আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিল্লির একটি বিলাসবহুল হোটেলের সেলুনে ভুল হেয়ারকাটের কারণে এক মহিলার জীবনে ঘটে গেল চরম বিপর্যয়। ভেঙে গেল তাঁর শীর্ষ মডেল হওয়ার স্বপ্ন। ন্যাশনাল কনজিউমার ডিসপিউটস রেড্রেসাল কমিশন (NCDRC) এই মামলায় হোটেল কর্তৃপক্ষকে ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছে।
কমিশনের সভাপতি বিচারপতি আর কে আগরওয়াল এবং সদস্য ডঃ এস এম কান্তিকার স্পষ্ট মন্তব্য, “মহিলারা তাঁদের চুল নিয়ে অত্যন্ত সতর্ক ও আবেগপ্রবণ। তারা চুল ভালো রাখার জন্য মোটা অঙ্কের টাকা ব্যয় করেন। অভিযোগকারী ছিলেন হেয়ার প্রোডাক্টসের মডেল। ভুল হেয়ারকাটে তাঁর পেশাগত জীবন ধ্বংস হয়েছে।”
অভিযোগ কী ছিল?
অভিযোগকারী ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল হোটেল আইটিসি মৌর্যার সেলুনে গিয়েছিলেন। সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারভিউ থাকায় তিনি পরিচ্ছন্ন ও আকর্ষণীয় লুক চেয়েছিলেন। তিনি বিশেষভাবে নির্দেশ দেন – সামনের দিকে লম্বা ফ্লিকস বা লেয়ার, আর পিছনে ৪ ইঞ্চি সোজা ট্রিম।
কিন্তু যিনি সাধারণত তাঁর চুল কাটতেন, তিনি সেদিন উপস্থিত ছিলেন না। ম্যানেজারের আশ্বাসে অন্য এক হেয়ারড্রেসার তাঁর চুল কাটেন। অভিযোগকারিণীর বিস্ময় এবং হতাশা— তাঁর দীর্ঘ চুল প্রায় পুরোপুরি কেটে ফেলা হয়। মাথার ওপর থেকে মাত্র চার ইঞ্চি রেখে দেওয়া হয়েছিল, যা কাঁধ ছুঁয়েও পৌঁছায়নি।
মানসিক ও পেশাগত ক্ষতি
কমিশনের নথি অনুযায়ী, হেয়ার ট্রিটমেন্টের নাম করে সেলুন কর্মীরা রাসায়নিক ব্যবহার করেন যা তাঁর মাথার ত্বক পুড়িয়ে দেয়। এর ফলে চুল প্রায় উঠে যায় এবং স্থায়ী ক্ষতি হয়। অভিযোগকারিণী VLCC ও Pantene-এর মতো সংস্থার জন্য মডেলিং করতেন, আরও কয়েকটি বড় চুক্তি এবং এমনকি একটি সিনেমার প্রস্তাবও হাতে ছিল। ভুল হেয়ারকাট ও ট্রিটমেন্টের কারণে সব সুযোগ হারাতে হয়।
তিনি একইসঙ্গে একজন সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট পেশাদার হিসেবেও কাজ করতেন। মানসিক ভাঙন, আত্মবিশ্বাস হারানো এবং ট্রমার ফলে তিনি নিজের কাজেও মনোনিবেশ করতে পারেননি, শেষ পর্যন্ত চাকরিও চলে যায়।
কমিশনের পর্যবেক্ষণ – “তিনি আয়না দেখা বন্ধ করে দেন, সামাজিক অনুষ্ঠানে যাওয়া বন্ধ করে দেন। তিনি মারাত্মক মানসিক আঘাত, আত্মমর্যাদা হ্রাস এবং আয়ের ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছেন।”
হোটেল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, অভিযোগকারিণী বিনামূল্যে হেয়ারকাট ও ট্রিটমেন্ট পেয়েছিলেন, তাই তিনি ভোক্তা সুরক্ষা আইনের আওতায় পড়েন না। আরও বলা হয়, অভিযোগকারিণী ইচ্ছাকৃতভাবে অতিরঞ্জিত অভিযোগ করেছেন এবং ৩ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণের দাবি করেছেন যাতে আদালতের এখতিয়ার জোর করে প্রয়োগ করা যায়।
কমিশনের রায়
সব দিক খতিয়ে দেখে কমিশন মনে করে অভিযোগ আংশিকভাবে যুক্তিসঙ্গত। ভোক্তা আদালতের পর্যবেক্ষণ – “অভিযোগকারিণী যে মানসিক, সামাজিক ও পেশাগত ক্ষতির শিকার হয়েছেন, তার ক্ষতিপূরণ হিসাবে ২ কোটি টাকা দেওয়াই ন্যায়সঙ্গত হবে।”
ফলে হোটেল আইটিসি মৌর্যা-কে ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কমিশনের মতে, এই ক্ষতিপূরণ শুধু অভিযোগকারিণীর ন্যায়বিচারই নয়, বরং অন্যান্য ভোক্তাদের জন্যও একটি বড় বার্তা বহন করবে যে বিলাসবহুল পরিষেবা প্রদানকারীদের কাছ থেকেও ন্যূনতম যত্ন ও দায়িত্বশীলতা আশা করা যায়।
এই ঘটনায় আবারও প্রমাণিত হল, বিলাসবহুল সেলুন হলেও অবহেলা বা গাফিলতির ফলে ভোক্তাদের জীবনে মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে এবং আইনের পথে গেলে বড় ক্ষতিপূরণ আদায় সম্ভব।
