আজকাল ওয়েবডেস্ক: ছিলেন চিকিৎসক। কিন্তু, শেষপর্যন্ত হয়ে গেলেন সন্ত্রাসবাদী। দিল্লি গাড়ি বোমা বিস্ফোরণ কাণ্ডে জড়িত জম্মু-কাশ্মীরের চিকিৎসকদের চক্রটিকে তদন্তকারী সংস্থাগুলি 'হোয়াইট কলার মডিউল' নামে অবিহিত করেছে। চরমপন্থায় জড়িয়ে পড়ার পর তাদের মেডিক্যাল লাইসেন্স বাতিল করা হয়। কীভাবে চিকিৎসক থেকে কট্টরপন্থার আদর্শে নিজেদের উদবুদ্ধ করেছিলেন হন চার চিকিৎসক? তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন যে, মৌলবি ইরফান আহমেদের সংস্পর্শে আসার পরই এরা মৌলবাদী হয়ে ওঠেন। ইরফান জম্মু ও কাশ্মীরের শোপিয়ানের বাসিন্দা।
সূত্রের খবর, মৌলবী ইরফান আহমেদের সঙ্গে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের সম্পর্ক রয়েছে। ফরিদাবাদের আল-ফালাহ হাসপাতালে কর্মরত প্রাক্তন চিকিৎসক মুজাম্মিল শাকিলের সঙ্গে ইরফান আহমেদের প্রথম সাক্ষাতের পরই ওই হাসপাতালই সন্ত্রাসবাদী চক্রের মূল ঘাঁটিতে পরিণত হয়।
ফরিদাবাদের শাকিলের দখলে থাকা দু'টি ভাড়া করা ঘর থেকে পুলিশ ২,৯৫০ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার করে। এর মধ্যে ছিল গাড়ি বোমায় ব্যবহৃত অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটও। উমর-উন-নবি, ওরফে উমর মহম্মদ, দিল্লির মধ্য দিয়ে হুন্ডাই আই১০ গাড়ি চালিয়ে লাল কেল্লার বাইরে বিস্ফোরণ ঘটানোর কয়েক ঘন্টা আগেই এই বাজেয়াপ্ত করার ঘটনা ঘটেছিল।
২০২৩ সালে শ্রীনগরের সরকারি মেডিকেল কলেজে ইরফানের সঙ্গে আহমেদ শাকিল এবং নবির প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল। যদিও ওই রোগীর পরিচয় বা এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তাঁর যোগ রয়েছে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। তখনই তারা ফোন নম্বর বিনিময় করেছিলেন। এরপর দু'বছর ধরে তাদের মধ্যে ফোনে কথা হয় এবার নানা বার্তা বিনিময় চলে। পরে আহমেদ শাকিল এবং নবি উভয়কেই মৌলবী ইরফান মৌলবাদী আদর্শে উদবুদ্ধ করেন। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি ভিডিওতে নবিকে আত্মঘাতী দিল্লি বিস্ফোরণ প্রসঙ্গে শান্ত গলায় বলতে শোনা যায়, সেটি "ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা ধারণা।"
সূত্র সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছে যে, শাকিল এবং নবি ইরফান আহমেদের সঙ্গে অন্যান্য সহকর্মীদেরও পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। তারাও ক্রমশ চরমপন্থী মতাদর্শ এবং উপাদান ব্যবহার করেছিলেন। মৌলবাদী মন্ত্রে দিক্ষিত করতে তাদের মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামের একটি চ্যানেলের মাধ্যমে সবকিছু শেয়ার করা হয়েছিল। আহমেদ দক্ষিণ কাশ্মীরে জইশ সন্ত্রাসীদের সঙ্গেও বৈঠকের ব্যবস্থা করেছিলেন।
লাল কেল্লার গাড়ি বিস্ফোরণ পরিকল্পনার ক্ষেত্রে ইরফানের সঙ্গে (প্রাক্তন) চিকিৎসকদের এই বৈঠকগুলি প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হবে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন যে, জইশ সন্ত্রাসবাদীরা 'সন্ত্রাসবাদী চিকিৎসকদের' দু'টি অ্যাসল্ট রাইফেল সরবরাহ করেছিল।
'ম্যাডাম সার্জন' নামে পরিচিত আরেক 'জঙ্গি ডাক্তার' শাহিনা সাইদের মারুতি সুজুকি সুইফট ডিজায়ারে একটি রাইফেল পাওয়া গিয়েছে। তদন্তকারীদের অনুমান, শাহিনা জইশ-ই-মহম্মদের মহিলা শাখা - জমিয়ত উলামা-ই-হিন্দ - এর একজন সিনিয়র নেত্রী, যা অপারেশন সিঁদুরের পরে জেইএম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
দ্বিতীয়টি শ্রীনগরের জিএমসি থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল, আরেকজন চিকিৎসক এবং এই জঙ্গি সেলের সদস্য - আদিল আহমেদ রাথেরের লকার থেকে। রাথেরের কার্যকলাপ - জম্মু ও কাশ্মীরের নওগামে জৈশকে সমর্থনকারী পোস্টার লাগানোর সিসিটিভিতে ধরা পড়েছিল - যা পুলিশকে সেলটি ভাঙতে সাহায্য করেছিল।
উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর থেকে রাথেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদে ষড়যন্ত্রের বিষয়টি প্রকাশ পায়। যার ফলে শাকিলকে গ্রেপ্তার করা হয়, বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয় এবং সাঈদের শনাক্ত করা হয়। তবে দুর্ভাগ্যবশত, পুলিশ বিস্ফোরণ রুখতে পারেনি।
এই সন্ত্রাসী সেলটি ধ্বংস করার পুরো অভিযান আরেকটি উদ্বেগজনক বিষয় প্রকাশ করেছে - জেইএমের মতো সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলি উচ্চ শিক্ষিত পেশাদারদের, যেমন এই ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের, মৌলবাদী করে তুলছে। জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ নিশ্চিত করেছে যে, তাদের তদন্তে "হোয়াইট-কলার সন্ত্রাসবাদী মডিউল" প্রকাশ পেয়েছে।
তদন্তে এই সেলের 'প্রধান' সদস্য বলে মনে করা হয় এমন ১০ জনের একটি তালিকাও প্রকাশ পেয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে উমর-বিন-খাত্তাব, ওরফে হানজুল্লা, একজন পাকিস্তান-ভিত্তিক অপারেটিভ যার সঙ্গে ইরফান আহমেদ যোগাযোগ ছিল।
