আজকাল ওয়েবডেস্ক: সম্প্রতি দিল্লিতে সুপ্রিম কোর্টের এক নির্দেশনার পর ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক এবং প্রতিবাদ। আদালত দিল্লি সহ গুরুগ্রাম, নয়ডা ও গাজিয়াবাদে রাস্তায় থাকা কুকুরগুলোকে আটকে তাদের স্থায়ীভাবে আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশের প্রতিবাদে অ্যানিমেল রাইটস (Animal rights) কর্মীরা দিল্লির ইন্ডিয়া গেটের সামনে তুমুল বিক্ষোভে নামেন।

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, দিল্লির ইন্ডিয়া গেটের সামনে দীর্ঘ সময় ধরে চলে এই বিক্ষোভ। বিক্ষোভ চলাকালীন একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দেখা যায় পুলিশের একটি বাসে কিছু মহিলা কর্মী আটক রয়েছেন। ভিডিওতে দেখা যায়, এক মহিলা কর্মী ও এক দিল্লি পুলিশকর্মীর মধ্যে তীব্র তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। এরপর এক পুলিশ অফিসার সেই মহিলাকে বাসের পেছনের দিকে টেনে নিয়ে যান। এমনকি পরে তাঁকে এলোপাথাড়ি চড় ও ঘুষি মারেন। ওই মহিলা বারবার চিৎকার করে বলছিলেন, 'ধাক্কা কেন মারছেন?' ভিডিওতে এক সময় ওই মহিলা কর্মীকে পাল্টা হাত তুলতেও দেখা যায়। ভিডিওতে পেছন থেকে আরও কয়েকজনের কণ্ঠ শোনা যায়, 'ওরা আগে মেরেছে।' পুলিশের পক্ষ থেকে তখন কর্মীদের বসে পড়তে বলা হচ্ছিল।

এই ভিডিওটি কংগ্রেস সাংসদ মনীশ তেওয়ারি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে লেখেন, 'শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে এমন কর্তৃত্ববাদী পদ্ধতিতে দমন করাটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। দিল্লি পুলিশের আরও সংবেদনশীল হওয়া প্রয়োজন। প্রতিবাদ করা আমাদের সংবিধানে স্বীকৃত অধিকার, যা অনুচ্ছেদ ১৯-এর অধীনে কথার ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অন্তর্ভুক্ত।'

সোমবার সুপ্রিম কোর্ট জানায়, রাস্তায় কুকুরদের অবস্থা 'চরম উদ্বেগজনক' এবং তাদের আটকে নির্ধারিত আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। এসব কেন্দ্রে কমপক্ষে ৫০০০ কুকুর রাখার ব্যবস্থা থাকতে হবে। পাশাপাশি যথেষ্ট পরিমাণে স্টাফ নিয়োগ দিতে হবে যারা কুকুরদের বন্ধ্যাকরণ এবং টিকাকরণ সম্পন্ন করবে। আদালত নির্দেশ দেয়, একবার আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পর এসব কুকুরকে আর কোনওভাবেই রাস্তায় বা জনবসতিতে ছেড়ে দেওয়া যাবে না।

আদালত আরও জানিয়েছে, জনসুরক্ষা বিশেষ করে শিশুদের সুরক্ষার দিকটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং এই সিদ্ধান্তে যেন সাধারণ মানুষের আস্থা তৈরি হয়। পাশাপাশি কেউ এই প্রক্রিয়াকে বাধা দিলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

আদালতের এহেন সিদ্ধান্তকে যেখানে বিভিন্ন আবাসিক কল্যাণ সমিতিগুলি স্বাগত জানিয়েছে, সেখানে পশু কল্যাণ সংগঠনগুলির মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা গিয়েছে। তাঁদের মতে, এই ধরণের বড় আকারের স্থানান্তর করার মতো পরিকাঠামো বা জমি সরকারের নেই। এতে উল্টো মানুষের ও কুকুরদের মধ্যে সংঘর্ষ আরও বাড়তে পারে।

আরও পড়ুনঃ নীরব ভালবাসা! প্রতিদিন তিনশো'র বেশি পথকুকুর কে খাওয়ান, গোয়ার 'মারিয়া আন্টি' মন জয় করলেন... 

বিক্ষোভকারীরা দাবি করেন, অ্যানিম্যাল বার্থ কন্ট্রোল (Animal Birth Control (ABC)) নিয়ম অনুযায়ী, বন্ধ্যাকরণ ও টিকাকরণের পর কুকুরদের তাদের নিজ নিজ এলাকায় ছেড়ে দেওয়ার বিধান রয়েছে। একইসঙ্গে এই নিয়মটি এখনও কার্যকর বলে দাবি করেছেন বিক্ষোভকারীরা। তাঁরা আরও জানান, ২০২৪ সালে সরকারি তথ্য অনুযায়ী শুধুমাত্র ৫৪ টি সন্দেহজনক র‍্যাবিস মৃত্যু ঘটেছে, সেই খবর সম্পূর্ণরূপে সত্য নয়। 

তাঁদের মতে, রাস্তায় বসবাসরত কুকুরদের স্থানান্তরের বদলে স্থানীয় ফিডার ও কেয়ারগিভারদের সঙ্গে কাজ করে এলাকায় এলাকায় সুরক্ষা নিশ্চিত করার উপর জোর দেওয়া উচিৎ। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে তাঁরা অমানবিক বলে বর্ণনা করেন।