আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২৫ মৃত্যু, হাহাকারের পর, মুখ খুললেন গোয়ার নাইটক্লাবের মালিক সৌরভ লুথরা। রোমিও লেনের বার্চের মালিক সৌরভ লুথরা তার উত্তর গোয়ার নাইটক্লাবে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে পলাতক। তবে, সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি স্টেটমেন্ট প্রকাশ করেছেন। তাতে তিনি লিখেছেন, 'বার্চে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার ফলে প্রাণহানির ঘটনায় কর্তৃপক্ষ গভীর শোক প্রকাশ করছে এবং গভীরভাবে মর্মাহত।অপূরণীয় ক্ষতি এবং দুর্দশার এই মুহূর্তে, কর্তৃপক্ষ নিহতদের পরিবার এবং আহতদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছে এবং আন্তরিকতার সঙ্গে তাঁদের সমবেদনা জানাচ্ছে। কর্তৃপক্ষ আরও নিশ্চিত করছে যে, শোকাহত এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা যখন এই চরম যন্ত্রণা ও প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তখন তাঁদের সম্ভাব্য সকল ধরনের সহায়তা প্রদান করা হবে।' তথ্য, গত বছর প[অর্যন্ত লুথরার লক্ষ্য ছিল, দেশজুড়ে অন্তত ৫০টি এই ধরনের নাইটক্লাব খোলার। সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে তিনি নিজেকে রোমিও লেন-এর চেয়ারম্যান বলেও উল্লেখ করেছেন।
লুথরা সম্পর্কে গতকাল থেকে একাধিক তথ্য উঠে আসছে। অ্যাক্টিভিস্ট তাহির নোরহনা জানিয়েছেন, তাঁর চোখে লুথরা যেন একজন 'ঘোস্ট'। গোয়ায় আর দেখা মেলাই ভার ছিল। বছরের বেশিরভাগ সময় গোয়ার বাইরে নানা জায়গায় তিনি কাটাতেন।
এর মধ্যেই নাইটক্লাবের মালিকদের নিয়ে আরও একাধিক বিস্ফোরক তথ্য উঠে এসেছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিতই ছিলেন না নাইটক্লাবের মালিক। সরু গলি পেরিয়ে নির্জন এলাকায় নাইটক্লাব। ছিল না যথাযথ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। আর এই গাফিলতিতেই বেঘোরে প্রাণ হারালেন ২৫ জন। রাতভর হুল্লোড়ের প্ল্যান ছিল সকলের। মালিক, ম্যানেজারের ত্রুটিতেই দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলেন পর্যটকরা।
রবিবার ভোরেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী ড. প্রমোদ সাওয়ান্ত। তিনি এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বির্চ বাই রোমিও লেন নাইটক্লাবের মালিক ও ম্যানেজারের বিরুদ্ধে নিরাপত্তায় গাফিলতির অভিযোগে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। শীঘ্রই মালিক ও ম্যানেজারকে গ্রেপ্তার করা হবে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ চিহ্নিত করতে, পুরো ঘটনার ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, নর্থ গোয়ার পানাজি থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আরপোরা গ্রামে বির্চ বাই রোমিও লেন নাইটক্লাব। শতাধিক পর্যটক, কর্মীরা ছিলেন গতকাল রাতে। ডিজে পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল। ডান্স ফ্লোর মাতিয়ে রেখেছিলেন পর্যটকরা। খাবারের আয়োজনেও ব্যস্ত ছিলেন কর্মীরা। সেই সময়েই ঘটে বিপত্তি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাত একটা নাগাদ দাউদাউ আগুন ছড়িয়ে পড়ে ডান্স ফ্লোরে। বেশিরভাগ পালিয়ে যান কোনও মতে। পালাতে গিয়েও হুড়োহুড়ি শুরু হয়। কারণ, নাইটক্লাবের এক্সিট গেটের পথ অত্যন্ত সরু। যেখান থেকে তাড়াহুড়োতে পালিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। অন্যদিকে কয়েকজন পর্যটক ও কর্মীরা পালাতে না পেরে নাইটক্লাবের বেসমেন্টে ঠাঁই নেন। সেখানেই দমবন্ধ হয়ে অধিকাংশের মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আরপোরা নদীর পিছনেই ছিল এই নাইটক্লাব। এন্ট্রি ও এক্সিটের পথ ছিল সরু। মূল সড়কের পাশে সরু রাস্তা দিয়ে পৌঁছনো যেত এই 'আইল্যান্ড ক্লাব'-এ। দমকলের ইঞ্জিন নাইটক্লাব পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি। ৪০০ মিটার দূরে দাঁড়িয়েই দমকলের একাধিক ইঞ্জিন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ওই বেসমেন্ট থেকে ২৫ জনের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ ও দমকল বাহিনী।
