আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তরপ্রদেশের মিরাঠের বাসিন্দা মহসীন। সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লির লালকেল্লার কাছে ভয়াবহ গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় তাঁর। মহসীন দিল্লিতে ই-রিকশা চালকের কাজ করতেন। স্ত্রী সুলতানা এবং দুই সন্তানকে নিয়ে দু'বছর আগে তিনি রাজধানীতে চলে এসেছিলেন। মৃত্যুর পরে মহসীনের দেহ তাঁর জন্মস্থান মিরাঠে ফিরিয়ে আনা হলে, তাঁর দাফনের স্থান নিয়ে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ শুরু হয়।

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, মহসীনের মৃতদেহ তাঁর বাড়িতে এসে পৌঁছতেই বাইরে জড়ো হয় বিশাল ভিড়। ঘটনাস্থলে শোকস্তব্ধ পরিবার এবং উপস্থিত সকলে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এরপর মৃতের শেষকৃত্যের প্রস্তুতি চলছিল। ঠিক সেই সময়ে বাড়িতে উপস্থিত মহসীনের স্ত্রী সুলতানা জোরালো দাবি জানান, স্বামীকে মিরাঠ নয়, দিল্লিতেই কবর দিতে হবে।

মহসীনের পরিবার সুলতানাকে বোঝানোর অনেক চেষ্টা করলেও, তিনি তা শুনতে নারাজ ছিলেন। স্বামীর মাকে পাল্টা যুক্তি দিয়ে তিনি নিজের দাবিতে অনড় থাকেন, শেষকৃত্য রাজধানীতেই হবে।

প্রতিবেশীরাও সুলতানাকে বোঝাতে চেষ্টা করেন যে মহসীন যেখানে বেড়ে উঠেছেন, সেই জন্মস্থানেই যেন তাঁর দাফন হয়। কিন্তু কোনও যুক্তিই মানতে রাজি হননি সুলতানা। তিনি অবশেষে তাঁর স্বামীর দেহ নিয়ে দিল্লির উদ্দেশে রওনা হন।

প্রসঙ্গত ভয়াবহ এই বিস্ফোরণের ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগেই পুলিশের হাতে আসে এক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। এক কাশ্মীরি চিকিৎসক, মুজাম্মিল শাকিলের ভাড়া নেওয়া দুটি ঘর থেকে পুলিশ প্রায় ২,৯০০ কেজি বিস্ফোরক এবং দাহ্য বস্তু উদ্ধার করেছে। তদন্তকারীরা প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন, বিস্ফোরণে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট। খবর অনুযায়ী, এই বিস্ফোরকটিই ফরিদাবাদে পাওয়া গিয়েছিল।

দিল্লি পুলিশের সূত্রকে উদ্ধৃত করে একাধিক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে যে গাড়িটি সোমবার ভোরে দিল্লিতে প্রবেশ করে। অনেকক্ষণ নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর পর সুনেহরি মসজিদের কাছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার্ক করে রাখা হয়। সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর এটি চাঁদনি চকে চলে যায়। এরপরেই মেট্রো স্টেশনের কাছে এটি বিস্ফোরিত হয়।

দিল্লি পুলিশের মতে, ১০ নভেম্বর সকাল ৮টা ৪ মিনিটে ফরিদাবাদের বদরপুর টোল বুথ দিয়ে গাড়িটি রাজধানীতে প্রবেশ করে। এরপর সকাল ৮টা ২০ মিনিটে ওখলা শিল্পাঞ্চলের কাছে একটি পেট্রল পাম্পে গাড়িটিকে দেখা যায়। সিসিটিভি ফুটেজে গাড়িটিকে ওই পেট্রল পাম্পে জ্বালানি ভরতে দেখা যায়। গাড়িটি দরিয়াগঞ্জ, কাশ্মীর গেট এবং সুনেহরি মসজিদ এলাকায় ঘোরাফেরা করে। দুপুর ৩টে ১৯ মিনিট নাগাদ লালকেল্লার সামনে সুনেহরি মসজিদ এলাকায় গাড়িটিকে পার্ক করা হয়। সন্ধ্যা ৬টা ২২ মিনিটে গাড়িটিকে পার্কিং থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। এর কিছু পরেই গাড়িটি চাঁদনি চক দিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে। লালকেল্লার কাছে একটি ইউ-টার্ন নিয়ে লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের ১ নম্বর গেটের কাছে সুভাষ মার্গে থামতে দেখা গিয়েছে। সেখানে সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে বিস্ফোরণ হয়। পুলিশের ধারণা, সুনেহরি মসজিদের কাছে গাড়িটি দীর্ঘক্ষণ থাকার সময়, হামলাকারী হয়তো এলাকায় রেকি করেছিল।

পুলিশ জানিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজে কালো মুখোশ পরা এক ব্যক্তি গাড়িটি চালাতে দেখা গিয়েছে। অন্যান্য ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তদন্তকারীরা পরীক্ষা করছেন মুখোশধারী ব্যক্তিটি ফরিদাবাদে পলাতক ডা. উমর মহম্মদের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ কি না। তদন্তকারীরা এখন চালকের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য সিসিটিভি রেকর্ডিং থেকে বিভিন্ন দিক সাবধানতার সঙ্গে পর্যালোচনা করছেন। ফুটেজে যে ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে এবং অভিযানের সময় আটক ব্যক্তিদের মধ্যে কোনও যোগসূত্র আছে কিনা তা নির্ধারণের চেষ্টা চলছে। দিল্লি পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, ফুটেজ এবং স্থানীয় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কমপক্ষে ১৩ জন সন্দেহভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন যে তদন্ত সকল দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তকারী দলগুলি বিস্ফোরণের আশেপাশের পরিস্থিতি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা করছে। শীর্ষ নিরাপত্তা কর্তাদের সঙ্গে ঘটনার বিশদ বিশ্লেষণ করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

তদন্ত রাজধানী ছাড়িয়েও বিস্তৃত হয়েছে, জম্মু ও কাশ্মীরের পুলিশ রাতভর বেশ কয়েকটি অভিযান চালিয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত জঙ্গি মডিউলের তালিকায় নাম আসার পর শোপিয়ানের কর্তৃপক্ষ নদীগামের ইমরান ওরফে মৌলভির বাসভবনে নজর রেখেছে। পুলওয়ামায় তদন্তকারীরা অবসরপ্রাপ্ত পাটোয়ারি গুলাম মহম্মদ দারের ছেলে ৩৮ বছর বয়সী তারিক আহমেদ দার এবং খারপোরা সাম্বুরা থেকে একজন টিপার চালককে আটক করেছেন।