আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিল্লি হাইকোর্ট শুক্রবার রেস্তরাঁগুলির সার্ভিস চার্জ আদায়ের প্রথা নিয়ে কড়া অবস্থান নিয়েছে। আদালত প্রশ্ন তোলে, যখন খাবার-দাবার ও পানীয়ের দাম এমআরপি (Maximum Retail Price)-র চেয়ে অনেক বেশি রাখা হয়, তখন আবার আলাদা করে সার্ভিস চার্জ কেন নেওয়া হচ্ছে?
প্রধান বিচারপতি দেবেন্দ্র কুমার উপাধ্যায় ও বিচারপতি তুষার রাও গেদেলার ডিভিশন বেঞ্চ রেস্তরাঁ ও হোটেল সমিতির আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন— “আপনারা এমআরপি-র উপর দাম নিচ্ছেন, বলছেন এটি রেস্তরাঁয় বসে খাওয়ার অভিজ্ঞতা বা অ্যাম্বিয়েন্সের জন্য। আবার সেই অভিজ্ঞতার পাশাপাশি সার্ভিস চার্জও নিচ্ছেন। তাহলে ওই অতিরিক্ত ৮০ টাকা কিসের জন্য? অ্যাম্বিয়েন্সের মধ্যেই তো পরিষেবা দেওয়া অন্তর্ভুক্ত।”
আদালত একটি উদাহরণ টেনে বলে, এমনিতেই একটি ২০ টাকার জলের বোতল রেস্তরাঁয় ১০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। বিচারপতিরা প্রশ্ন তোলেন, “এই অতিরিক্ত ৮০ টাকা যদি অ্যাম্বিয়েন্সের জন্য হয়, তাহলে মেনুতেই কেন স্পষ্টভাবে লেখা হচ্ছে না যে এটি পরিবেশের খরচ? আর সার্ভিস চার্জে আবার কীসের জন্য টাকা নিচ্ছেন?”
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৮ মার্চ দিল্লি হাইকোর্টের একক বেঞ্চ জানিয়েছিল, সার্ভিস চার্জ কোনওভাবেই বাধ্যতামূলক করা যাবে না। আদালত তখন মন্তব্য করেছিল, বিলের সঙ্গে জোর করে সার্ভিস চার্জ ও তার উপর আবার জিএসটি (GST) যোগ করা হলে তা উপভোক্তাদের জন্য এক ধরনের “ডাবল ওয়্যামি” বা দ্বিগুণ চাপ তৈরি করে। আদালতের মতে, সার্ভিস চার্জ সম্পূর্ণ গ্রাহকের ইচ্ছাধীন, বিলের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যোগ করা যাবে না।
সমিতিগুলির যুক্তি ও আদালতের প্রশ্ন
হোটেল ও রেস্তরাঁ সমিতির পক্ষ থেকে সিনিয়র অ্যাডভোকেট সন্দীপ সেঠি যুক্তি দেন, সার্ভিস চার্জ গ্রাহক ও রেস্তরাঁর মধ্যে এক ধরনের চুক্তি। তার বক্তব্য, “কোনও গ্রাহককে আমার রেস্তরাঁয় আসতে বাধ্য করা হয়নি। সার্ভিস নিতে চাইলে সার্ভিস চার্জ দিতে হবে।” কিন্তু প্রধান বিচারপতি উপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, “ওই অতিরিক্ত অর্থ যদি অ্যাম্বিয়েন্সের জন্য হয়, তাহলে সেটাই তো পরিষেবার অংশ। বোতল থেকে জল এনে দেওয়া বা চেয়ার দেওয়া— এগুলোই তো সার্ভিস। তাহলে আলাদা করে আবার সার্ভিস চার্জ কেন?”
আরও পড়ুন: 'ওখানে' চুল ছাঁটতে গিয়েই বিপত্তি! ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হল পার্লারকে
এই মামলায় সমিতিগুলির আপিলের শুনানি আগামী ২২ সেপ্টেম্বর হবে। আদালতের আগের রায় অনুযায়ী, টিপস বা সার্ভিস চার্জ সম্পূর্ণভাবে গ্রাহকের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, তা কখনোই বাধ্যতামূলক হতে পারে না। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, হাইকোর্টের এই পর্যবেক্ষণ ভোক্তা অধিকার রক্ষায় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সাধারণ মানুষ প্রায়ই এমআরপি-র চেয়ে বেশি দাম দিয়ে পণ্য কিনতে বাধ্য হন, তার উপর আবার অতিরিক্ত চার্জ দিলে এটি নিছক ভোক্তা শোষণ। আদালতের মন্তব্যে বোঝা যাচ্ছে, ভবিষ্যতে এই নিয়ে কঠোর নির্দেশনা জারি হতে পারে। ভোক্তা সংগঠনগুলিও বলছে, সার্ভিস চার্জ গ্রাহকের সদিচ্ছার উপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত, জোর করে চাপিয়ে দেওয়া নয়।
