আজকাল ওয়েবডেস্ক: জালিয়াতি ও অর্থপাচার অভিযোগের প্রেক্ষিতে আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা এবং আল-ফালাহ গ্রুপের চেয়ারম্যান জাওয়াদ আহমেদ সিদ্দিকিকে গ্রেফতার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। মঙ্গলবার তাঁকে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০০২-এর ধারা ১৯ অনুযায়ী আটক করা হয়। ইডি কর্মকর্তারা জানান, আল-ফালাহ গ্রুপের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশির সময় যে বিপুল নথি ও উপকরণ উদ্ধার হয়, তার বিস্তারিত বিশ্লেষণের ভিত্তিতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।


ইডির দল সিদ্দিকিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তাঁর বাসভবনে তল্লাশি করে। তদন্তের ভিত্তি ছিল দিল্লি পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের দায়ের করা দুটি এফআইআর। সেগুলোতে অভিযোগ ছিল— আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয় ভুলভাবে দাবি করছিল যে তাদের এনএএসি স্বীকৃতি রয়েছে এবং সেই ভুয়ো দাবি ব্যবহার করে শিক্ষার্থী ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছিল, যা থেকে সংগঠনটি আর্থিক সুবিধা নিচ্ছিল।


এফআইআরে আরও অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়টি ইউজিসি অ্যাক্টের ১২(বি) ধারার অধীনে স্বীকৃত বলে দাবি করেছিল, যদিও বাস্তবে তারা শুধুমাত্র ২(এফ) ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। ইউজিসি পরে স্পষ্ট জানায়, আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয় কখনও ১২(বি) মর্যাদার জন্য আবেদনই করেনি এবং এই মর্যাদা না থাকায় তারা কোনও কেন্দ্রীয় অনুদানের যোগ্যও নয়।


ইডি সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত আল-ফালাহ চ্যারিটেবল ট্রাস্ট— যার প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা ট্রাস্টি সিদ্দিকি— আল-ফালাহ গ্রুপের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালিক ও আর্থিক অভিভাবক। নব্বইয়ের দশক থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিস্তার বিস্ময়করভাবে বেড়ে গেলেও তদন্তকারীদের দাবি, সেই বৃদ্ধির সঙ্গে আর্থিক বিবরণীর কোনও সামঞ্জস্য নেই।


বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তাদের আবাসস্থলে চালানো তল্লাশিতে কোটি টাকার সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ মেলে। তদন্তকারীরা বলেন, ট্রাস্টের তহবিল বিভিন্ন পরিবারের মালিকানাধীন সংস্থায় পাচার করা হয়েছে। নির্মাণ, খাবার সরবরাহসহ নানা পরিষেবার চুক্তি দেওয়া হয়েছিল সিদ্দিকির স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গে যুক্ত কোম্পানিকে।


ইডি তাদের অভিযানে প্রায় ৪৮ লক্ষ টাকা নগদ, একাধিক ডিজিটাল ডিভাইস এবং বিপুল নথি জব্দ করেছে। পাশাপাশি আল-ফালাহ গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত একাধিক শেল কোম্পানি এবং অন্যান্য আইনভঙ্গের বহু প্রমাণও হাতে পেয়েছে।


তদন্তে উদ্ধার হওয়া প্রমাণ স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে— সিদ্দিকির প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে ছিল ট্রাস্টের আর্থিক ব্যবস্থাপনা, এবং সেখান থেকেই ঘটেছে ফান্ড ডাইভারশন, লেয়রিং ও বেআইনি ব্যবহারের চক্রবৃদ্ধি।


অর্থপাচারের তদন্তের পাশাপাশি ইডি খতিয়ে দেখছে, পাচার হওয়া অর্থের কোনও অংশ ১০ নভেম্বরের লালকেল্লা বিস্ফোরণের সঙ্গে যুক্ত কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে পৌঁছেছিল কি না। ওই ঘটনার জেরে ১৪ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। এই তদন্ত এখন চলছে।


সবকিছু বিবেচনা করে এবং অপরাধ থেকে অর্জিত অর্থের উৎপত্তি, লেনদেন ও ব্যবহারের প্রমাণ হাতে পাওয়ার পর ইডি ১৮ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে জাওয়াদ আহমেদ সিদ্দিকিকে গ্রেফতার করে। তাঁদের দাবি, সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া মেনেই এই গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত ভবিষ্যতেও চলবে এবং আরও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।