন, কারণ তাঁদের ভোটার আইডি প্রয়োজন এবং ভোটের সময় ফিরে এসে ভোট দেন।
‘ডুপ্লিকেট ভোটার, ভুয়ো ঠিকানা’ অভিযোগে রাজনৈতিক তরঙ্গ
বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেন, ভোটার তালিকায় ভুয়ো নাম ঢোকানো হচ্ছে এবং এর প্রমাণ হিসেবে তিনি কর্ণাটকের ভোটার তালিকা দেখান। তাঁর দাবি, মহাদেবপুরা বিধানসভা আসনের ৬.৫ লক্ষ ভোটের মধ্যে ১ লক্ষের বেশি ভোট ‘চুরি’ হয়েছে।
অন্যদিকে, কর্ণাটক রাজ্য নির্বাচন কমিশন রাহুলকে শপথপত্র দিয়ে অভিযোগ জমা দিতে বলেছে এবং প্রশ্ন তুলেছে কেন কংগ্রেস আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেনি।
এই ঘটনায় শুধু মহাদেবপুরা নয়, গোটা কর্ণাটক রাজনীতি সরগরম হয়ে উঠেছে, আর ভোটার তালিকা পরিশোধন প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
বেঙ্গালুরুর মহাদেবপুরা বিধানসভা কেন্দ্রে ব্যাপক ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলে গতকাল বৃহস্পতিবার বিস্ফোরক দাবি করেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তিনি অভিযোগ করেন, এই আসনের মোট ৬.৫ লক্ষ ভোটারের মধ্যে অন্তত ১ লক্ষ ভোট ভুয়ো বা জাল। তাঁর ভাষায়, “এটি সরাসরি গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ, এখানে ভোট চুরি হচ্ছে প্রকাশ্যে।” প্রমাণ হিসেবে তিনি কর্ণাটকের ভোটার তালিকার কয়েকটি উদাহরণ সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। এর মধ্যে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ছিল মুনি রেড্ডি গার্ডেনের মাত্র ১০-১৫ বর্গফুট আয়তনের একটি ঘরে ৮০ জন ভোটারের নাম লিখিত থাকার ঘটনা।
রাহুলের অভিযোগ, বিজেপি মদতপুষ্ট একটি চক্র ভুয়ো ঠিকানা ও নকল কাগজপত্র ব্যবহার করে ভোটার তালিকায় নাম তুলছে এবং নির্বাচনের সময় এই ভুয়ো ভোটগুলো বিজেপির পক্ষে ব্যবহার হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, এর ফলে প্রকৃত ভোটারদের অধিকার হরণ হচ্ছে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার সততা ধ্বংস হচ্ছে। কর্ণাটক রাজ্য নির্বাচন কমিশন রাহুলকে শপথপত্রসহ অভিযোগ জমা দিতে বলেছে এবং কংগ্রেস কেন এতদিন আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ জানায়নি তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। রাহুলের এই দাবি রাজ্য রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে এবং ভোটার তালিকা সংস্কারের দাবিকে ফের তীব্র করে তুলেছে।
