আজকাল ওয়েবডেস্ক: দেশপ্রেমের নানা গল্প সকল প্রজন্মকেই বেশ মুগ্ধ করে। কিন্তু এর মধ্যে কিছু সত্য আবার কিছু গল্প লোকমুখে তৈরি। কিন্তু এমন একটি গল্পও আছে যেখানে রয়েছে ৫,০০০ কেজি সোনা, একজন নিজাম, যিনি সেই সময় বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ছিলেন এবং এক প্রধানমন্ত্রীর ভিভিআইপি সাক্ষাৎ। এই গল্পে এত মোড় রয়েছে যে এটি কোনও বলিউড সিনেমার স্ক্রিপ্টের মতো মনে হয়, কিন্তু তা নয়। 

গল্পটি হায়দ্রাবাদের নিজাম, মীর ওসমান আলি খানকে নিয়ে। যিনি একসময় বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ছিলেন এবং কীভাবে তিনি ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় ভারত সরকারকে সাহায্য করার জন্য ৫,০০০ কেজি সোনা দান করেছিলেন।

কাহিনী অনুযায়ী, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী তহবিল সংগ্রহের জন্য হায়দ্রাবাদ শহর পরিদর্শন করেছিলেন। সেই সময় নিজাম তাঁর দেশপ্রেম প্রদর্শনের জন্য বিপুল পরিমাণ সোনা দান করেছিলেন। তাঁর শর্ত ছিল একটাই, যে বাক্সগুলিতে সোনা রাখা হয়েছিল সেগুলি যেন  ফেরত দেওয়া হয়।

এই গল্পটি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মুগ্ধ করেছে এবং দেশের আনুগত্যের প্রতীক হিসেবেও দেখা হয়। তবে, নতুন অনুসন্ধানে এই গল্প নিয়ে কিছু সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

সরকারি রেকর্ড অনুসারে, নিজাম খান মাত্র ৪.২৫ লক্ষ গ্রাম (৪২৫ কেজি) সোনা বিনিয়োগ করেছিলেন। ৫,০০০ কেজি নয়। তিনি ১৯৬৫ সালে চালু হওয়া প্রতিরক্ষা স্বর্ণ প্রকল্পে সোনা বিনিয়োগ করেছিলেন। অতএব, এটি কোনও অনুদান ছিল না বরং বার্ষিক ৫ শতাংশ সুদে বিনিয়োগ ছিল।

দ্য হিন্দুর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৬৫ সালে হায়দরাবাদে এক জনসভায়  প্রধানমন্ত্রী শাস্ত্রী নিজামকে স্বর্ণ দানের জন্য প্রকাশ্যে ধন্যবাদ জানান। প্রাচীন মুদ্রা (মোহর) সমন্বিত এই দানের মূল্য ছিল প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা এবং সরকার সেগুলির মূল্য সর্বাধিক করার জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করার পরিকল্পনা করেছিল।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখযোগ্য অনুদানের বিবরণ দেওয়া হয়েছে: তিরুমালা তিরুপতি দেবস্থানম থেকে ১,২৫,০০০ গ্রাম সোনা এবং তেলেগু চলচ্চিত্র অভিনেতাদের কাছ থেকে ৮,০০,০০০ টাকা নগদ। এগুলি ছিল সরাসরি উপহার। 

গোপনীয়তা বজায় রাখতে আরটিআই আইনের ধারা ৮(১)(জে)-এর অধীনে নিজামের বিনিয়োগের চূড়ান্ত সুবিধাভোগী সম্পর্কে আরটিআই আবেদন খারিজ করা হয়েছিল। নিজামের নাতিদের একজন, নাজাফ আলি খান দ্য হিন্দুকে বলেন যে তিনি জানেন না কে চূড়ান্ত অর্থ প্রদান করেছিসেব। তিনি আরও বলেন যে, নিজাম খান ৫২টি ট্রাস্ট তৈরি করেছিলেন। সেই বিনিয়োগ থেকে কোন ট্রাস্ট উপকৃত হয়েছে তাঁর জানা নেই।