আজকাল ওয়েবডেস্ক: বর্তমানে ব্যস্ততার যুগে বিশেষ করে কোভিড কালের পর থেকে শুরু হয়েছে নয়া এক নিয়ম। সেটা হল কর্মীদের ওয়ার্ক ফ্রম হোম। অফিস যেতে না পারলেও বাড়িতে বসেও কাজ করতে হয় অনেককে। সেই কাজের জন্য যোগাযোগ করতে হয় বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে। কিন্তু চাকুরিজীবীদের মতে, ওয়ার্ক ফ্রম হোমে স্ট্রেস অনেক বেশি, কাজের চাপ অনেক বেশি। ফলে, জীবন ব্যস্ত হয়ে পড়ে আরও বেশি। এই পরিস্থিতিতে ওয়ার্ক ফ্রম হোমকে কেন্দ্র করেই সামনে এসেছে নয়া পর্যটন প্যাকেজ। পশ্চিমবঙ্গের লাগোয়া এলাকাতেই তৈরি করা হয়েছে এমন এক গ্রাম যেখানে ভ্রমণ এবং তার সঙ্গে সঙ্গে ওয়ার্ক ফ্রম হোমের সুবিধা মিলবে। সবথেকে বড় কথা এই গ্রাম একেবারে বরফে ঘেরা পাহাড়ের কোলে, যা ভ্রমণপিপাসুদের কাছে স্বপ্ন।

কিন্তু এই গ্রামটি কোথায় অবস্থিত জানেন কি? সিকিমের পাকইয়ং জেলার সবুজ পাহাড়ে ঘেরা ছোট্ট গ্রাম ইয়াকটেন হল সেই জায়গা যা চাকুরিজীবীদের জন্য উপযুক্ত জায়গা। এই ছোট্ট গ্রাম বর্তমানে শুধুই সিকিমের এক অজানা কোণ নয়, বরং ভারতবর্ষের প্রথম ‘ডিজিটাল নোম্যাড ভিলেজ’ হিসেবে পরিচিত হয়েছে। জানা গিয়েছে, রাজ্যের ‘নোম্যাড সিকিম’ উদ্যোগের অংশ হিসেবে এই গ্রামটি এখন এক যুগান্তকারী প্রকল্পের কেন্দ্রবিন্দু। যার লক্ষ্য হল সারা বিশ্ব থেকে রিমোট কর্মীদের আকৃষ্ট করে স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা। স্থানীয় সূত্রে খবর, এই আকর্ষণীয় প্রকল্পটি পাকইয়ং জেলা প্রশাসন এবং এনজিও ‘সর্বহিতে’-র যৌথ প্রয়াস।

আরও পড়ুন: সন্তান আর নেই, চিকিৎসক পেটে ঠেসে ভরে দিলেন অযাচিত বস্তু! ডাক্তারের ভুলে পচে গেল যুবতীর জরায়ু?

এর উদ্দেশ্য সিকিমের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডিজিটাল চাকুরিজীবীদের জন্য কাজের উপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলা। পাশাপাশি, এটি হোমস্টে মালিকদের জন্যও সারা বছর টেকসই আয়ের রাস্তা খুলে দিচ্ছে। ‘নোম্যাড লিস্টের’ ‘২০২৫ স্টেট অব ডিজিটাল নোম্যাডস’ রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে প্রায় ১৭ লক্ষ মানুষ বর্তমানে কাজ ও ভ্রমণের মধ্যে ভারসাম্য রেখে চলেন। ২০২২ সালের ডেলয়েট ইন্ডিয়া ওয়ার্কফোর্স সার্ভে অনুযায়ী, প্রায় ৮০ শতাংশ ভারতীয় পেশাদারই রিমোট বা ফ্লেক্সিবল ওয়ার্কিং মডেল পছন্দ করেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ইয়াকটেন গ্রামে কী সুবিধা মিলবে ডিজিটাল কর্মীদের? জানা গিয়েছে, এই ছোট্ট গ্রামটিতে মোট ৮টি হোমস্টেতে ১৮টি ঘর রয়েছে, রয়েছে দ্রুতগতির ওয়াই-ফাই, কো-ওয়ার্কিং স্পেস।

এখানে সাপ্তাহিক প্যাকেজ ৬,০০০ টাকা, মাসিক প্যাকেজ ১৫,০০০ টাকা। যার মধ্যে রয়েছে কাজের জায়গা, সংস্কৃতি অভিজ্ঞতা, স্থানীয় সাপোর্ট সহ। এখানকার তাপমাত্রাও খুবই আরামদায়ক। গ্রীষ্মে এখআনে তাপমাত্রা ২৪°C এবং শীতে ৪°C পর্যন্ত নেমে যায়। পরিবহণ ব্যবস্থাও অত্যন্ত ভাল। ইয়াকটেন গ্যাংটক থেকে ৩০ কিলোমিটার, বাগডোগরা বিমানবন্দর: ১২৫ কিলোমিটার এবং নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সিকিমের লোকসভার সাংসদ ইন্দ্র হ্যাং সুব্বা বলেন, ‘নোম্যাড সিকিম প্রকল্প শুধু পর্যটনের নতুন রূপ নয়, বরং এটি আমাদের সংস্কৃতি ও স্থানীয় অর্থনীতিকে বিশ্বজুড়ে ডিজিটাল কর্মীদের সঙ্গে যুক্ত করছে’।

এখানেই শেষ নয়, বর্ষাকালে যখন পাহাড়ে অফ সিজন থাকে, তখন পর্যটক টানতেও এই প্রকল্প অনেক ক্ষেত্রে সমাধান আনবে। মূলত, এপ্রিলে বর্ষা শুরু হওয়ার পর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পর্যটক আসা প্রায় বন্ধ থাকে। ডিজিটাল নোম্যাডদের আগমন হোমস্টে মালিকদের জন্য সারা বছর আয়ের রাস্তা তৈরি করবে। জানা গিয়েছে, এই প্রকল্পটিকে পাইলট হিসেবে তিন বছরের জন্য নজরে রাখা হবে। সাফল্য মিললে সিকিমের আরও গ্রামকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হবে বলে জানা গিয়েছে। বিশ্বে ইতিমধ্যেই চিয়াং মাই (থাইল্যান্ড), উবুদ (বালি), পন্টা দো সল (পর্তুগাল), স্পেন, ইতালির বেশ কিছু এলাকা ডিজিটাল নোম্যাডদের জন্য আদর্শ হাব হয়ে উঠেছে। সেই তালিকায় এবার নাম যুক্ত হয়েছে সিকিমের।