আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিল্লি বিস্ফোরণ কাণ্ডে নাটকীয় মোড়। দিল্লি পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্ত মুজাম্মিল তদন্তকারী আধিকারিকদের জেরায় জানিয়েছে, লালকেল্লার সামনে বিস্ফোরণের বহু আগেই দিল্লিতে একাধিকবার বিস্ফোরণের পরিকল্পনা ছিল তাদের। সে এবং উমর একযোগে লালকেল্লা চত্বরটিও পর্যবেক্ষণ করেছিল। অভিযুক্ত মুজাম্মিলের ফোনের তথ্য ঘেঁটেই তাকে জেরা করতে শুরু করেন তদন্তকারী আধিকারিকরা।
জেরায় অভিযুক্ত জানিয়েছে, ২০২৬ সালে ২৬ জানুয়ারি দিল্লিতে বিস্ফোরণ ও হামলার ছক কষেছিল তারা। তার জন্য লালকেল্লা চত্বরটিই বেছে নিয়েছিল। যার জন্য নিয়মিত লালকেল্লার আশেপাশে ঘোরাঘুরি করত। এমনকী চলতি বছরে দিওয়ালিতেও দিল্লির কোনও ভিড়ে ঠাসা এলাকায় বিস্ফোরণের পরিকল্পনা ছিল তাদের। পরে সেটি বদলে যায়।
সোমবার সন্ধে ৬টা ৫২ মিনিট নাগাদ লালকেল্লার কাছে নেতাজি সুভাষ মার্গে ট্র্যাফিক সিগন্যালে একটি সাদা হুন্ডাই আই২০ দাঁড়িয়ে ছিল। লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের এক নম্বর গেটের কাছে সেই গাড়িতেই বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে। গাড়িটি সোমবার ভোরে দিল্লিতে প্রবেশ করে। অনেকক্ষণ নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর পর সুনেহরি মসজিদের কাছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার্ক করে রাখা হয়। সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর এটি চাঁদনি চকে চলে যায়। এরপরেই মেট্রো স্টেশনের কাছে এটি বিস্ফোরিত হয়।
দিল্লি পুলিশের মতে, ১০ নভেম্বর সকাল ৮টা ৪ মিনিটে ফরিদাবাদের বদরপুর টোল বুথ দিয়ে গাড়িটি রাজধানীতে প্রবেশ করে। এরপর সকাল ৮টা ২০ মিনিটে ওখলা শিল্পাঞ্চলের কাছে একটি পেট্রল পাম্পে গাড়িটিকে দেখা যায়। সিসিটিভি ফুটেজে গাড়িটিকে ওই পেট্রল পাম্পে জ্বালানি ভরতে দেখা যায়। গাড়িটি দরিয়াগঞ্জ, কাশ্মীর গেট এবং সুনেহরি মসজিদ এলাকায় ঘোরাফেরা করে। দুপুর ৩টে ১৯ মিনিট নাগাদ লালকেল্লার সামনে সুনেহরি মসজিদ এলাকায় গাড়িটিকে পার্ক করা হয়। সন্ধ্যা ৬টা ২২ মিনিটে গাড়িটিকে পার্কিং থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। এর কিছু পরেই গাড়িটি চাঁদনি চক দিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে। লালকেল্লার কাছে একটি ইউ-টার্ন নিয়ে লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের ১ নম্বর গেটের কাছে সুভাষ মার্গে থামতে দেখা গিয়েছে। সেখানে সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে বিস্ফোরণ হয়। পুলিশের ধারণা, সুনেহরি মসজিদের কাছে গাড়িটি দীর্ঘক্ষণ থাকার সময়, হামলাকারী হয়তো এলাকায় রেকি করেছিল।
সূত্রের খবর, দিল্লি বিস্ফোরণের আগে গত ১২ দিন হরিয়ানার ফরিদাবাদে আল-ফালাহ মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরেই গাড়িটি দাঁড়িয়েছিল। প্যানিকের জেরে ১০ নভেম্বর সকালে সেই গাড়িটি নিয়েই ফরিদাবাদ থেকে দিল্লিতে চলে আসে উমর। গত ২৯ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত গাড়িটি ওই কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে ছিল। ফরিদাবাদে বিস্ফোরক উদ্ধারের পর মুজাম্মিল ও আদিলের গ্রেপ্তারির পরেই আতঙ্কিত হয়ে গাড়িটি নিয়ে উমর বেরিয়ে পড়ে। সুনেহরি মসজিদের কাছে পার্ক করার আগে গাড়িটিকে ময়ূর বিহার ও কনট প্লেসের কাছেও দেখা গেছে।
সোমবার সন্ধ্যায় কেঁপে উঠেছিল লালকেল্লা মেট্রো স্টেশন চত্বর। সোমবার পর্যন্ত আটজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছিল। মঙ্গলবার মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ে। দিল্লি বিস্ফোরণে এখনও পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত অবস্থায় এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২০ জন।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, বিস্ফোরণের পর লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনে পরিষেবা বন্ধ রয়েছে। ঐতিহাসিক লালকেল্লা পর্যটক ও দর্শনার্থীদের জন্য আগামী তিনদিনের জন্য বন্ধ থাকবে। দফায় দফায় উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে উপস্থিত রয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সোমবার রাতেই তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এর আগে হাসপাতালে আহতদের সঙ্গেও দেখা করেছিলেন অমিত শাহ।
